প্রতীকী ছবি।
বর্ষবরণ বা ফিল্মোৎসব— সবই চলিতেছে। উৎসবের মরসুমে যত্রতত্র ভিড়, কোভিড-বিধি রক্ষার তাগিদও দৃশ্যমান নহে। রাজনৈতিক কার্যক্রমেও কমতি নাই। বিধানসভা নির্বাচন যে শিয়রে, তাহা নানা দলের চাপানউতোরে বেশ বুঝা যাইতেছে। সবই যখন চালু, তখন কেবলমাত্র রাজ্যের বিধানসভা অধিবেশন বন্ধ করিয়া রাখা সঙ্গত ছিল না। বর্ষশেষের দিন মুখ্যমন্ত্রীকে পত্র মারফত অধিবেশন ডাকিবার অনুরোধ জানাইয়াছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিগত তিন মাসে পাঠানো এই চতুর্থ চিঠিটিতে দাবি করা হইয়াছিল, কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জন্য অধিবেশন ডাকা হউক। ইহার সহিত রাজ্যে যে রূপ দলবদলের ঘনঘটা দেখা যাইতেছে, সেই প্রসঙ্গও কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট কর্তৃক উত্থাপিত হইয়াছিল। শেষাবধি সাড়া মিলিল, কৃষি বিলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করাইতে অধিবেশন ডাকিবার কথা ঘোষণা করিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তর্ক-বিতর্কের ফলে বিলম্বে হইলেও যথাযথ পদক্ষেপ করিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ইহা শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে সুসংবাদ।
করোনা-আবহে কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন লইয়া বিতর্ক অবশ্য নূতন নহে। বিগত সেপ্টেম্বর মাসে বাদল অধিবেশন প্রাথমিক ভাবে তিন দিন অনুষ্ঠিত হইবার কথা থাকিলেও এক দিনেই শেষ করিয়া দেয় রাজ্য সরকার। তৎকালে বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধ করিবার অভিযোগ তুলিয়াছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেই পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষানীতি লইয়া তাঁহার প্রস্তাবিত আলোচনা বাতিল করিয়াছিল সরকার। অভিযোগ আরও বিস্তর, তবু অতিমারির ভিতর কোনও রূপ ঝুঁকি লইতে রাজি হয় নাই রাজ্য সরকার। অতিমারির কালে নানা রাজ্যেই বিধানসভা অধিবেশনের দিনসংখ্যা কম হইয়াছে, এবং সর্বাপেক্ষা বড় কথা, রাজধানীতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনটিই বাতিল হইয়াছে। এমতাবস্থায় সংক্রমণের হার নিম্নমুখী, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিবেশন ডাকিবার কথা জানাইয়াছে, ইহা বিশেষ আশ্বাসদায়ী। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, কোভিড-পূর্ব সময়ে বিধানসভার অধিবেশন আয়োজন করা লইয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা তেমন কোনও গুরুতর অভিযোগ করেন নাই।
কথাটি এই মুহূর্তে আলাদা করিয়া উল্লেখ দাবি করে এই জন্য যে, বিধানসভা যাহা পারিল, লোকসভা কিন্তু পারে নাই। কৃষি বিল লইয়া রাজধানীতে লাগাতার প্রতিবাদ এবং বিরোধী দলের পত্র প্রেরণের পরিপ্রেক্ষিতেও শীতকালীন অধিবেশন সটান বাতিল হইয়াছে। বাস্তবিক, তথ্যপ্রমাণ বলিতেছে, ইহা কেবল কোভিডকালীন নহে, গত কয়েক বৎসরে সংসদে বৈঠক চালু থাকিবার দিনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিতেছে। ইহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। প্রতিনিধিসভাকে এড়াইবার এহেন কৌশল গণতন্ত্রের পক্ষে হানিকারক। জনতা যে সভায় প্রতিনিধি নির্বাচন করিয়া প্রেরণ করে, গণতন্ত্রের সেই স্তম্ভটির ক্রিয়াকলাপ স্থগিত করিবার অর্থ, জরুরি রাষ্ট্রীয় কর্তব্যে অবহেলা। সংবাদে প্রকাশ, আগামী ২৯ জানুয়ারি সংসদের বাজেট অধিবেশন বসিতে পারে। আশা থাকিল, কোনও অজুহাতে এই অধিবেশন স্থগিত কিংবা বাতিল হইবে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশ কাটাইয়া দেশ পরিচালনা করিবার বিপজ্জনক প্রবণতাটি বন্ধ হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy