Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয়১

সেতু-যন্ত্রণা

সুপারিশ তো হইল। কিন্তু উত্তর কলিকাতার যান চলাচলের কী হইবে? প্রশ্নটি জরুরি, কারণ শ্যামবাজার হইতে বিটি রোড পৌঁছাইতে গেলে টালা সেতু ভিন্ন বিকল্প পথ অত্যন্ত কম। যাহা আছে, তাহাও সঙ্কীর্ণ এবং ইতিমধ্যেই যানজট-আক্রান্ত।

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

প্রয়োজন ছিল ২০০০ সালেই ‘ফাংশনালি অবসোলিট’, অর্থাৎ অচল ঘোষণা করিবার। তদানীন্তন বাম সরকার সেই ঘোষণা করে নাই। উপরন্তু, ২০০০ সালের পর হইতেই বন্ধ হইয়াছিল সেতুর কাঠামো পরীক্ষার কাজটিও। বাম সরকার তাহার পরও প্রায় এগারো বৎসর পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান তৃণমূল সরকারও দীর্ঘ আট বৎসর ধরিয়া ক্ষমতাসীন। অথচ, উত্তর কলিকাতার অন্যতম প্রধান সংযোগকারী টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথাটি কাহারও স্মরণে আসে নাই। যেমন স্মরণে আসে নাই, দক্ষিণ কলিকাতার বিজন সেতু, ঢাকুরিয়া সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলির নিয়মিত পরীক্ষা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের কথাও। গত বৎসর প্রায় এই সময় মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙিয়া না পড়িলে এই অতীব জরুরি কথাগুলি আদৌ স্মরণে আসিত কি না, সন্দেহ। কলিকাতাবাসীও হয়তো জানিতেন না, কী ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় লইয়া তাঁহারা প্রতি দিন শহরের সেতুগুলি পারাপার করিতেছেন। মাঝেরহাট সেতু ভাঙিল, সরকারি কর্তাদের টনক নড়িল, এবং একের পর এক সেতুর জরাজীর্ণ দশার চিত্র উদ্ঘাটিত হইতে লাগিল। টালা সেতু সেই তালিকারই সাম্প্রতিকতম সংযোজন। সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়া বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করিয়াছেন অবিলম্বে সেতুর উপর যান চলাচল বন্ধ করিবার। তাঁহাদের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে মাঝেরহাট বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি হইতে পারে।

সুপারিশ তো হইল। কিন্তু উত্তর কলিকাতার যান চলাচলের কী হইবে? প্রশ্নটি জরুরি, কারণ শ্যামবাজার হইতে বিটি রোড পৌঁছাইতে গেলে টালা সেতু ভিন্ন বিকল্প পথ অত্যন্ত কম। যাহা আছে, তাহাও সঙ্কীর্ণ এবং ইতিমধ্যেই যানজট-আক্রান্ত। এমতাবস্থায় সেতুটি সম্পূর্ণ বন্ধ হইলে যে বিপুল চাপ এই রাস্তাগুলিতে পড়িবে, তাহার পরিণতি ভাবিলেও হৃৎকম্প হয়। বস্তুত, টালা ব্রিজে ভারী যান চলাচল বন্ধ হইবার দিন হইতেই উত্তর কলিকাতার গতি স্তব্ধ হইয়াছে। এবং, উৎসব সমাগত। সেই কথা মাথায় রাখিয়াই রাজ্য সরকার বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ সম্পূর্ণ কার্যকর করে নাই। শুধুমাত্র বাস এবং লরি বন্ধ রাখিয়া ছোট গাড়িগুলিকে ছাড় দিয়াছে। কিন্তু তাহাতেও যান-যন্ত্রণা আটকানো যায় নাই। অবশ্যই উৎসব অপেক্ষা সেতুর নিরাপত্তা অধিকতর জরুরি। সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হইলে অবিলম্বে তাহার মেরামতিও প্রয়োজন। কিন্তু দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা শুরুর লগ্নে নাগরিকদের দুর্গতি কয়েক গুণ বাড়িত না, যদি সরকার পূর্বেই বিকল্প পরিকল্পনার কথা ভাবিত, যে সেতুগুলি ভাঙিলে শহরের একটা বৃহৎ অংশ বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িবার সম্ভাবনা, সেগুলির বিকল্প পথ তৈরি করিয়া রাখিত। দুর্ভাগ্য, পূর্ব-পরিকল্পনা এবং তদনুসারে কাজ— কোনওটিতেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন এবং বর্তমান সরকারের আগ্রহ নাই।

বিস্ময় আরও আছে। টালা ব্রিজের ন্যায় পুরাতন এবং দৃশ্যত জীর্ণ সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঠিক উৎসব মুহূর্তটিকেই বাছিয়া লওয়া হইল। সারা বৎসর সরকারি কর্তারা তবে কী করিতেছিলেন? স্বয়ং দেবীও বোধ হয় সেই উত্তর জানিবেন না। তবে, সেতু বন্ধের কারণে উৎসব অপেক্ষাও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হইবার কথা উত্তর কলিকাতার দৈনন্দিন জীবনের। যানজট ঠেলিয়া রোগীরা সময়ে চিকিৎসা পাইবেন না, সমস্যায় পড়িবেন নিত্যযাত্রীরা। তাঁহাদের দিকটি তো সরকারেরই দেখিবার কথা। নিয়মিত ব্যবধানে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হইলে যে তাহা জীর্ণ হইবে, দুর্ঘটনা ঘটিবে, সেতু বন্ধ হইলে যান চলাচলে সমস্যা হইবে এবং পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা করিতে হইবে— সবই সরকারের জানা। জানা বিষয়ে ফেল করিলে কী হয়, মাঝেরহাট সেতু তাহা দেখাইয়া দিয়াছে। সরকারের বোধোদয় তবুও দূর অস্ত্!

অন্য বিষয়গুলি:

Tala Bridge Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy