Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

ভয়

এক কথায় বাজেটটিকে উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। দশ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণাটিই যেমন।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৩
Share: Save:

নূতন ভারত কৃষকের কুটির হইতেই জাগিবে কি না, সেই তর্ক আপাতত বকেয়া থাকুক। কিন্তু, অরুণ জেটলি, অথবা বলা ভাল নরেন্দ্র মোদী, জানেন, ২০১৯ সালের ভোটের সিংহভাগ কৃষকের কুটির হইতেই আসিবে। সেই ভোট কোন দিকে যাইবে, ভাবিয়া নরেন্দ্র মোদীরা ভয় পাইতেছেন। বৎসরে সওয়া-কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির ‘জুমলা’ ধরা পড়িয়া গিয়াছে। সমস্ত মানুষকে চিরকাল বোকা বানানো কঠিন, সেই সত্য এমনকী বর্তমান শাসকরাও জানেন। খানিক ঠেকা না দেওয়া গেলে ভোটের স্রোত কোন খাতে বহিবে, সেই ভয়ও তাঁহাদের তাড়া করিয়াছে। অরুণ জেটলির বাজেটের মূল চালিকাশক্তিই ভয়। নির্বাচনের ভয়। ফলে, বাজেটের আগাগোড়া কর্মসংস্থানের প্রস্তাব, কৃষকের প্রতি দায়বদ্ধতার ঘোষণা, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের প্রতি সরকারের কর্তব্যের নির্ঘোষ, এমনকী সরকারের ‘শীর্ষ নেতৃত্ব’ সম্পর্কে রোমাঞ্চকর উক্তি: তাঁহারা (গৌরবে বহুবচন, অবশ্যই) দরিদ্রদের লইয়া সমীক্ষা করেন না, তাহার প্রয়োজন হয় না, কারণ তাঁহারা নিজেরাই দারিদ্রের প্রতিমূর্তি! এই বাজেট নির্বাচনের।

কিন্তু, এক কথায় বাজেটটিকে উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। দশ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণাটিই যেমন। সেই প্রকল্পের টাকা কোথা হইতে আসিবে, রাজ্যগুলিকে কত শতাংশ ব্যয়ভার বহন করিতে হইবে, পরিকাঠামোর উন্নতি না করিয়া বিমা চালু করিয়া দিলে লাভের গুড় দালালে খাইয়া যাইবে কি না, প্রশ্নগুলি থাকিতেছে। কিন্তু, উদ্যোগটির প্রতীকী গুরুত্ব স্বীকার না করিয়া উপায় নাই। তবে, সংশয়ের আরও কারণ আছে। হিসাব বলিতেছে, স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে প্রকৃত ব্যয়বরাদ্দ বিশেষ বাড়ে নাই। তাহা হইলে, এই বাড়তি খরচের জন্য কোন খাতে কোপ পড়িতেছে— স্বচ্ছ জেটলি প্রার্থনীয় ছিল। কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গটিও বাজেট বক্তৃতায় বহু বার আসিয়াছে, কিন্তু কোন ম্যাজিকে তাহা হইবে, জেটলি সেই উত্তর খোলসা করেন নাই। আর, যে ভঙ্গিতে তিনি পাঁচ বৎসরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করিবার প্রধানমন্ত্রী-উবাচ অলীক প্রতিশ্রুতিটিকে বাজেট বক্তৃতায় ঢুকাইয়া লইয়াছেন— অথবা, ঢুকাইতে বাধ্য হইয়াছেন— তাহা বাস্তবিকই শ্বাসরোধকর। অরুণ জেটলিরা ক্ষমতায় আসিয়া জানাইয়াছিলেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়াইয়া শেষ অবধি কৃষকের উপকার হয় না, অতএব তাঁহারা সেই পথে হাঁটিবেন না। তাঁহার শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে জেটলি বলিলেন, ‘উৎপাদন ব্যয়ের দেড় গুণ সহায়ক মূল্য দিয়া কৃষকের পার্শ্বে দাঁড়াইবেন।’ নির্বাচনের ভয়ের বাড়া উদ্বেগ নাই। সহায়ক মূল্য বাড়াইলে কৃষকের উপকার হয়, না কি কৃষির সংস্কার ভিন্ন গতি নাই? উত্তরটি জেটলিরাও জানেন, কিন্তু ভোটের বাজারে বলিতে পারিবেন না।

ভয় শুধু ভোটের নহে। দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভের উপর কর বসানোয় স্পষ্ট, শেয়ার বাজারে অতিস্ফীতি সরকারের ললাটে ভাঁজ ফেলিয়াছে। তাহা অহেতুক নহে। কিন্তু, ভয়ই যদি বাজেটের চালিকাশক্তি হয়, পরিণাম শুভ হইতে পারে কি? জেটলি রাজকোষ ঘাটতির হার কমাইবার লক্ষ্যমাত্রাটিতে পৌঁছাইতে পারেন নাই। পরের বৎসরও পারিবেন না, তাহা জানাইয়া রাখিলেন। এই বৎসর কাজটি তুলনায় সহজ ছিল— বিলগ্নিকরণের পরিমাণ প্রত্যাশাকে ছাপাইয়া গিয়াছে, তদুপরি প্রত্যক্ষ কর আদায়ও বাড়িয়াছে। তবু যদি রাজকোষ ঘাটতি না কমে, কিসে কমিবে? আগামী অর্থবর্ষে সরকারের খরচ বাড়িবে, অন্য দিকে তেলের দামও বাড়িতেছে। রাজকোষ ঘাটতির হারের চাপে মূল্যস্ফীতি হইবে, সুদের হার বাড়িবে, অতএব অর্থনীতিও ধাক্কা খাইবে— সেই সম্ভাবনা থাকিতেছে। ভয়ের তাড়নায় অর্থমন্ত্রী বাজেটের রাশটি শক্ত হাতে ধরিতে পারিলেন না। সুতরাং নাগরিকের ভয় থাকিতেছেই। বেসামাল অর্থনীতির ভয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Arun Jaitley Budget 2018 Union Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE