অ চলায়তন ভাঙিবার ডাক দিয়াছেন সমাজবাদী পার্টির মুখ্য মুখ, মুলায়ম সিংহ যাদব। সংসদ চালু করিবার সেই ডাক শুনিয়া তৃণমূল কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জনতা দল (ইউনাইটেড), আম আদমি পার্টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির মধ্যেই উৎসাহের সাড়া। কংগ্রেসের কথা অবশ্যই আলাদা, তাহার বা তাহার সভানেত্রীর কোনও হেলদোল নাই। তাঁহাদের কড়া অবস্থান, সংসদের উচ্চ নিম্ন দুই কক্ষই শূন্য থাকিবে, বিজেপি সরকারের দৌড় দেখা যাক। তবে কিনা, যাহার যেমন প্রতিক্রিয়াই হউক, মুলায়মের ভাবটি রীতিমতো বৈপ্লবিক। যদি আর কেহ না-ই আসে, তবু তিনি একলাই চলিবেন: ভাবটি এমন। আসল কথা, আজীবন ধুরন্ধর রাজনীতিক বুঝিয়া গিয়াছেন জাতীয় রাজনীতির নাড়িটি কী বলিতেছে। দিনের পর দিন এ ভাবে সংসদ বন্ধ করিয়া সংসদ চত্বরে খোলা আকাশের নীচে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলিয়া লড়াকু স্লোগানের গর্জনে দিন কাটিবে না। দেশের লোকে যে এই অন্তহীন কুনাট্য দেখিয়া বেদম চটিতেছেন, সংসদীয় রাজনীতির হাল লইয়া গোটা দেশ জুড়িয়া প্রশ্ন উঠিতেছে, রসিকতা কাটিতেছে, কুৎসা ঘনাইতেছে। সনিয়া গাঁধী তাহাতে থোড়াই কেয়ার করিতে পারেন, কিন্তু মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো পোড়-খাওয়া রাজনীতিক বেশ বুঝিতেছেন— কিছু একটা করা দরকার, দ্রুত। তাই এক ঢিল মারিয়া একাধিক পাখির গায়ে লাগাইবার চেষ্টা। ইহাতে কংগ্রেসি স্বেচ্ছাচারিতার রাজনীতির বিরোধিতাও হইবে, দায়িত্বশীল সংসদীয় নেতা রূপেও প্রতিভাত হওয়া যাইবে, বিজেপি-কংগ্রেস দ়ড়ি-টানাটানি হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া একটি তৃতীয় ধারার রাজনীতির ইশারা দেওয়া যাইবে। তাঁহার পরিষ্কার বক্তব্য: যাহা কিছু আপত্তিকর, সংসদেই সে সব আলোচিত হউক, দ্বার বন্ধ করিয়া গোঁসা দেখাইবার অর্থ কী!
সমালোচকরা ইতিমধ্যেই বলিতেছেন, এই দাবি তুলিবার পিছনে মুলায়মের স্বার্থ কী কী ও কত প্রকার। ঠিকই বলিতেছেন। স্বার্থবোধ ছাড়া মুলায়ম সিংহরা একটি পা-ও তুলেন না। তবে কি না, রাজনীতি যেহেতু স্বার্থেরই খেলা, এই লইয়া আপত্তি তোলা কেবল সময় নষ্ট। বরং বৃহত্তর প্রসঙ্গটি ভাবা দরকার। এই মুহূর্তে দুইটি পথে সরকারের বিরোধিতা সম্ভব। এক, এই দাবি তোলা যে, সুষমা স্বরাজকে পদত্যাগ করিতেই হইবে, নতুবা একটি কথাও নয়, সংসদে পা দেওয়া নয়। অথবা, দুই, সুষমা স্বরাজকে কেন মন্ত্রিসভা হইতে বরখাস্ত করা উচিত, সংসদের তর্কবিতর্কে তাহা চোখে আঙুল দিয়া দেখানো। দুইটি পথই বিরোধিতার পথ। দুইটি পথই প্রতিবাদের পথ। কোন পথটি বাঞ্ছনীয়, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে মঙ্গলজনক, তাহা কেবল সাংসদরা ভাবিলে চলিবে না। যাঁহাদের ভোটে রাজনীতিকরা সাংসদ হইবার সুযোগ অর্জন করেন, সেই নাগরিকদেরও ভাবা দরকার।
বাস্তবিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে স্বার্থ যে কত গুরুতর বিষয়, মুলায়ম সিংহ যাদব তাহা আবার প্রমাণ করিলেন। জনসমাজের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন স্বার্থ, বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিতে তাহা প্রতিফলিত হয়। এক রাজনীতির সহিত অন্য রাজনীতির সংঘর্ষ বাধিতে থাকে। সেই সংঘর্ষ যেমন সমস্যা তৈরি করে, তেমনই আবার সমস্যার সমাধানও তৈরি করে। এই যেমন বর্তমান পরিস্থিতিতে, কংগ্রেস রাজনীতির স্বার্থ অচলাবস্থা তৈরি করিতেছে, আবার উত্তরপ্রদেশ, বিহার কিংবা পশ্চিমবঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থ বলিতেছে, অচলাবস্থা কাটুক, তাহাতে তাহাদের রাজনৈতিক প্রস্তাবগুলি লইয়া দরদস্তুরের সুযোগ ঘটিবে। এইখানেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির আশা। ইগো-র পাহাড় কাটিয়া আলোচনার প্রবাহ বহাইবার সম্ভাবনা। তবে, সম্ভাবনার দোলাচল কাটাইয়া সংসদের বর্ষা অধিবেশন প্রায় শেষের মুখে পৌঁছাইল। এ বার বোধহয় আর প্রবাহটি বহিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy