ছবি: এএফপি।
যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করিলেন, অতঃপর তাঁহার রাজ্যের কোনও শ্রমিককে ভিন্ রাজ্যে নিয়োগ করিতে হইলে পূর্বে রাজ্য সরকারের অনুমতি লইতে হইবে। অনুমতির শর্ত, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা, বিমা প্রভৃতি সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধার দায়গ্রহণ। তাঁহার এই ফতোয়াটি স্পষ্টতই সংবিধান-বিরোধী। যে কোনও জায়গায় যাইবার অধিকার, দেশের যে কোনও স্থানে বসবাসের অধিকার এবং কাজ করিবার অধিকার সংবিধান সকল নাগরিককে দিয়াছে। তাহা প্রত্যেক ভারতীয়ের মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র তাহাতে হস্তক্ষেপ করিতে পারে না। কোনও শর্ত আরোপ করিতেও পারে না, অনুমতি লইবার বাধ্যবাধকতাও সৃষ্টি করিতে পারে না। একবিংশ শতাব্দীর একটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যে ফের কংগ্রেস আমলের ‘লাইসেন্স-পারমিট রাজ’ ফিরাইবার আগ্রহ কেন? আদিত্যনাথ বলিয়াছেন, ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকরা যাহাতে বিপন্ন হইয়া না পড়েন, তাহার জন্যই এই ব্যবস্থা। শ্রমিকের রোজগারের পথ বন্ধ করিয়া তাহাকে সুরক্ষা প্রদান— মাথাব্যথার চিকিৎসায় মাথা কাটিবার নিদান দেওয়া যাহাকে বলে।
প্রশ্ন উঠিতে পারে, যেখানে রাজ্য সরকারগুলি আজ অবধি কয়েক শত ঠিকাদারকে নথিভুক্ত করিতে পারিল না, সেখানে সরকারি কর্তারা কয়েক লক্ষ শ্রমিককে নথিভুক্ত করিবেন, ভিন্ রাজ্যের আবেদন গ্রহণ করিবেন, নিয়োগের শর্তাবলি পালিত হইল কি না মিলাইয়া দেখিবেন এবং অবশেষে অনুমতিপত্র লিখিবেন, ইহা কি বিশ্বাসযোগ্য? ঘটনা হইল, যে বিপুল পরিমাণ পরিযায়ী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে উত্তরপ্রদেশে ফিরিয়াছেন, তাঁহাদের প্রত্যেকের কর্মসংস্থান রাজ্যে হওয়া অসম্ভব। এমনকি, যোগীর স্বপ্ন সফল করিয়া চিন হইতে কারখানা সটান উত্তরপ্রদেশে চলিয়া আসিলেও, অসম্ভব। শ্রমিকরা বাজারের নিয়ম মানিয়াই যেখানে কাজ আছে, সেখানে অপেক্ষাকৃত ভাল বেতন আছে, সেখানে যাইবেন। সরকার অনুমতি না দিলে, বিনা অনুমতিতেই যাইবেন। সেখানেই আদিত্যনাথের ফতোয়ার মূল বিপদ। এত দিন উত্তরপ্রদেশ হইতে যাঁহারা অপর রাজ্যে কাজ করিতে গিয়াছেন, তাঁহারা ছিলেন ‘শ্রমিক’। এই বার তাঁহাদের পরিচয় হইবে ‘অবৈধ শ্রমিক’। সরকার কেন তাঁহাদের দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিবে, অবরুদ্ধ হইলে পরিবহণ জুগাইবে, দুর্যোগে উদ্ধারের ব্যবস্থা করিবে? ভিন্ রাজ্যে যাঁহারা ‘অবৈধ’ ভাবে থাকিবেন, রাষ্ট্র তাঁহাদের অন্ন, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থাই বা করিবে কেন? একটি ঘোষণায় কয়েক কোটি মানুষকে অবৈধ করিয়া দেওয়া েগল।
আশঙ্কা হয়, গভীরতর নীতিটি হইল— যে অধিকার রক্ষায় সরকার ব্যর্থ, সেই অধিকারকে খারিজ করিয়া দিলেই ল্যাঠা চুকিয়া যায়। ছকটি পরিচিত। নাগরিকের প্রতিটি অধিকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলিয়া দায় এড়াইবার যে সর্বভারতীয় খেলা কেন্দ্রীয় স্তরে চলিতেছে, ইহা তাহারই আর এক আবর্তন। ভোটার কার্ডের পরে আধার কার্ড, আধার কার্ডের পরে নাগরিকপঞ্জি— ‘নাগরিক’ হইবার শর্ত বাড়িয়াই চলিতেছে। সেই ধারাতেই এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘অনুমোদিত শ্রমিক’ হইতে হইবে। ঝোঁকটি ভয়ানক। লোভনীয়ও বটে। আদিত্যনাথের পথে অন্য রাজ্যগুলিও হাঁটিতে আরম্ভ করিলে আশ্চর্য হইবার কারণ থাকিবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy