Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

জয়ী

আবি আহমেদের লড়াই সর্বার্থেই একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এককের লড়াই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

গ্রেটা থুনবার্গ নোবেল পুরস্কার না পাওয়ায় অনেকেই বিস্মিত। ষোড়শীর লড়াইকে বিন্দুমাত্র খাটো না করিয়াও বলা বিধেয়, তাঁহার সময় আসিবে। নোবেল পুরস্কার পান বা না-ই পান, গোটা দুনিয়া ইতিমধ্যেই তাঁহাকে চিনিয়াছে, আরও চিনিবে। কিন্তু, এই মুহূর্তে আবি আহমেদকে চিনিয়া লওয়া জরুরি। দুনিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে একটি ইথিয়োপিয়া। আবি সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশী দেশ এরিট্রিয়ার সহিত গত কুড়ি বৎসর যাবৎ ইথিয়োপিয়ার যুদ্ধ-বিবাদ চলিতেছিল। দুই হতদরিদ্র দেশের রাজনীতিরই চালিকাশক্তি ছিল সেই বহুমূল্য যুদ্ধ। যে পরিমাণ ডলার দেশ দুইটি যুদ্ধখাতে ব্যয় করিতেছিল, তাহা দুই দেশেরই উন্নয়নের রূপরেখা পাল্টাইয়া দিতে পারিত— কিন্তু, জাতীয়তাবাদ বড় বালাই। দেশের প্রধানমন্ত্রী হইবার এক শত দিনের মধ্যে দুই দশকের বিবাদ ঘুচাইয়া শান্তিচুক্তি রূপায়ণ করিয়াছেন আহমেদ। মাত্র এক শত দিনের মধ্যে। এবং, সেখানেই থামেন নাই। তাঁহার নিজের দেশে যে বিরোধী রাজনীতিকরা রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের ভয়ে বিদেশে আশ্রয় লইয়াছিলেন, তাঁহাদের ফিরাইয়া আনিয়াছেন; দেশের সংবাদমাধ্যমকে হৃত কণ্ঠস্বর ফিরিয়া পাইতে সাহায্য করিয়াছেন; নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিয়াছেন; নিজের মন্ত্রিসভায় অর্ধেক আসন দিয়াছেন নারীদের, প্রধান বিচারপতি পদে বসাইয়াছেন এক অসামান্য মহিলা বিচারককে। প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছেন, যাহাতে ইথিয়োপিয়াকে পরিচিতিভিত্তিক রাজনীতির আত্মঘাতী স্রোত হইতে ফিরাইয়া আনা যায় সর্বজনীন উন্নয়নের ভাষ্যে। অর্থাৎ, এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট নাগরিক যাহা আশা করিতে পারেন— বস্তুত, এখন যে আশা নিতান্ত অলীক হইয়া উঠায় নাগরিকরা যে স্বপ্ন দেখিতে ভুলিয়া গিয়াছেন, আবি আহমেদ সেই আশার মূর্ত রূপ। শুধু আন্তর্জাতিক সীমান্তে যুদ্ধ বন্ধ করিবার শান্তি নহে, দেশের গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাও শান্তির সাধনাই বটে। নোবেল কমিটি সেই সাধনাকে স্বীকৃতি দিয়া দুনিয়ার একটি মস্ত উপকার করিল। স্মরণ করাইয়া দিল, এখনও সব শেষ হইয়া যায় নাই।

আবি আহমেদের লড়াই সর্বার্থেই একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এককের লড়াই। তাঁহার দেশ তৃতীয় বিশ্বেরও তলানিতে। সেখানে দারিদ্র বিপুল, দুর্নীতি বিপুলতর। নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা খণ্ডিত হইলে, সংবাদমাধ্যমের গলায় নিয়ন্ত্রণের ফাঁস চাপিয়া বসিলে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জাতি-জনগোষ্ঠীর বিভেদরেখাগুলিকে মুছিতে না দিলে সর্বাধিক লাভ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের। প্রতিবেশীর সহিত যুদ্ধ থামিতে না দিলেও সেই প্রতিষ্ঠানেরই লাভ— উন্নয়নের যাবতীয় খামতি ঢাকিয়া দেওয়া যায় অতিজাতীয়তাবাদী হুঙ্কারে। আবি আহমেদের পূর্বসূরিরা তাহাই করিয়াছেন। বিশ্বের তাবড় গণতন্ত্রের কর্ণধাররাও ঠিক সেই কাজটিই করিয়া চলিয়াছেন। এবং, তাঁহাদের দেশের নাগরিকরা বিশ্বাসও করিতেছেন যে যাবতীয় নাগরিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়া, বিরুদ্ধবাদী স্বরগুলিকে দমন করাকে সমর্থন করিয়াও সরকারের পার্শ্বে থাকাই নাগরিকের কর্তব্য, কারণ সেনাবাহিনীর জওয়ানরা সীমান্তে লড়িতেছে। এই সহজ পথটি হইতে সরিয়া আসার কোনও কারণ আবি আহমেদের ছিল না। অথবা, একটিমাত্র কারণ ছিল— গণতন্ত্রের প্রতি, শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতা। দেশ সীমান্তের কাঁটাতারের গণ্ডিতে রচিত হয় না, সেই পরিসরে থাকা প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে দেশকে দেখিয়া লইতে হয়। আবি আহমেদ নিজের দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়িয়াছেন, প্রথার বিরুদ্ধে লড়িয়াছেন। সহজে ক্ষমতায় টিকিয়া থাকার তীব্র প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়িয়াছেন। বিশ্বের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশের নাগরিকরা নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট যে লড়াই প্রত্যাশা করিতে করিতে শেষে হাল ছাড়িয়া দিয়াছেন, আবি সেই লড়াইয়ে জয়ী। নোবেলের স্বীকৃতি সেই জয়কেই চিহ্নিত করিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Greta Thunberg Climate Change Nobel Prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy