Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court

সাম্যের দিশা

২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (১৯৫৬) সংশোধন হইয়াছিল। তাহাতে স্পষ্ট হয়, যৌথ পরিবারের সকল সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যা সমানাধিকারী।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

কন্যা ও পুত্র, উভয়েই পিতামাতার সন্তান, অতএব তাহাদের অধিকার এক। এই সহজ সত্যটি কেন এত প্রশ্নের মুখে পড়িতেছে, তাহাই এক বৃহৎ প্রশ্ন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়াছে, তাহাতে মেয়েদের উত্তরাধিকার বিষয়ে সকল সংশয় ঘুচিবার কথা। কিন্তু ঘুচিবে কি? ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (১৯৫৬) সংশোধন হইয়াছিল। তাহাতে স্পষ্ট হয়, যৌথ পরিবারের সকল সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যা সমানাধিকারী। কিন্তু তাহার পরেও বিচিত্র সব সংশয় প্রকাশ করিল সমাজ। যথা, মেয়েদের সমানাধিকার কি ২০০৫ সালের সংশোধনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হইল? না কি তাহা অতীতেও ছিল, সংশোধন তাহাকে কেবল স্পষ্ট করিল? আদালতে এই প্রশ্ন তুলিয়া কেহ প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিলেন যে, ২০০৫ সালের পূর্বে প্রয়াত ব্যক্তিদের কন্যাসন্তানরা সংশোধিত আইনের বলে সম্পত্তি দাবি করিতে পারিবেন না। কেহ দাবি করিলেন, ২০০৫ সালের পূর্বে যে মেয়েদের জন্ম, তাঁহারা সংশোধিত আইন দেখাইয়া সম্পত্তি দাবি করিতে পারিবেন না। নানা সময়ে বিভিন্ন আদালত এই বিষয়ে নানা প্রকার রায় শুনাইয়াছে, তাহাতে বিভ্রান্তি বাড়িয়াছে। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির রায়, যৌথ সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার জন্মগত এবং চিরকালীন, পিতার মৃত্যুর দিন দিয়া তাহাকে খণ্ডিত করা চলিবে না। অর্থাৎ ২০০৫ সালের কোনও বিশেষ মাহাত্ম্য নাই।

যাহা নিতান্ত সাধারণ বুদ্ধির বিষয়, তাহা বুঝিতে এত দিন ধরিয়া এতগুলি আদালতের শরণাপন্ন হইতে হইল। তাহা আইনের বয়ানে অস্পষ্টতার জন্য হইতে পারে, আবার বুঝিতে অনিচ্ছাও হইতে পারে। মেয়েদের সমানাধিকার স্বীকার করিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারাজ, এবং কোনও না কোনও প্রকারে প্রশ্নটি ধামাচাপা দিতে উৎসুক। ২০০৫ সালে আইন সংশোধিত হইয়া থাকিলেও বহু রাজ্য সে বিষয়ে নিয়ম প্রণয়ন করিতে বিলম্ব করিয়াছে, এবং তাহার পরেও সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার হয় নাই। অধিকাংশ মেয়ে আজও এই ধারণার বশবর্তী যে, বিবাহে প্রদত্ত বরপণ এবং স্ত্রীধন পাইবার সঙ্গে সঙ্গেই পিতামাতা ও বৃহত্তর পরিবার হইতে তাঁহাদের প্রাপ্য শেষ হইয়াছে। যাঁহারা নিজের অধিকার সম্পর্কে জানেন, তাঁহারাও বৎসরের কয়েকটি দিন পিত্রালয়ে সাদরে গৃহীত হইবার আশায় পৈতৃক সম্পত্তি লইয়া বিবাদ এড়ান। যৌথ পরিবারের সম্পদে মেয়েদের অংশীদারিত্ব এমনই লোকাচার-বিরোধী এবং নিন্দনীয় বলিয়া প্রতিষ্ঠা করিয়াছে সমাজ, যে মেয়েরা ভয়ে-লজ্জায় নিজেদের ন্যায্য অধিকার দাবি করিতে সাহস পান না। তদুপরি বঞ্চনা নিশ্চিত করিতে বহু পিতা পুত্রদের নামে সম্পত্তি উইল করিয়া দিতেছেন, যাহাতে কন্যারা দাবি করিতে না পারেন।

পারিবারিক সম্পদ হইতে মেয়েদের এই বঞ্চনা জাতীয় চিত্রে ছাপ ফেলিয়াছে। কৃষিপ্রধান ভারতে কৃষিজমির অতি সামান্যই মেয়েদের মালিকানাধীন, বসতবাড়ির মালিকানাতেও বঞ্চনার ছাপ স্পষ্ট। গবেষণায় প্রমাণিত যে, বাড়ি ও জমির মালিকানা থাকিলে মেয়েদের উপর স্বামী-শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন কম হইয়া থাকে। অর্থাৎ মেয়েদের উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি কেবল অর্থপ্রাপ্তির নহে, নিরাপত্তার প্রশ্নও বটে। আইন সাম্যের জমি প্রস্তুত করিবে, সমাজ নানা প্রশ্নের বেড়া তুলিয়া তাহার পথ রোধ করিবে— এই প্রহসনের কি কোনও শেষ নাই?

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Government Hindu Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy