Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Hindutva

‘না’ বলিবার অধিকার

রাষ্ট্র ও সমাজের পৃথক চারিত্রবৈশিষ্ট্য এত কাল নাগরিকের পক্ষে ছিল।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

সমর্থন মিলিয়াছে খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্টের। মিলা নামক এক ষোড়শী ইনস্টাগ্রামে লিখিয়াছিল, সে সমকামী। উত্তরে এক মুসলমান নাগরিক তাহাকে যারপরনাই কটূক্তি করিলে মিলা প্রত্যুত্তরে ইসলামবিরোধী সমালোচনা ও কটূক্তি করে। পরিণতিস্বরূপ সমাজমাধ্যমে ধাইয়া আসে হত্যার হুমকি, বহু মানুষ তাহার স্কুলের ঠিকানা-সহ অন্য ব্যক্তিগত তথ্য ছড়াইয়া দেয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ফ্রান্সে বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তাঁহাদের সমর্থনও রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য প্রয়োজনীয়। তথাপি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ঘোষণা করিয়াছেন, ধর্মনিন্দা ফ্রান্সের আইনানুসারে অপরাধ নহে। বরং নাগরিক মাত্রেরই ধর্মকে সমালোচনা করিবার, ঈশ্বর বা ধর্মীয় বিষয়ে হাসিঠাট্টা এমনকি নিন্দা করিবারও অধিকার রহিয়াছে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আইন তাহা নিশ্চিত করে। ঘৃণার প্রসার, নাগরিকের মর্যাদার উপর আক্রমণ বরং আইন-বহির্ভূত। প্রেসিডেন্ট স্বয়ং হস্তক্ষেপ করিয়া মিলার নূতন স্কুলের ব্যবস্থা করিয়াছেন, সে এখনও নাবালিকা বলিয়াই ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য পরিসরে তাহার নিরাপত্তা অধিকতর সুনিশ্চিত করার কথা বলিয়াছেন। স্পষ্ট বলিয়াছেন, ইহাই রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কাল ও পাত্র একই রাখিয়া কেবল স্থানটি ফ্রান্সের পরিবর্তে ভারত করিয়া দিলে, এবং শিরোনামে থাকা ধর্মটিকে এই রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরুর ধর্ম করিয়া দিলে, পরিস্থিতি একই হইত কি? রাষ্ট্রপ্রধানের বিবৃতিতে সহানুভূতির সুরটি বাজিত কি? মনে হয় না। বরং চরাচর ঢাকিয়া দিত উগ্র ও আগ্রাসী যুদ্ধপ্রিয়তা, কারণ আক্রমণের লক্ষ্য সেই ক্ষেত্রে হইত সংখ্যালঘুর ধর্ম। রামচন্দ্র হইতে শুরু করিয়া গোমাতাকে লইয়া এই দেশে বর্তমানে যাহা চলিতেছে, তাহার বিরুদ্ধতা তো দূরস্থান, সামান্য রগড় করিতেও নাগরিকেরা ভয় পান, পাছে ধর্মবিদ্বেষী তথা দেশদ্রোহীর তকমা আঁটিয়া যায়। কয়েক বৎসর পূর্বে ফ্রান্সে ইসলাম লইয়া কার্টুন প্রকাশের জেরে সাপ্তাহিক ব্যঙ্গপত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র দফতরে জঙ্গি হানার কথা মনে পড়িতে পারে। ভারতের বহু নাগরিক তখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে ‘আমিই শার্লি’ লিখিয়া সহমর্মিতা জানাইয়াছিলেন। নিজ দেশে এই মুহূর্তে তাঁহারা গলা খুলিতে পারিবেন কি না সন্দেহ। আজিকার ভারত দেখিতেছে ধর্মকে হাতিয়ার করিয়া কদর্য তাণ্ডব। কটূক্তি ও হুমকি এখানে সমাজমাধ্যমেই আবদ্ধ নহে, গৃহদ্বারে আসিয়া উপস্থিত।

রাষ্ট্র ও সমাজের পৃথক চারিত্রবৈশিষ্ট্য এত কাল নাগরিকের পক্ষে ছিল। নাগরিকের ভরসা ছিল, রাষ্ট্র কোনও কারণে ধর্মধ্বজী হইয়া উঠিলেও সহিষ্ণু ও শুভবোধসম্পন্ন সমাজ তাঁহার সহায় হইবে। কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজ যখন ধর্মের প্রশ্নে সমান খড়্গহস্ত হইয়া উঠে, তখন নাগরিক কোথায় গিয়া দাঁড়াইবেন? নাস্তিক হওয়া মানেই যে ধর্মবিদ্বেষী হওয়া নহে, তাহা এই ভারতকে কে বুঝাইবে? বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্প্রতি বলিয়াছেন নাস্তিকের স্বাধীনতার কথা। সংবিধান যদি সকল ধর্মমতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, তাহার ব্যাপকতর অর্থ বিশেষ কোনও ধর্মমত না মানিবারও স্বাধীনতা। রসিকতা ও সমালোচনা সেই না মানিবার স্বাধীনতারই অঙ্গ। তাহার সীমানা নির্ধারণ করিয়া দিতেই রাষ্ট্রে আইন রহিয়াছে। কিন্তু আইন হাতে তুলিয়া লইবার আইন নাই, মনে রাখিলে রাষ্ট্র ও নাগরিক উভয়েরই মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

Hindutva Muslim BJP France Emmanuel Macron
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy