Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
World Bicycle Day

মুশকিল আসান

এই করোনার কালেও দেশের সাইকেলবান্ধব শহরের তালিকার উপরের দিকে কলিকাতা ঠাঁই পাইবে না।

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০০:৩৮
Share: Save:

গত ৩ জুন ছিল ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’। তৃতীয় বৎসর হইলেও এই বারের এই দিবসের তাৎপর্যটি অনেকটা ভিন্ন। প্রায় বিনা খরচে গন্তব্যে পৌঁছানো, নিজেকে সুস্থ রাখা, পরিবেশ দূষণ হ্রাস, নানা রোগের প্রকোপ কমানো— পরিবেশবান্ধব যানটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপুঞ্জ উল্লিখিত এই সকল সুবিধা অধিকাংশ মানুষই অগ্রাহ্য করিতেন। হয় ভাবিতেন তত্ত্বকথা, নতুবা অবান্তর বলিয়া উড়াইতেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তজ্জনিত বিপদ বুঝিয়াই হয়তো কথাগুলি বহু মানুষের মর্ম স্পর্শ করিল। তাঁহারা বুঝিলেন, ছোঁয়াচ এড়াইতে এবং পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যুগপৎ পালন করিতে এই যানটি কতখানি কার্যকরী। পরিবেশ রক্ষায় এক দিকে ব্যক্তিগত যানের বদলে গণপরিবহণের ব্যবহার, অপর দিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখিতে গণপরিবহণ এড়াইয়া চলিবার নিদান— এই স্ববিরোধে মুশকিল আসান সাইকেল। সম্ভবত তাহা অনুধাবন করিয়াই বহু কলিকাতাবাসী ইহাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়াছেন। সাইকেল দিবস উদ্‌যাপনে রাজপথে সাইকেল-আরোহীর সংখ্যা দেখিয়া আন্দোলনকারীদেরই নাকি তাক লাগিয়া গিয়াছে।

তবে তাঁহারা দাবি জানাইতে পারেন, জনতা গুরুত্বসহকারে বিবেচনাও করিতে পারে, কিন্তু প্রশাসন সক্রিয় না হইলে শেষাবধি লাভ হয় না। এই করোনার কালেও দেশের সাইকেলবান্ধব শহরের তালিকার উপরের দিকে কলিকাতা ঠাঁই পাইবে না। ২০০৮ সালে শহরের আটত্রিশটি রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ হয়। পরে তাহা বৃদ্ধি পাইয়া হয় সত্তর। অনুমতিবিহীন রাস্তায় সাইকেল চালাইবার জরিমানা ১০০ টাকা, যানটিও বাজেয়াপ্ত হয়। সাইকেলের বিপক্ষে প্রশাসনের যুক্তি, বড় রাস্তায় সাইকেল চালাইবার অনুমতি থাকিলে দুর্ঘটনা ঘটিবে এবং অপরাপর যানের গতি রুদ্ধ হইবে। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব যে বিকল্পে ভরসা রাখিতেছে, তাহাকে কি যান চলাচলের সনাতন যুক্তিতে ঠেকাইয়া রাখা সঙ্গত? বিশেষত এই অভূতপূর্ব অতিমারির পরিস্থিতিতে? জনসাধারণের নিকট সাইকেলের বিকল্প ভিড়ে ঠাসা গণপরিবহণ, সংক্রমণের কালে যাহা কোনও ভাবেই কাম্য নহে। তদ্ব্যতীত, সাইকেল বন্ধ করিতে পশ্চিমবঙ্গে মোটরযান আইনের ধারাকে ভ্রান্ত ভাবে ব্যবহার করিবার অভিযোগটিও দীর্ঘ দিনের। সাইকেলের জনপ্রিয়তার আবহে এই ভ্রম সংশোধনের সুযোগ আসিয়াছে।

এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর টুইট ভরসা জোগায়। বিশ্ব সাইকেল দিবসে তিনি ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাফল্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছেন। আশা জাগাইয়াছে নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং হিডকো-র উদ্যোগও। ইতিপূর্বেই নিউটাউনে যে ২৯ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেলের জন্য বরাদ্দ ছিল, তাহা বাড়াইবার পরিকল্পনা চলিতেছে। কুড়িটি স্ট্যান্ড বানাইয়া ‘সাইকেল শেয়ারিং’ ব্যবস্থার কথাও ঘোষিত হইয়াছে। এই উদাহরণ হইতে যদি মহানগরের পুলিশ ও প্রশাসনের বোধোদয় ঘটে, তাহা হইলে পরিবেশ রক্ষা পাইবে, সংক্রমণের আশঙ্কা কমিবে, জনতার পকেটও বাঁচিবে। শহরের মোট ১৭৫০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশেই বাস চলে না। সেই সকল রাস্তায়— বিশেষত যেগুলি একমুখী— ‘সাইকেল লেন’ নির্মাণ সম্ভব। অতএব, নগর ও নাগরিকের মঙ্গলার্থে সাইকেল ঠেকাইবার পরিবর্তে তাহার উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত হউক। শুভস্য শীঘ্রম।

অন্য বিষয়গুলি:

World Bicycle Day Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy