Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

আশ্বাস

অতিমারির মধ্যেও অগণিত মানুষ মাস্ক না পরিয়া বাহির হইতেছেন, দূরত্ববিধি না মানিয়া বিবিধ উৎসবে মাতিয়া উঠিতেছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫৯
Share: Save:

অতিমারির কৃষ্ণমেঘের পাশে ক্ষীণ আলোর রেখার ন্যায় এক আশ্বাস মিলিয়াছে। তাহা এই যে, মাস্ক পরিধান, হাত ধুইবার মতো সু-অভ্যাসগুলির জন্য বেশ কিছু সংক্রামক রোগের প্রকোপ কমিয়াছে। ইহা অপ্রত্যাশিত নহে, কিন্তু রোগ হ্রাসের হার দেখিয়া বিজ্ঞানীরা চমৎকৃত। একাত্তরটি দেশ হইতে সংগৃহীত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করিয়া গবেষকদের একটি দল জানাইয়াছে যে, ২০২০ সালে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মরসুম অন্যান্য বৎসরের তুলনায় অনেক স্বল্পস্থায়ী হইয়াছে, মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক কমিয়াছে। হংকং-এ ফ্লু-তে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়াছে অর্ধেকেরও অধিক। শিশুদের মধ্যে জলবসন্ত, হাম, রুবেলা, ফ্লু এবং ব্রঙ্কাইটিসের ন্যায় অসুখের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম মিলিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গেও যক্ষ্মা সংক্রমণের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমিয়াছে। অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন যে, অতিমারির সময়ে যক্ষ্মার নির্ণয় এবং চিকিৎসা ঠিক মতো হয় নাই। তাহার সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু মাস্ক যক্ষ্মার জীবাণুকে দেহে প্রবেশ করিতে না দিয়া বহু সংক্রমণ ঠেকাইয়াছে, তাহাও সম্ভব। জনজীবনে সাধারণ সতর্কতার বিধি নিয়মিত অভ্যাস করিবার সুফল কতখানি, কোভিড বুঝাইল। টিকা পাইবার পরেও বিধিপালন অপরিহার্য।

কথাটি উড়াইয়া দিবেন, এমন লোক কম নাই। অতিমারির মধ্যেও অগণিত মানুষ মাস্ক না পরিয়া বাহির হইতেছেন, দূরত্ববিধি না মানিয়া বিবিধ উৎসবে মাতিয়া উঠিতেছেন। কোভিডের প্রকোপ কমিলে তাঁহারা স্বেচ্ছায় সতর্কতার বিধি মানিবেন, তাহা কি বিশ্বাসযোগ্য? ইহার উত্তর, সহজে অভ্যাস না হইলে কঠোর হইতে হইবে। কলিকাতাতেই দেখা গিয়াছে যে, পুলিশ নিয়মিত জরিমানা করিবার ফলে গাড়ি চালকদের ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করিবার প্রবণতা কমিয়াছে। তাহার ফলে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়াছে। গ্রামাঞ্চলে শৌচাগার ব্যবহার এড়াইবার প্রবণতাও ছিল যথেষ্ট। তাহা সম্পূর্ণ দূর হয় নাই, কিন্তু নিরন্তর প্রচার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ফলে উন্মুক্ত স্থানে শৌচ কমিয়াছে। স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের পূর্বে হাত ধুইবার অভ্যাসও গড়িয়া উঠিয়াছে। অতএব এখন যেমন প্রায় সকল দফতর ও প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পূর্বে স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার আবশ্যক, মাস্ক না পরিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ, সেই সকল ব্যবস্থা বজায় রাখিলে ক্রমশ তাহা ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া গৃহীত হইবে। ভারত যক্ষ্মার রাজধানী, সেখানে জনবহুল স্থানে থুতু ফেলিবার জন্য কেনই বা শাস্তি হইবে না? মাস্ক পরিধানের অভ্যাস তৈরি, বা থুতু ফেলিবার অভ্যাস ত্যাগ, কোনওটি কষ্টসাধ্য, খরচসাপেক্ষ নহে। অথচ, এই মন্দ অভ্যাসগুলির জন্য প্রতি বৎসর কয়েক লক্ষ মানুষ অসুস্থতা, অকালমৃত্যুর শিকার হইতেছেন। চিকিৎসায় বিপুল ব্যয় হইতেছে সরকারের।

অপর একটি সতর্কতাও প্রয়োজন। অতিমারিতে দুই চাকার যানের ব্যবহার বাড়িয়াছে, তৎসহ দুর্ঘটনাও। সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রধানত বেপরোয়া, তীব্র গতিতে বাইক চালানো এবং হেলমেট পরিতে অবহেলার জন্য মৃত্যু ঘটিতেছে। অতএব গতি নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথ হেলমেট পরিবার বিষয়ে কঠোর হইতে হইবে। প্রয়োজনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হইবে। কোভিড কেবল প্রাণহানি করে নাই, অর্থক্ষয় করিয়াছে। দেশের ইহা আপৎকাল। এখন যথেচ্ছাচারের সময় নহে, সংযম ও সতর্কতার সময়।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus wearing a mask infectious disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy