ভারতীয় সিনেমায় কাশ্মীরের বিবর্তন ঘটেছে সময়ের সঙ্গে, পরিস্থিতির সঙ্গে গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সত্যজিৎ রায় তাঁর একটি ফেলুদা-কাহিনির নাম রেখেছিলেন ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। কিন্তু এই মুহূর্তে ভূস্বর্গ কাশ্মীর অন্য কারণে ‘ভয়ঙ্কর’। যার মূলে রয়েছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নামের হিন্দি ছবি। বলিউডি ছবিতে উপদ্রুত কাশ্মীরের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। জঙ্গি বিচ্ছিন্নতাবাদের উত্থান, স্বাধীন কাশ্মীরের দাবি বা পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে বলিউডি জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন তোলা বারবার পর্দায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর গুরুত্ব অন্য কারণে। এই ছবিতে কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের স্বভূমিচ্যুত হওয়ার কাহিনিকে তুলে ধরা হয়েছে। জঙ্গি-কাশ্মীর বা পাক-হামলায় পর্যুদস্ত কাশ্মীরের থেকে এ ছবির বিষয়বস্তু একেবারেই আলাদা।
একটু নাড়াঘাঁটা করলেই দেখা যায়, বলিউডি ছবিতে কাশ্মীর সর্বদা একই রকম চরিত্রে উপস্থাপিত হয়নি। মুম্বই-ছবিতে (বা অন্য ভারতীয় ভাষার ছবিতে) কাশ্মীরের উপস্থাপন নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রবন্ধ লিখেছিলেন আখ্যানতত্ত্ববিদ রণবীর লাহিড়ি তাঁর ‘ক্র্যাকিং দ্য কোড: ফায়ারিং দ্য ক্যানন/ ক্যাননাইজিং দ্য পপুলার’ (২০০৯) গ্রন্থে ‘কাশ্মীর থ্রু বলিউড গেজ’ নামে। সেই প্রবন্ধে তিনি কালে কালে বলিউডি পর্দায় ভূস্বর্গের চরিত্র বদল দেখিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এনএল জালান নামে এক পরিচালক ‘কাশ্মীর হমারা হ্যায়’ নামে একটি ছবি তৈরি করেন। নামেই মালুম, কাশ্মীর সম্পর্কে সেই সময়ে ১৯৪৭-এর প্রথম ভারত-পাক যুদ্ধকেন্দ্রিক বিতর্ককে তিনি পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই কাশ্মীর এক জ্বলন্ত সমস্যা। ফলে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে যে সেই সমস্যা প্রতিফলিত হবেই, এটুকু ধরে নেওয়া যায়।
জালানের ছবি ছিল সদ্য-স্বাধীন দেশের নবগঠিত জাতীয়তাবাদকে বা নেহরু-জমানাকে উস্কে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত। যেখানে কাশ্মীরকে ভারতের এক ন্যায্য এবং অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে দেখানো জরুরি ছিল। কিন্তু সেই সময়ের পরে কাশ্মীর এক ভিন্ন চেহারায়, ভিন্নতর চরিত্রে বলিউডে অবতীর্ণ হতে শুরু করে।
১৯৬১ সালে মুক্তি পায় শাম্মি কপূর-সায়রা বানু অভিনীত ‘জংলি’। পটভূমিকা কাশ্মীর। কিন্তু সেই ছবিতে কাশ্মীরের জনজীবন, স্থানীয় মানুষের পূর্বাপর ইত্যাদি অনুপস্থিত। কাশ্মীর সেখানে শুধু নাট্যমঞ্চে টাঙানো এক ‘সিন’। শহর থেকে আগত বড়লোকের জংলি ছেলে স্থানীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে। তার পর সেই সময়কার বলিউডের চেনা ছক খানদান নিয়ে ঝঞ্ঝাট। শেষমেশ সেটিও মিটে যায়। শাম্মি গোটা ছবি জুড়ে লম্ফঝম্প করে আর মহম্মদ রফির গানে ঠোঁট নাড়িয়ে বক্স অফিসে কামাল করেন।
১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় শক্তি সামন্তের ছবি ‘কাশ্মীর কি কলি’। ছবির নামে কাশ্মীর। পটভূমিকাও কাশ্মীর। কিন্তু এই ছবিতেও কাশ্মীর থেকে যায় একটি মনোরম শ্যুটিং স্পট হিসেবে। রণবীর তাঁর নিবন্ধে দেখিয়েছেন, ভারতীয় পর্যটন দফতর তার প্রচার পুস্তিকায় কাশ্মীরের যে ছবি ব্যবহার করে পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা সমসময়ে শুরু করে, সেই একই কেতায় রুপোলি পর্দায় উপস্থাপিত হতে থাকে ‘ভূস্বর্গ’। তা নগরজীবনে বিধ্বস্ত নায়কের যৌন অবদমন থেকে মুক্তির ক্ষেত্র, তার ‘কলি’-রা নায়কের লিবিডোর উৎসমুখ খুলে দেয়। কিন্তু শ্রীনগরের শাল কারিগরের বুনে-চলা জীবনযন্ত্রণা সেখানে নেই। কাশ্মীর যেন মহাকাশ থেকে খসে পড়া এক টুকরো ল্যান্ডস্কেপ। তার অস্তিত্বের আর কোনও মাত্রা থাকতে পারে না। লক্ষ করার বিষয় এই যে, এই সব ছবিতে কাশ্মীরের মুসলমান জনগোষ্ঠী আশ্চর্যজনক ভাবে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। বলিউডের হিন্দুত্ব কাশ্মীরকে, তার ‘এথনিক’ অবস্থানকে নিজের মতো করে গড়ে নিচ্ছে।
এর পর সময় গড়িয়েছে। কাশ্মীরকে ঘিরে সঙ্ঘর্ষ ঘটেছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। কাশ্মীরে জঙ্গি আন্দোলন ঘনীভূত হয়েছে। কিন্তু বলিউড কাশ্মীরকে দেখার চোখ পাল্টায়নি। উদাহরণ হিসেবে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত অমিতাভ বচ্চন, রাখী ও বিনোদ মেহরা অভিনীত ‘বেমিসাল’ ছবির একটি গানের উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘কিতনি খুবসুরত ইয়ে তসবির হ্যায়/ মৌসম বেমিসাল বে-নজির হ্যায়/ ইয়ে কাশ্মীর হ্যায়, ইয়ে কাশ্মীর হ্যায়’। কাশ্মীর কেবল এক ‘তসবির’ মাত্র। প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনের প্রেক্ষাপটটুকু সে তৈরি করে, তার বেশি কিছু নয়।
এই ভাবে একের পর এক ছবিতে ডাল লেক, শিকারা, সুন্দর মুখের মেয়েরা, আপেল বাগিচা, পাহাড়, অরণ্য— সব একাকার হয়ে জন্ম দেয় এক ‘পিকচার পোস্টকার্ড’-এর, যার নাম কাশ্মীর। তার মধ্যেই কিন্তু একের পর এক জঙ্গি অভ্যুত্থান, কাশ্মীরি পণ্ডিত জনগোষ্ঠীর বিতাড়ণ ইত্যাদি সম্পন্ন হয়ে চলেছে। ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের একাংশ ভূমিচ্যুত হয়। বলিউড তখন সে ব্যাপারে নীরব থেকেছে।
১৯৯২ সালে মণিরত্নমের ‘রোজা’ মুক্তি পায়। সেই ছবিতেই কাশ্মীর তার ‘ভূস্বর্গ’ চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসে এবং কাশ্মীরের মনোরম প্রকৃতির অন্তরালে যে স্যাঁতসেঁতে গলি, দারিদ্র, যে কোনও রকমের নাগরিক সুবিধা-বঞ্চিত মানুষ থাকতে পারে, তা তুলে ধরা হয়। জঙ্গিরা ছবির নায়ককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। কাশ্মীর যেন এই প্রথম সেলুলয়েডে নিজের কণ্ঠে কথা বলে ওঠে। জঙ্গি নেতা লিয়াকত (পঙ্কজ কপূর) বলতে শুরু করে বঞ্চনার কাহিনি। কিন্তু মণিরত্নম কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মূলধারার জাতীয়তাবাদকেই জয়ী দেখান। অপহৃত নায়ক যখন বিচ্ছিন্নতাবাদীর হাতে জাতীয় পতাকার লাঞ্ছনাকে নিজের শরীর পেতে দিয়ে রক্ষা করে, তখন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূলধারার বাচনটিই উঠে আসে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, ‘রোজা’-ই সম্ভবত প্রথম ‘অন্ধকার’ কাশ্মীরকে সেলুলয়েডে তুলে এনেছিল।
বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘মিশন কাশ্মীর’ থেকে ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পর্যন্ত বিবিধ বর্ণালিতে উঠে আসতে থাকে কাশ্মীরের ‘অন্য’ গল্প। কখনও সেখানে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ‘বেপথু’ যুবক জঙ্গি হয়ে যায়, তো কখনও আবার ভারতীয় সেনার মহত্বকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু সর্বদাই কাশ্মীর এক ‘উপদ্রুত অঞ্চল’। এই ‘উপদ্রব’ ভারত নামক রাষ্ট্রের শান্তি ভঙ্গ করছে, এ কথাই বারবার উঠে এসেছে ছবিগুলির বয়ানে।
শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে বিশাল ভরদ্বাজের ছবি ‘হায়দর’ (২০১৪)-ও কাশ্মীরের পটভূমিকায় নির্মিত। এখানেও কিন্তু সেই জঙ্গি আন্দোলনগত জটিলতারই অবতারণা। তবে এ কথাও মানতে হবে যে, এই ছবিতে বিশাল জঙ্গি আন্দোলনকেই ‘প্রেক্ষিত’ হিসেবেই দেখিয়েছেন, কাশ্মীর এখানে নিছক ‘লোকেশন’-এর চেয়েও বেশি কিছু।
শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’-এ বর্ণিত রণ-রক্ত-সফলতা-নিষ্ফলতাকে ফুটিয়ে তুলতে গেলে আলো-আঁধারির সঙ্গে প্রয়োজন ছিল সাদা বরফে লেগে থাকা রক্তপ্রবাহের। সেই কাজটি করেছিল কাশ্মীর।
কিন্তু ক্রমে জাতীয়তাবাদের বাচনের হাওয়া মোরগটি অন্য দিকে মুখ ঘোরায়। হাওয়ার গতি দক্ষিণ থেকে চরম দক্ষিণের দিকে ঘুরতে থাকে। কাশ্মীরের সংখ্যাগুরু মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং ‘বিপথগামী’ যুবকদের জঙ্গিতে রূপান্তরণের গল্প থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়। শুরু হয় ‘উপদ্রুত’ কাশ্মীরের অন্য উপদ্রবকে দেখানো। কাশ্মীরের ভূমিচ্যুত পণ্ডিত সম্প্রদায়ের উপর আলো পড়তে শুরু করে ২০০৪ সাল থেকে। সেই বছর অশোক পণ্ডিতের পরিচালনায় ‘শীন’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়, যেখানে পুত্রহারা এক পণ্ডিতের কাহিনিকে তুলে ধরা হয়। যে তার ছেলের হত্যার পর ভূমিচ্যুত হতে বাধ্য হয়। কিন্তু ‘শীন’ ছবিটি কোনও রকম ভাবেই ব্যবসা করতে পারেনি।
২০২০-য় আবার পর্দায় উঠে আসেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। বিধু বিনোদ চোপড়ার পরিচালনায় ‘শিকারা’ ছবিটি কাশ্মীরের জঙ্গি অভ্যুত্থানের কালে এক পণ্ডিত যুগলের কাহিনি তুলে ধরে। সেই ছবিও বাণিজ্যসফল নয়। সমালোচকরাও ‘শিকারা’-কে খুব স্বাগত জানাননি। কারণ, সেই ছবিতে নাকি একপেশে ভাবে সমস্যাকে দেখানো হয়েছিল। এ ছবির রাজনৈতিক অবস্থানবিন্দুকে আলোচকরা কোনও মতেই স্পষ্ট বলে দেখাননি।
অতঃপর ২০২২। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং তার আকাশ্চুম্বী বাণিজ্যিক (তথা রাজনৈতিক) সাফল্য। এর আগে বিবেক বেশ কয়েকটি ছবি করেছেন। তার মধ্যে দু’টি রীতিমতো রাজনৈতিক। ২০১৬-এর ছবি ‘বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম’-এ বিবেক তুলে ধরেন দেশের এক ঝাঁ-চকচকে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে চলতে থাকা ছাত্র আন্দোলন, বামপন্থা, অতি-বামপন্থা এবং জঙ্গি বামপন্থার বিবিধ স্তরে খেলতে থাকা রংগুলিকে। জঙ্গলবাসী মাওবাদী জঙ্গি আর নাগরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, সেই সঙ্গে এনজিও-র পিছনে চলতে থাকা স্বার্থান্ধ রাজনীতিকে বিবেক তুলে ধরতে চান। কিন্তু সে ছবি তাঁকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেয়নি। তার অন্যতম কারণ, ছবিটির বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব। বিবেক যে ভাবে একটি বলয়ের সঙ্গে অন্য বলয়ের সংযোগসূত্রগুলিকে দেখিয়েছিলেন, সেগুলি কোনও ভাবেই শক্তিশালী বলে মনে হয়নি। বলার কথা এই যে, এ ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে ছিলেন অনুপম খের। যিনি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির এক বড় সমর্থক।
বিবেকের পরের রাজনৈতিক ছবিটি ছিল ‘দ্য তাসখেন্ত ফাইলস’। প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুরহস্য এই ছবির বিষয়বস্তু। মিঠুন চক্রবর্তী (এক ঘোষিত বিজেপি সদস্য) এই ছবিতে এমন এক ভূমিকায় অবতীর্ণ, যা আর এক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে মনে পড়ায়। এই ছবি অবশ্যম্ভাবী ভাবে লাল বাহাদুরের মৃত্যুরহস্যের সমাধান করতে পারেনি। দু’একটি ইঙ্গিত রেখেই ছবি ঘুরে যায় এক সাংবাদিকের রাজনৈতিক অভিষেকের দিকে।
বিবেকের সাম্প্রতিক ছবির বিষয় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের স্বভূমি থেকে উৎখাত এবং তাঁদের উপরে সঙ্ঘটিত অমানুষিক নির্যাতন, মায় গণহত্যা। এই ছবি যেন বিবেকের পূর্বতন দুই ছবিকে এক সূত্রে গেঁথে দিল। এই ছবিতে মিঠুন এবং অনুপম উভয়েই উপস্থিত। যে কাজটি ‘শীন’ বা ‘শিকারা’ করে দেখাতে পারেনি, বিবেক এই ছবিতে সেই কাজটি করে দেখালেন।
‘ধর্ম পরিবর্তন করো, নয়তো মরো’— এই স্লোগান দিয়ে শুরু হয় ছবি। শেষ হয় ভারতীয় সেনার ছদ্মবেশে জঙ্গিদের একতরফা গণহত্যায়। বলাই বাহুল্য এই ছবি দেশ জুড়ে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কেই তার চাঁদমারি বানিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন মহল থেকে উঠে আসছে এই ছবির বক্তব্য ‘উত্তর সত্য’ (পোস্ট ট্রুথ) কি না— এই প্রশ্ন। ও দিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ছবিটিকে করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে এই ছবি দেখার জন্য সরকারি কর্মচারিদের ছুটি মঞ্জুর হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণার এ হেন নজির বলিউড তার দীর্ঘ ইতিহাসে খুব একটা দেখেছে বলে মনে হয় না। কাশ্মীর এখানে দগদগে ঘায়ের মতো রক্তাক্ত। শুধু রক্তাক্তই নয়, এ ছবি তুলে এনেছে বিপুল ঘৃণা, প্রতিহিংসার দমচাপা প্রবাহকে। ১৯২৫ সালে সের্গেই আইজেনস্টাইনের তোলা ‘ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন’ যদি প্রোপাগান্ডা চলচ্চিত্রের প্রাথমিক উদাহরণ হয়ে থাকে, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সেই ঘরানার এক অনিবার্য পরিণতি। ১৯২৫-এর একনায়কের অধীনে চলে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ২০২২-এর ভারতে চরম দক্ষিণপন্থার নৈতিক ঢক্কানিনাদ কোথাও যেন একীভূত হয়ে যায়। কাশ্মীর আবার এক অছিলা মাত্র। পণ্ডিতরা এখানে কেবল ‘নির্যাতিত’-এর ভূমিকায়। আসল উদ্দেশ্য একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অবিমিশ্র ঘৃণার জাগরণ।
কোনও কিছুর সঙ্গে ‘ফাইল’ বা ‘নথি’ শব্দটি জুড়ে দিলে সত্যের এক চমৎকার ভান নির্মিত হয়। ‘দ্য তাসখেন্ত ফাইলস’ থেকে বিবেক কাজটি শুরু করেছেন। তাঁর আগামী ছবির নাম ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’। বোঝাই যাচ্ছে, একের পর এক ‘ফাইল’ নামাবেন তিনি এক কল্পিত মহাফেজখানা থেকে, যেখানে তাঁর সঙ্গী হবেন চরম দক্ষিণপন্থী সরকারের তকমাধারী অভিনেতারা। ‘ফাইল’-এর পর ‘ফাইল’ ক্রমাগত অর্ধসত্যকে, ছায়াময় তথ্যকে মান্যতা দিতে থাকবে। ইতিহাস জানায়, ক্রমাগত যদি কোনও বক্তব্যকে আউড়ে যাওয়া যায়, তখন সেটি নির্জলা মিথ্যে হলেও তাকে সত্য বলেই মনে হবে। এটি ফ্যাসিবাদের চেনা কৌশল। বিবেক কিন্তু কখনই ‘এনআরসি ফাইলস’ বা ‘গোধরা ফাইলস’ বানাবেন না। কারণ তাতে তাঁর কোনও ফায়দা নেই। কাশ্মীর গোল্লায় যাবে, সেখান থেকে উচ্ছিন্ন পণ্ডিতরা, একে-৪৭ হাতে তুলে নেওয়া মুসলমান যুবকেরা গোল্লায় যাবেন। শুধ বেঁচে থাকবে বলিউডি জাতীয়তাবাদ, যেখানে সরকারের পালে লাগা বাতাসই সত্য-মিথ্যার নির্ণায়ক। বাকি সবই গরল ভেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy