অভিযোগ ছিল, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার। তাহা সক্রিয়তায় পরিণত হইতে চব্বিশ ঘণ্টাও লাগিল না। সৌজন্যে, একটি ফেসবুক পোস্ট। এই পোস্টটিকে কেন্দ্র করিয়াই কলিকাতা পুলিশকে কিছু অতি প্রয়োজনীয় এবং গোড়ার কথা ফের স্মরণ করাইয়া দেওয়া গেল— পুলিশকে প্রথমে মানবিক হইতে হইবে এবং থানার এক্তিয়ারের প্রশ্ন সরাইয়া রাখিয়া আগে ধৈর্য ধরিয়া অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনিতে হইবে। পোস্টটি, প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স-এর। মধ্যরাত্রির কলিকাতায় তিনি একাদিক্রমে দুই বার হেনস্থার শিকার হইয়া পুলিশি সাহায্য চাহিয়াছিলেন। অতঃপর তাঁহার অভিজ্ঞতাটি ভয়ঙ্কর। একটি এফআইআর দায়ের করিতে তিনটি থানায় ঘুরিতে হয় এবং তাহার পরও প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা দেখা যায় নাই। সেই সক্রিয়তা অবশেষে দেখা যায় তিনি নিজ অভিজ্ঞতাটি ভিডিয়ো-সহ ফেসবুকে পোস্ট করিবার পর। অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয় এবং রাত্রির শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যে বিস্তর গলদ আছে, সেই বোধটি অকস্মাৎ জাগিয়া ওঠে।
প্রশ্ন হইল, এই সাধারণ বোধটুকু জাগ্রত করিতে এত কাঠখড় পুড়াইতে হইল কেন? শহরের বুকে এক মহিলা হেনস্থার শিকার হইয়া সাহায্যের জন্য থানায় দরবার করিতেছেন—সক্রিয় হইবার জন্য তো এই তথ্যটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু তাহা হইল না। হয় না। কারণ স্পষ্টতই কর্তব্য পালনে অনীহা। পুলিশের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই রাজ্যের পুলিশ বহু ক্ষেত্রেই এখনও মানবিক হইয়া উঠিতে পারে নাই। এক হেনস্থার প্রতিকার চাহিতে থানায় আসিয়া পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়িবার নজির অসংখ্য। পুলিশ ধরিলে ছত্রিশ ঘা— প্রবাদটি অকারণে দীর্ঘজীবী হয় নাই। সাধারণ ডায়েরি করিতে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে অসহযোগিতা এবং হয়রানির মুখে পড়িতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে ডায়েরি লইতেও অস্বীকার করা হয়। অভিযোগ শুনিবার পূর্বে চলে এলাকা লইয়া চুলচেরা বিচার। উপরোক্ত ঘটনাটিতেও ঠিক তেমনটাই ঘটিয়াছে। অবস্থা এমন, স্বয়ং পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিতে হইতেছে, যে কোনও ঘটনায় এলাকা না দেখিয়া সর্বাগ্রে অভিযোগ দায়ের করিবার। আইনশৃঙ্খলার রক্ষক যাঁহারা, তাঁহারা নিজ কর্তব্য পালনকেই প্রধান গুরুত্ব দেন, এলাকা বিচারকে নয়। প্রথমে অভিযোগ গ্রহণ করিয়া তাহার পর এলাকা বিচার করিলেও চলে। সভ্য দুনিয়ার এমনই দস্তুর।
তবে, পুলিশও সক্রিয় হয়। অভিযোগ পাইবার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও লয়। কিন্তু লক্ষ করিলে বুঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই তাহার পশ্চাতে থাকে উপরমহলের নির্দেশ অথবা জনমতের চাপ। প্রথমটি, বহু কালের রেওয়াজ। উঁচু তলা নড়িয়া বসিলে কম্পনের জের নীচ পর্যন্ত পৌঁছায়। দ্বিতীয়টি, হালে সংযোজিত। বিশেষত গত কয়েক বৎসরে সোশ্যাল মিডিয়া এই জনমত সংগঠিত করিবার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লইয়াছে। একের ক্ষীণ স্বর অনেকের স্বর হইয়া উঠিয়াছে এবং বিভিন্ন প্রান্ত হইতে তাহার প্রতিধ্বনিও শুনা যাইতেছে। জনমতের এই চাপ অগ্রাহ্য করিবার ক্ষমতা পুলিশ-প্রশাসনের নাই, বিভিন্ন ঘটনায় তাহা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। ইহা আশাপ্রদ। কিন্তু তাহার অর্থ ইহা নহে যে, পুলিশ নিজ কর্তব্য করিবে না। আর তুচ্ছতম ঘটনাতেও সেই কর্তব্য স্মরণ করাইতে জনমত সংগঠিত করিতে হইবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy