Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

দায়িত্ব এবং দায়

প্রশাসক হিসাবে নিরপেক্ষ হওয়াই যথেষ্ট নহে, নিরপেক্ষ প্রতিভাত হওয়া ততোধিক জরুরি।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

মারমুখী জনতার ভয়ে পুলিশ পলায়ন করিতেছে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই দৃশ্যে রাজ্যবাসী অভ্যস্ত। বারংবার অভিযোগ উঠিয়াছে যে রাজনৈতিক রং বিচারের অভ্যাসটি পুলিশবাহিনীকে নিধিরাম সর্দার বানাইয়া ফেলিয়াছে। কাজেই, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটিল, তাহাকে ব্যতিক্রমী বলিবার কোনও কারণ আছে কি? ইহাই কি পশ্চিমবঙ্গের দস্তুর নহে? টিকিয়াপাড়ার ঘটনার প্রেক্ষাপট পৃথক— পুলিশ জনতাকে লকডাউনের বিধি মানিতে বলায় জনতা মারমুখী হইয়া উঠে। কিন্তু, সেই অর্থে প্রতিটি ঘটনারই আপাত-কারণ ভিন্ন— যাহা এক, তাহা হইল পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের অপার অবজ্ঞা। রাজ্যবাসী অভিজ্ঞতায় শিখিয়া লইয়াছে যে মাথার উপর আশীর্বাদী হাত থাকিলে কোনও অন্যায়েরই শাস্তি হইবে না। সেই নিশ্চয়তাই পুলিশ নিগ্রহের সাহস জোগায়। টিকিয়াপাড়াতেও, অন্যত্রও।

মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, ক্রাইম ইজ় ক্রাইম। কোনও রং বিচার না করিয়াই পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। ঘটনায় বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত গ্রেফতারও হইয়াছে। বলিতে গেলে, ইহাই বরং ব্যতিক্রমী। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশনিগ্রহে কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত খুঁজিয়া পাওয়া ভার। দায়টি শেষ অবধি তাঁহার উপরই বর্তায়। তিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী বলিয়াই। রাজ্যে প্রথম বার পুলিশনিগ্রহের ঘটনা ঘটিবার সঙ্গে সঙ্গেই যদি তিনি এই কঠোরতা দেখাইতেন, তবে হয়তো জল এত দূর গড়াইত না। পুলিশবাহিনী যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখিতে পারিত, যদি রং বিচার না করিয়া অপরাধীদের শায়েস্তা করিবার প্রকৃত ক্ষমতা বাহিনীর হাতে থাকিত, তবে হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর এই অতিরিক্ত ‘তিরস্কার’-এরও প্রয়োজন পড়িত না। সত্য, রাজনৈতিক আনুগত্যাধীন পুলিশ তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাইয়াছেন। কু-অভ্যাসটি বামফ্রন্টের আমলের। কিন্তু, পূর্বসূরির আরও কু-অভ্যাসের ন্যায় পুলিশকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করিবার রীতিটিও এই জমানায় অপরিবর্তিত। পশ্চিমবঙ্গে এখন সেই বিষবৃক্ষের শাখায় শাখায় ফল ধরিয়াছে।

সাদা চোখে দেখিলে, টিকিয়াপাড়ার ঘটনাটিতে ভিন্নতর কোনও রং খুঁজিবার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপারিদের চোখ সেই টুপি-দাড়িতে আটকাইয়া গিয়াছে। তাঁহারা টিকিয়াপাড়ার ঘটনাক্রমকে সাম্প্রদায়িকতার রঙে রাঙাইয়া লইয়াছেন। অতি দুর্ভাগ্যজনক রাজনীতি। তাঁহারা ভুলিয়াছেন, বিরোধীদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। বিশেষত এই সময়ে, যখন গোটা রাজ্য এই অভূতপূর্ব বিপদে বিপর্যস্ত। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী টুপি-দাড়ি দেখিয়া অপরাধী চিহ্নিত করিবার সহজ পন্থা বাতলাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু কোভিড-১৯’বিধ্বস্ত সময়ে মহাজনপ্রদর্শিত সেই পথটি পরিহার করিলেই তাঁহারা নৈতিকতার পরিচয় দিতেন। কিন্তু, সেই সংযম যে সাধনার ফল, মুরলীধর সেন লেনের দৃশ্যত তাহাতে রুচি নাই। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রাজধর্মে চ্যুতিকে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাত হিসাবে দেখাইবার কোনও সুযোগ যেন কেহ না পান, তাহা নিশ্চিত করা মুখ্যমন্ত্রীরই দায়িত্ব। রাজধর্ম সর্বদাই পালনীয়, এই সময়ে তাহার গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁহার স্মরণে রাখা বিধেয় যে প্রশাসক হিসাবে নিরপেক্ষ হওয়াই যথেষ্ট নহে, নিরপেক্ষ প্রতিভাত হওয়া ততোধিক জরুরি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Tikiapara West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy