Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

তথ্য কাহার

বিবিধ তথ্যের সংযুক্তি কত জরুরি, তাহা বুঝাইতে কুড়ি পাতার একটি অধ্যায় রহিয়াছে সমীক্ষায়। শিরোনাম, ‘জনগণের তথ্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য।’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

তেল নহে, তথ্যই আজ সর্বাপেক্ষা মূল্যবান। অতএব কে, কী শর্তে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করিতে পারে, তাহা লইয়া বিস্তর জলঘোলা হইতেছে। এ বৎসর অর্থনৈতিক সমীক্ষা তাহাতে আরও একটু ঘূর্ণি জাগাইল। তাহার প্রস্তাব, নাগরিক সম্পর্কিত সকল তথ্যের একটিই কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার (ডেটা বেস) তৈরি হইবে। যেমন তেলঙ্গানা সরকারের ‘সমগ্র বেদিকা’। যে কোনও ব্যক্তির নাম-ঠিকানা জানিলে তাহার সম্পত্তি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ-গ্যাস প্রভৃতি ব্যবহার, করদান, প্রাপ্ত ভর্তুকি, অপরাধ, সকলই মিলিবে এই তথ্যভাণ্ডার হইতে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রণেতারা ইহার সহিত আধার কার্ড, মোবাইল, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি তথ্য সংযুক্ত করিবারও প্রস্তাব দিয়াছেন। বলিয়াছেন, চিন্তার কারণ নাই। তথ্য বিকৃত হইবে না, গোপনীয়তা বজায় থাকিবে। নাগরিক চাহিলে আর্থিক লেনদেন-সহ আরও কয়েক প্রকার তথ্য সরকারের নিকট প্রকাশ না-ও করিতে পারেন। ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহারের উপরে নাগরিকের নিয়ন্ত্রণ থাকিবে, এমন আশ্বাসও মিলিয়াছে। তাহাতে নাগরিক কতটা নিশ্চিন্ত হইলেন? তাঁহার অভিজ্ঞতা, ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন হইতে বিবিধ আর্থিক সংস্থা অবাধে তথ্য ব্যবহার করিয়া বিপণন চালাইতেছে। নাগরিকের তাহাতে কোনওই নিয়ন্ত্রণ নাই। সরকারও এ বিষয়ে নাগরিকের আস্থা অর্জন করিতে পারে নাই। ব্যাঙ্ক, মোবাইল ফোন প্রভৃতি পরিষেবায় আধার কার্ড ব্যবহার না-করিবার অধিকার ফিরিয়া পাইতে নাগরিককে সুপ্রিম কোর্টে ছুটিতে হইয়াছে। নাগরিকের ইচ্ছা মান্য করিবার অভ্যাস সরকারের হয় নাই।

বিবিধ তথ্যের সংযুক্তি কত জরুরি, তাহা বুঝাইতে কুড়ি পাতার একটি অধ্যায় রহিয়াছে সমীক্ষায়। শিরোনাম, ‘জনগণের তথ্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য।’ আকর্ষক, কিন্তু অনাবশ্যক। উন্নয়নের পরিকল্পনার জন্য, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি রুখিবার জন্য তথ্য না থাকিলে নহে, সে কথা নাগরিককে মনে করাইবার প্রয়োজন নাই। বরং নাগরিকই তাহা মনে করাইয়াছেন সরকারকে। দেশে কর্মহীনতার হার সম্পর্কিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট (২০১৭-১৮) প্রকাশ করিতে মোদী সরকারের অনাগ্রহ, এবং তাহার প্রতিবাদে দুই আধিকারিকের পদত্যাগের কথা দেশবাসী বিস্মৃত হন নাই। অর্থনীতির একশত আট জন বিশেষজ্ঞ তখন চিঠি লিখিয়া মোদী সরকারকে স্মরণ করাইয়াছিলেন— তথ্য হইতেছে জনসম্পদ। তথ্যের সংগ্রহ, বিশ্লেষণ বা প্রকাশনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত। নানাবিধ তথ্যের সংযুক্তিতে দুর্নীতি কমিবে, এই দাবি সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। বাড়ি-গাড়ির মালিক দুই টাকা দরে চাল পাইতেছেন রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে, তথ্যের অভাবে নহে। সমস্যা প্রশাসনিক বিধিতেও। কর্নাটকে ‘ভূমি’ প্রকল্পে কৃষিজমির নথিপত্রের ডিজিটাল সংস্করণ হইয়াছে, পনেরো টাকায় কপি মিলিবে। কিন্তু সরকারি দফতরে তাহা পেশ করিতে হইলে আধিকারিকের স্বাক্ষর প্রয়োজন। অতএব দুর্নীতির সুযোগটি থাকিয়াই গেল। সর্বভারতীয় অনলাইন কৃষিবাজার (ই-ন্যাম) হইয়াছে, কিন্তু ভিন্‌রাজ্যে ট্রেড লাইসেন্স মেলে নাই চাষির। ব্যবস্থায় ত্রুটি রহিয়া গেল।

তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন লইয়া বিতর্ক নাই। কিন্তু জনগণের তথ্য জনগণের জন্যই ব্যবহার করিতে হইলে কেবল তথ্যভাণ্ডার গড়িলে হইবে না, অনেক প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। তথ্যের সাক্ষ্য-ভিত্তিক নীতি গ্রহণ করিতে হইবে নেতাদের। আশঙ্কা আরও আছে। সকল নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য একটিই ভাণ্ডারে জমা হইলে সরকারের সার্বিক নজরদারির উপায়টি তৈরি হইয়া থাকে। নজরদারি করিল কি না, তাহা প্রশ্ন নহে। করিতে পারে, এই আশঙ্কাই বিরুদ্ধ কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করিবার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নের মূল্য চুকাইতে কি নাগরিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হইবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Information Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy