Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
CCTV

চোখের বাহিরে

ক্যামেরা হইবে ‘নাইট ভিশন’ প্রযুক্তির, এবং তাহাতে অডিয়ো রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

দুই বৎসর আগে দেশের সমস্ত থানায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাইবার নির্দেশ দিয়াছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশসীমাই সম্প্রতি প্রসারিত হইল। থানাগুলি তো বটেই, সিবিআই, ইডি, এনআইএ-র মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলিকেও দফতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাইবার সময়সীমা বাঁধিয়া দিল সর্বোচ্চ আদালত। নির্দিষ্ট করিয়া বলিল, কোন কোন স্থানে ক্যামেরা বসাইতে হইবে— প্রতিটি থানার প্রবেশ ও নির্গমনের পথে, প্রধান প্রবেশদ্বারে, অভ্যর্থনা-কক্ষে, হল-লবি-করিডরে, লক-আপ ও তাহার বাহিরে, বারান্দায়, শৌচাগারের বাহিরে, ইনস্পেক্টর বা ওসি-র ঘরে, সাব-ইনস্পেক্টর ও অফিসারদের ঘরে, ডিউটি অফিসারদের ঘরে, এমনকি থানার পিছনেও। ক্যামেরা হইবে ‘নাইট ভিশন’ প্রযুক্তির, এবং তাহাতে অডিয়ো রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকিতে হইবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ: রেকর্ডিং অন্তত আঠারো মাস সংরক্ষণ করা যায়, করিতে হইবে সেই বন্দোবস্তও। অর্থাৎ, সমস্ত ব্যবস্থাটি ঢালিয়া সাজাইতে হইবে।

কেন এই নির্দেশ, সর্বোচ্চ আদালত তাহাও বলিয়াছে: পুলিশি হেফাজতে অত্যাচার বন্ধ করিতে। সন্দেহভাজন, অভিযুক্ত বা সম্ভাব্য অপরাধীকে থানায় ডাকিয়া জেরা, বা গ্রেফতারির আগে-পরে পীড়ন ও অত্যাচারের ঘটনা ভারতে অগণিত। ক্যামেরা বসাইবার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক কালে পঞ্জাবে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর কথা উঠিয়াছে। জুন মাসে তামিলনাড়ুতে লকডাউন-বিধিভঙ্গের অপরাধে গ্রেফতার হওয়া পিতা-পুত্র দুই দিন পরে মারা গিয়াছিলেন, আঙুল উঠিয়াছিল পুলিশি অত্যাচারের দিকে। মানবাধিকার লইয়া কাজ করা এক সংস্থার রিপোর্ট বলিতেছে, গত বৎসর ভারতে ১৭৩১ জনের মৃত্যু হইয়াছে বিচারবিভাগীয় বা পুলিশি হেফাজতে। তিহাড় জেলে এক বন্দি জানাইয়াছিলেন, পুলিশ আধিকারিক তাঁহার পিঠের চামড়া পুড়াইয়া ‘ওঙ্কার’ চিহ্ন দাগাইয়া দিয়াছেন! অসমে অপহরণ-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া এক গর্ভবতী মহিলার পেটে পুলিশের পদাঘাতে তাঁহার গর্ভপাত হইয়া যায়, শিশুটি বাঁচে নাই। এই সমস্তই প্রমাণ, থানার ভিতরে, সমষ্টিদৃষ্টির আড়ালে যাহা চলে তাহা নিতান্ত অনচ্ছ। এই প্রক্রিয়াকেই স্বচ্ছ করিতে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার ও ভিডিয়ো-অডিয়ো সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়াছে আদালত। পুলিশের হাতে ক্ষমতা আছে, ক্ষমতা অপব্যবহারের অধিকার নাই। থানায় হিংস্র পীড়ন বন্ধ করিতে অতএব প্রযুক্তির বাধ্যবাধকতাই ভরসা।

উন্নত দেশগুলিতে পুলিশি পীড়ন নাই কেহ বলিবে না, কিন্তু অভিযুক্ত বা অপরাধীর অধিকারও সেখানে অনেকাংশে রক্ষিত হয়। অন্তত, প্রক্রিয়াটি বহুলাংশে স্বচ্ছ। পুলিশকে প্রতি পদে সকল তথ্য নথিবদ্ধ করিতে হয়, সাক্ষ্য-প্রমাণ হইতে জেরা বা তদন্তের খুঁটিনাটি গুছাইয়া রাখিবার নিয়ম। চলচ্চিত্রে যেমন দেখা যায়, সত্যই তেমনই পুরাতন মামলা বা তদন্তের যাবতীয় রেকর্ড সেখানে লিখিত বা যন্ত্রস্থ থাকে। তাহার পরেও এক-একটি জর্জ ফ্লয়েড-কাণ্ড ও তজ্জনিত আন্দোলন বুঝাইয়া দেয়, প্রকাশ্যেই হউক বা গোপনে, পুলিশি হিংস্রতার নির্দিষ্ট ব্যাকরণ আছে, ভূগোল নাই। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশের সমস্ত রাজ্য ও জেলা স্তরে স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়াছে, যাহারা সময়ে সময়ে থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করিবে। নজরদারের উপর নজরদারি বড় ভাল কথা নহে, কিন্তু আর কী-ই বা করা।

অন্য বিষয়গুলি:

CCTV Supreme Court Police Stations
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy