Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dum dum Central Jail

গভীরতর অসুখ

Dum dum Central Jail, Corruption, Violenceপ্রশ্ন উঠে, এই ঘটনার মূলে কারা-কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে অবহেলাও কি নাই?

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:২৭
Share: Save:

পর পর দুই দিন দমদম জেলে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা চলিল। পুলিশের গুলিতে অন্তত আটাশ জন বন্দি আহত হইয়াছেন। হাসপাতাল সূত্রে সংবাদ, মৃত অন্তত চার জন। বন্দিরা তালা ভাঙিয়াছে, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে, গ্যাস সিলিন্ডার ফাটাইয়া গেট ভাঙিবার চেষ্টা করিয়াছে, পুলিশের সহিত খণ্ডযুদ্ধ বাধাইয়াছে। এই দুইটি দিন বুঝাইয়া দিল, কারা-প্রশাসনের অদক্ষতা ও দুর্নীতি কোন অতলে পৌঁছাইয়াছে। কী করিয়া আগ্নেয়াস্ত্র বন্দিদের হাতে পৌঁছাইল? কী করিয়া শনিবারের গন্ডগোলের পরেও রবিবার বন্দিদের হাতে দরজা ভাঙিবার মতো হাতুড়ি ও লোহার রড রহিল? ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নাই, পাইবার আশাও নাই। তবু কিছু প্রশ্ন না করিলে নয়। কত জন আহত, কত মৃত, কোন কোন বন্দি প্রাণ হারাইয়াছে, সে বিষয়ে কারাকর্তারা নীরব কেন? গোপন করিবার এমন চেষ্টা নিতান্ত অমানবিক। দুই, মহামারির প্রাদুর্ভাবের পরে বন্দিরা যে প্রাণভয়ে অস্থির হইয়া উঠিতেছেন, সেই সম্পর্কে কি কারাকর্তারা সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলেন? তাঁহারা বন্দিদের কোনও রূপে আশ্বস্ত করেন নাই কেন? কারাগারে অস্থিরতা রুখিতে পূর্বেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই কেন? বন্দিদের আইনভঙ্গ ও হিংসা ছড়াইবার চেষ্টা কোনও অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নহে। কিন্তু প্রশ্ন উঠে, এই ঘটনার মূলে কারা-কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে অবহেলাও কি নাই?

কারাগারের অভ্যন্তরে নিয়ত দমনপীড়ন, দুর্নীতি এবং বন্দিদের ন্যায্য দাবিগুলি ক্রমাগত উপেক্ষার কারণে যে ক্ষোভ দীর্ঘ দিন ধরিয়াই জমিয়া আছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আবহে তাহাই প্রাণহানির আশঙ্কায় বিস্ফোরিত হইল। ক্ষোভের একটি কারণ অবশ্যই কারাগারে অতিরিক্ত ভিড়। মোট বন্দির ৬৭ শতাংশ বিচারাধীন, তাহাদের জামিনে বিলম্ব চলিতেই থাকে। সম্প্রতি মহামারির কারণে আদালত বন্ধ হইয়াছে, জামিনের শুনানিও অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছাইয়া গিয়াছে। ভিড় ক্রমেই বাড়িতেছে। মহামারি দেখা দিলে তাহাতে প্রাণসংশয় হইতে বাধ্য। ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ইটালি, ইরান প্রভৃতি দেশে ইতিমধ্যেই বন্দিদের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়াছে। আশঙ্কা সেইখানেই। সাধারণ রোগের চিকিৎসাই যেখানে দুর্লভ, জ্বর এবং অম্বলের ওষুধ দিয়া প্রায় সকল অসুখের মোকাবিলা হয়, সেখানে দুরারোগ্য সংক্রমণের সম্ভাবনা যথেষ্ট ভয়প্রদ।

এই কারণে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়াছে, যাহাদের অপরাধ গুরুতর নহে, তেমন সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন বন্দিদের জামিনে অথবা প্যারোলে ছাড়িবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। দেশের নানা রাজ্য এই বিষয়ে সক্রিয় হইলেও, পশ্চিমবঙ্গে এখনও অবধি বিশেষ কাজ হয় নাই। একটি কমিটি গঠন হইয়াছে মাত্র। বন্দিদের কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা কারা-কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। অতএব কিছু অপরাধীর উপর আরও অপরাধের দায় চাপাইয়াই কি এই পর্বের সমাধা হইবে? কারা দফতরকে বুঝিতে হইবে, বন্দিরও প্রাণের অধিকার রহিয়াছে, এবং তাহার সুরক্ষা ও কল্যাণের দায় তাহাদেরই। কারাকর্তারা তাহা কখনও স্বীকার করেন নাই বলিয়াই বন্দিরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বার বার বিপন্ন হইয়াছেন। এই বার অন্তত মহামারির সম্মুখে দাঁড়াইয়া বন্দির প্রতি কর্তব্য বিষয়ে সজাগ হউক সরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Dum dum Central Jail Corruption Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy