অশোক চন্দওয়ানে
অশোক চন্দওয়ানে। সিলিকন ভ্যালির ২৮ বৎসর বয়সি এই ইঞ্জিনিয়ার ফেসবুকের মোটা বেতনের চাকুরি ছাড়িলেন বিবেকের তাড়নায়। এক অভ্যন্তরীণ ইমেলে অশোক জানাইয়াছেন, বিদ্বেষের বেসাতি হইতে মুনাফা করে ফেসবুক। অতি তীব্র অভিযোগ, সন্দেহ নাই— কিন্তু ফেসবুকে ইতিপূর্বেও নৈতিকতার প্রশ্ন তুলিয়া পদত্যাগের ঘটনা ঘটিয়াছে। কোনও ক্ষেত্রে অভিযোগ বিদ্বেষমূলক প্রচারে বাধা না দেওয়ার; কেহ আপত্তি করিয়াছেন উপভোক্তাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে পণ্য বানাইয়া তোলা বিষয়ে; কেহ জানাইয়াছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার যে নেশার বস্তুর ন্যায় মগজে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করিতে সক্ষম, তাহা জানিয়াও ফেসবুক তাহাদের চলন পাল্টায় নাই— বিশ্বের দুইশত কোটি মানুষকে নেশার সামগ্রী জোগাইয়াছে। অভিযোগগুলি ভিন্ন ভিন্ন হইলেও একটি সূত্রে গাঁথা— ফেসবুক নামক সংস্থাটির নিকট নৈতিকতার গুরুত্ব নাই, তাহারা মুনাফার দ্বারা পরিচালিত হয়। এই দোষে কেবল ফেসবুককে দুষ্ট বলিলে পুঁজিবাদের ইতিহাসের প্রতি অবিচার হয়। কিন্তু, পুঁজিবাদের দীর্ঘ ইতিহাসে কোনও পণ্য বা কোনও সংস্থা দুনিয়ার এত সংখ্যক মানুষকে এতখানি প্রভাবিতও করিতে পারে নাই। সুতরাং, ফেসবুকের মুনাফা-অর্জনের প্রক্রিয়া হইতে নৈতিকতার বিযুক্তি লইয়া ভাবা প্রয়োজন বইকি। বিশেষত, এক ভাবে দেখিলে, ফেসবুক এখন দুনিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র, যাহার নাগরিকের সংখ্যা দুইশত পঁয়তাল্লিশ কোটি। এই বিপুল রাষ্ট্র যদি নৈতিকতা-বিবর্জিত হয়, মুনাফার স্বার্থে একনায়কন্ত্রী রাজনীতি বা সর্বগ্রাসী নজরদারির অস্ত্র হইয়া উঠে, তাহা বিপজ্জনক।
ফেসবুকের অনৈতিকতা বাস্তব পৃথিবীকে কতখানি প্রভাবিত করিতে পারে, তাহার উদাহরণ অগণিত। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ন্যায় সংস্থা ফেসবুক হইতে তথ্য সংগ্রহ করিয়াই মার্কিন নির্বাচনে বিপুল প্রভাব ফেলিয়াছিল, ঠিক যে ভঙ্গিতে ক্রেতাদের মন বুঝিয়া হরেক ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন তাঁহাদের নিকট হাজির করা হয়। যে ভাবে আরব-বসন্ত সংগঠনে ফেসবুক-টুইটারকে কাজে লাগানো হইয়াছিল, সে ভাবেই বিদ্বেষবিষ ছড়াইয়া পড়ে এই সোশ্যাল মিডিয়ার স্রোতে, দাঙ্গার আগুন জ্বলিয়া উঠে। অর্থাৎ, ব্যক্তিপরিসর হইতে রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, সব কিছুকেই প্রভাবিত করিবার ক্ষমতা ফেসবুকের আছে। মার্ক জ়াকারবার্গ নিজের সংস্থাটিকে নেহাত একটি প্ল্যাটফর্ম বলিয়া দাবি করিয়া থাকেন— অর্থাৎ, তাহা মঞ্চমাত্র, সেখানে অভিনীত কুনাট্যের দায় ফেসবুকের নহে। কথাটি বহু স্তরে অসত্য— কিন্তু, ফেসবুক যদি সত্যই মঞ্চমাত্রও হয়, তবুও তাহাকে ব্যবহার করিয়া অনৈকিতার বেসাতি হইলে সেই দায় কি মঞ্চের উপরও বর্তায় না?
ঘটনা হইল, লাভ নামক বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ায় ফেসবুকের বিক্রীত পণ্যটির নাম বদলাইয়া গিয়াছে। কোনও কনটেন্ট নহে, বিনোদন নহে— ফেসবুক যাহা বিক্রি করে, তাহার নাম মানুষ। গ্রাহক। কেহ ভোটে জিতিবার জন্য ‘মানুষ’ কিনিতে চাহিলেও ফেসবুক তাহা বেচে, আবার কেহ বিদ্বেষবিষ ছড়াইতে চাহিলেও ফেসবুক শ্রোতার জোগান দেয়। শর্ত একটিই, মুনাফা। তাহার জন্য রাজনৈতিক আপস, আইনের ফাঁক খুজিয়া লওয়া— সবই চলিতে থাকে। এবং, এই প্রবণতাটির ফায়দা তোলে আইটি সেলের ন্যায় সংগঠন— যাহারা জানে, যত ক্ষণ না ফেসবুকের বাণিজ্যিক স্বার্থে ঘা লাগিতেছে, তত ক্ষণ এই প্ল্যাটফর্মটিই তাহাদের বৃহত্তম জনসভা হিসাবে কাজ করিয়া চলিবে। তাহাদের বিষ কতখানি ভয়ঙ্কর, সুব্রহ্মণ্যন স্বামীর মতো ঘরের লোকও তাহা লইয়া মন্তব্য করিতেছেন। দিল্লি বিধানসভা ফেসবুকের ভারতীয় কর্তাকে তলব করিয়াছে। অর্থাৎ, বিষের প্রকোপে গণতন্ত্রের— ভারতীয় গণতন্ত্রেরও— নাভিশ্বাস উঠিতেছে। তাহাকে বাঁচাইবার প্রথম ধাপ, ফেসবুকের বাণিজ্যকে নৈতিকতা মানিতে বাধ্য করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy