Advertisement
E-Paper

শব্দাঘাত

আশ্চর্য ইহাই যে, বেশ কিছু কাল পূর্বে কলিকাতা হাই কোর্টও বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড-লিমিটর লাগাইবার কথাটি বলিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share
Save

বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও যে কাজটি বহু বৎসর ধরিয়া অ-সম্পূর্ণ থাকিয়া যায়, তাহার জন্য সম্ভবত কোনও সমালোচনাই যথেষ্ট নহে। শব্দদূষণ লইয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিরুত্তাপ ভঙ্গিও যাবতীয় সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠিয়া গিয়াছে। অথচ, উৎসবের মরসুম চলিতেছে। করোনা আবহে উৎসবের আতিশয্য হয়তো কিছু কম থাকিবে এই বৎসর। কিন্তু শব্দতাণ্ডব তাহাতে বন্ধ হইবে না। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র উৎসবকালে নহে, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক— সমস্ত অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত শব্দযন্ত্রেই সাউন্ড-লিমিটর লাগাইবার বিষয়টি যাহাতে বাস্তবায়িত হয়, তাহার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিকট আবেদন জানাইল ‘নাগরিক মঞ্চ’।

আশ্চর্য ইহাই যে, বেশ কিছু কাল পূর্বে কলিকাতা হাই কোর্টও বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড-লিমিটর লাগাইবার কথাটি বলিয়াছিল। নির্দেশিকা জারি করিয়াছিল রাজ্য সরকারও। কিন্তু ওই পর্যন্তই। চাকা আর তাহার পর ঘুরে নাই। ইতিমধ্যে শব্দদূষণের বিস্তৃতিও শুধুমাত্র বাজি-পটকার সীমানা ছাড়াইয়াছে। সুতরাং, পূজার মরসুম শেষ হইল বলিয়া শব্দদূষণের হাত হইতেও পরিত্রাণ মিলিল, এমন নহে। শীতকালীন পিকনিক, পার্টিতেও যথেচ্ছ লাউডস্পিকার, ডিজে-র ব্যবহার চলিতেছে। ইহার সঙ্গেই প্রাত্যহিক দূষণের তালিকায় প্রবেশ করিয়াছে গাড়ির হর্ন, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমও। অথচ, এই সম্মিলিত দূষণ হ্রাস করা হইবে কী উপায়ে, সেই সংক্রান্ত কোনও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ করা হয় নাই। এমন নহে যে, সাউন্ড-লিমিটর যন্ত্রটি দুষ্প্রাপ্য, বা দুর্মূল্য। ইহা সাধারণ যন্ত্র, অ্যামপ্লিফায়ারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মাইক, লাউডস্পিকারের শব্দ যাহাতে নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম না করে, তাহার নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। ২০০৪ সালেই ওয়েবেল-এর সহযোগিতায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সাউন্ড লিমিটর প্রস্তুত করিয়াছিল। প্রতি বৎসর এই রাজ্যে নির্মিত প্রায় দুই হাজার সাউন্ড-লিমিটর ওড়িশায় যায়। অথচ, সেই পশ্চিমবঙ্গেই পূজার মরসুমে এই যন্ত্র বিক্রি হয় মাত্র ১৫-২০টি। অন্য সময় তাহাও হয় না। কেন ইহা এখনও বাধ্যতামূলক করা গেল না, তাহা বিস্ময়ের। সম্ভবত প্রশাসন জনগণের সদিচ্ছার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু প্রতি উৎসবে শব্দতাণ্ডব প্রমাণ করিয়াছে, সেই সদিচ্ছা বিন্দুমাত্র উপস্থিত নাই।

সাউন্ড-লিমিটর লাগাইবার পরেও যে দূষণ কমিবে, সেই ভরসা নাই। প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে আইন এড়াইবার, ক্ষেত্রবিশেষে না-মানিবার বহু পন্থাও ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছে। সর্বাগ্রে প্রয়োজন শব্দদূষণও যে অন্য দূষণগুলির সমান ক্ষতিকর, সেই বোধটি জাগ্রত করা। বায়ুদূষণ লইয়া তবু কিছু শব্দ ব্যয় হয়। শব্দদূষণ লইয়া তাহাও হয় না। অথচ, ইহা নিঃশব্দ ঘাতক। উচ্চ রক্তচাপ, ইস্কিমিক হার্ট এবং স্নায়ুর রোগ-সহ একাধিক রোগে তো বটেই, অত্যধিক শব্দ মানসিক স্বাস্থ্যেরও ভয়ঙ্কর ক্ষতিসাধন করিয়া থাকে। তাহা সত্ত্বেও অবাধে শব্দবাজি ফাটে, হাসপাতাল-সহ শহরের সাইলেন্স জ়োন হিসাবে চিহ্নিত স্থানে শব্দবিধি না মানিবার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। প্রশাসন কখনও বলে উহা দুষ্ট ছেলেদের দুষ্টামি, কখনও সম্পূর্ণ নীরব থাকে। ২০০৭ হইতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র শব্দতাণ্ডবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এই রাজ্যে প্রাণ হারাইয়াছেন ১৩ জন। ‘শব্দশহিদ’-এর সংখ্যা আরও কত বৃদ্ধি পাইলে প্রশাসনের টনক নড়িবে, জানা নেই।

Sound Pollution National Green Tribunal West Bengal Sound Limiter

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}