—ফাইল চিত্র।
বর্তমানে ইকনমিক সার্ভে বা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মূল উপযোগিতা, তাহা সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক রাজনৈতিক কৌশল বুঝিতে কাজে লাগে। গত কয়েক মাস যাবৎ নির্মলা সীতারামন হইতে পীযূষ গয়াল, রবিশঙ্কর প্রসাদ প্রমুখ যাহা করিয়া আসিতেছেন, এই বৎসরের অর্থনৈতিক সমীক্ষাও ঠিক সেই কাজটিই করিল— প্রাণপণ বুঝাইল, অর্থনীতি লইয়া দুশ্চিন্তার কারণ নাই। সমীক্ষার একটি অধ্যায় বরাদ্দ হইয়াছে ‘থালিনমিকস’-এর জন্য। যাহাকে ব্যাক অব দি এনভেলপ হিসাব বলা হয়, তাহার উদাহরণ দুনিয়ায় বিরল নহে— বিগ ম্যাক ইনডেক্স-এর কথা স্মরণে আসিতেই পারে। কিন্তু, যাহা সরকারের সংবৎসরের হিসাবের প্রামাণ্য নথি, সেখানে আন্দাজ-অনুমানের উপর ভরসা করিয়া সূচক নির্মাণ করিবার প্রয়োজন পড়িল কেন? অর্থনীতির নিকট সেই প্রশ্নের উত্তর দাবি করা অন্যায় হইবে, কারণ কাজটি রাজনীতির। দেশে মূল্যস্ফীতির প্রাবল্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠিতেছে। এই অবস্থায় সরকারকে যদি ঘোষণা করিতে হয় যে পূর্বের তুলনায় সাধারণ মানুষ ভাল আছেন, তাহার উপায় কী? ত্রৈরাশিকে হিসাব কষিতে হইবে, না কি ভগ্নাংশে— সেই তর্কের মীমাংসা করিয়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা জানাইয়া দিয়াছে, ভেজ এবং নন-ভেজ, উভয় গোত্রের থালিই পূর্বের তুলনায় মানুষের অধিকতর নাগালে আসিয়াছে। অস্যার্থ, বাজারে আনাজপাতি অগ্নিমূল্য হইলেও সকলই মায়া ভাবিয়া থালিনমিকস-এর মালা জপিতে হইবে। কৌতূহলী পাঠক এ-ক্ষণে ভাবিয়া দেখিতে পারেন, মোদীনমিকস হইতে থালিনমিকস— ইহা বাড়তির দিকে, না কি কমতির দিকে?
বলা হইয়াছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার কম থাকার ফলেই শিল্পোদ্যোগও যথেষ্ট বিকশিত হইতেছে না, ফলে শিক্ষায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। এই পরামর্শের যাথার্থ্য লইয়া কোনও প্রশ্ন নাই। কিন্তু কথা হইল, ফের চাকা আবিষ্কার করিয়া কী লাভ? আরও একটি উদাহরণ— রাজকোষে টান পড়িয়াছে বলিয়া সমীক্ষা পরামর্শ দিয়াছে, ভর্তুকির খাতে ব্যয় কমানো হউক। মধ্যবিত্তের জন্য অবান্তর ভর্তুকি কমানো উচিত, কমাইয়া সেই টাকা দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত— অর্থশাস্ত্রের ইতিহাস যত দিনের, কথাগুলিও প্রায় তত দিনেরই। যে কথায় সরকার এত দিন কান দেয় নাই, আজ সমীক্ষার পরামর্শ পাওয়ামাত্র সেই পথে চলিতে থাকিবে, রূপকথা হিসাবে ইহা সম্ভবত অচ্ছে দিনেরও বাড়া। তবে কি প্রসঙ্গটি নেহাতই সমীক্ষার পৃষ্ঠাসংখ্যা বাড়াইবার জন্য? না। মধ্যবিত্তের স্বার্থহানি করিতে চাহে না বলিয়াই যে সরকারের হাতে উন্নয়নখাতে খরচ করিবার মতো যথেষ্ট টাকা নাই, এই কথাটি বলিবার ক্ষেত্র প্রস্তুত হইল। যেমন, বিদ্যুতের চাহিদার হ্রাস-বৃদ্ধি দেখিয়া অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায় না বলিয়াই সমীক্ষার অভিমত। প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ, ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা গতি হারাইয়াছে। অপেক্ষাকৃত শিল্পোন্নত রাজ্যগুলিতেও বিদ্যুতের চাহিদা কমিতেছে। অর্থশাস্ত্রীদের সিংহভাগ এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন। শুধু বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়াছে বলিয়াই তাঁহারা উদ্বিগ্ন নহেন— বাজারে সামগ্রিক চাহিদার অভাব, ফলে উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতার সহিত বিদ্যুতের চাহিদার অভাব একেবারে খাপে খাপে মিলিয়া যাইতেছে বলিয়া তাঁহারা উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক সমীক্ষা এই কথাগুলিকে পাশ কাটাইবার পথ খুঁজিল, বলিলে অত্যুক্তি হইবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy