Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Covid 19

করোনা মোকাবিলায় জড়িয়ে রাষ্ট্রনায়কদের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিমারি সামাল দিতে সফল, এমন দাবি আমেরিকার মানুষ করছেন না। উল্টে নিজের সীমাবদ্ধতা ঢাকতে তিনি আজগুবি সব মন্তব্য করে বসেছেন।


করোনা মোকাবিলা কতটা সাফল্য দেবে এই বিশ্বনেতাদের, উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।

করোনা মোকাবিলা কতটা সাফল্য দেবে এই বিশ্বনেতাদের, উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।

শুভাশিস মৈত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫২
Share: Save:

চিত্র ১: অতিমারির মধ্যে অক্টোবর মাসে নিউজিল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেল। ৬৪ জন বাম-ঘেঁষা সাংসদকে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেন লেবার দলের জেসিন্ডা আরডার্ন। দুনিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এর প্রধান কারণ, করোনা মোকাবিলায় জেসিন্ডার সরকারের দক্ষতা।

চিত্র ২: লকডাউনের মধ্যে গত এপ্রিলে প্রথম যে দেশটিতে ভোট হয়েছিল, সেই দক্ষিণ কোরিয়াতেও শাসকদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতায় ফিরেছিল ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৩ আসন দখল করে। বলা হচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় সাফল্যের কারণেই।

চিত্র ৩: গত সপ্তাহে বলিভিয়ার ভোটে দেখা গেল ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থীদের সরিয়ে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীদের বিপুল ভাবে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এলেন সে দেশের মানুষ। মূলত করোনা মোকাবিলায় দক্ষিণপন্থীদের ব্যর্থতার জন্য।

উপরে উল্লিখিত তিনটি ছবি একটি ধারার প্রতি ইঙ্গিত করে— করোনা মোকাবিলায় সাফল্য বা ব্যর্থতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণ নির্বাচনের উপর প্রভাব ফেলছে। নভেম্বরের গোড়ায় আমেরিকায় নির্বাচনের আগে যে ইঙ্গিত আরও প্রাসঙ্গিক।

আরও পড়ুন: পুজোয় অনুদান, বীরভূম জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ধন্যবাদ দিদি আর ভাই কেষ্টকে

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিমারি সামাল দিতে সফল, এমন দাবি আমেরিকার মানুষ করছেন না। উল্টে নিজের সীমাবদ্ধতা ঢাকতে তিনি আজগুবি সব মন্তব্য করে বসেছেন। করোনাকালে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে জনপ্রিয়তা কমেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। জনপ্রিয়তা কমেছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনেরও। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে (পিউ রিসার্চ সেন্টার), আমেরিকা সম্পর্কে পৃথিবীর ৬৪ শতাংশ মানুষের ধারণা ‘ভালো’ (পজিটিভ)। কিন্তু ট্রাম্প সম্পর্কে ‘ভালো’ ধারণা মাত্র ২৯ শতাংশের। রাশিয়া এবং পুতিনের ক্ষেত্রে যা যথাক্রমে ৫৭ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ। আরও বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান সম্পর্কে ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন না। তবে লকডাউন পর্বে আমাদের দেশে আলাদা ভাবে করা পর পর দু’টি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল মোদীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘মোশন পোল’-এর সমীক্ষা বলেছিল, দেশের ৫৩ শতাংশ ভোটার ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মোদীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। ৮ মাস পর অগস্টে সেই সংস্থার সমীক্ষা বলেছে, দেশের ৬৬ শতাংশ ভোটার মোদীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান। ফলে ওই বিশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী মোদীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

কিন্তু এর একটা উল্টোদিকও আছে। ৬ মাস আগে করোনা নিয়ে জাতির উদ্দেশে মোদীর ভাষণ পিএমও চ্যানেলে দেখেছিলেন ৮৮ লক্ষ মানুষ। অথচ সম্প্রতি ‘মন কি বাত’ এবং পুজোর আগের সন্ধ্যায় তাঁর ভাষণে ‘ডিজলাইক’-এর বন্যা বইতে শুরু করেছে। যা ঠেকাতে ‘ডিজলাইক’ অপশনটাই তুলে নিতে হয়েছিল। বিজেপি-র ইউটিউব চ্যানেলে ওই ভাষণ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দেখেছেন মাত্রই ১ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ।

একবার ‘মন কি বাত’-এ পড়ুযাদের পরীক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলার সময় ‘ডিজলাইক’ বেড়ে যাওয়াকে অনেকে ভেবেছিলেন পড়ুয়াদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কিন্তু পুজোর আগের ভাষণে আবার একই ঘটনা আরও বড় মাত্রায় ঘটায় নানা প্রশ্ন উঠছে।

এর থেকে অবশ্য জনপ্রিয়তার ওঠা-পড়া বোঝা যায় না। কিন্তু একটা ইঙ্গিত বোঝা যায়— করোনার প্রভাব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিহারে ভোটের ফলপ্রকাশের পর তার একটা উত্তর মিলতে পারে।

অতিমারির দাপটে বিশ্বের শক্তিবিন্যাস প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি দুই সাংবাদিক মিকলথেইট এবং উল্ডরিজ ‘ওয়েক আপ কল’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। সেখানে তাঁরা অতীত ইতিহাস এবং তথ্য দিয়ে অতিমারি সামাল দিতে শক্তিধর এবং তুলনায় ছোট কিছু দেশের সাফল্য, ব্যর্থতা এবং তার প্রভাবে করোনা-পরবর্তী দুনিয়ার শক্তিবিন্যাসে সম্ভাব্য বদল নিয়ে আলোচনা করেছেন।

কোভিড মোকাবিলায় বিশ্বের শক্তিধর কিছু দেশের জনপ্রিয়তাবাদী (পপুলিস্ট) নেতার রিপোর্ট কার্ড কেমন, তা নিয়েই বিশ্বে ক্রমশ কৌতূহল তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাই প্রায় একমত যে ওই তালিকায় প্রথম সারিতে আছেন ট্রাম্প, পুতিন, জনসন, মোদী এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এই নেতারা মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারেন যে, তাঁরা ক্ষমতায় এসে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দেবেন। বেকারত্ব দূর করে দেবেন। সংবিধানের থেকেও এই নেতারা দেশপ্রেমকে বেশি গুরুত্ব দেন। দেশ আগে, বাকি সব পরে— এই কথা তাঁদের মুখে লেগেই থাকে।

কিন্তু তাঁরা দেশ চালাতে কতটা দক্ষ বা জটিল অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিদেশনীতি বুঝতে কতটা সক্ষম, কতটাই বা দূরদর্শী, এতদিন তার কোনও প্রমাণ বা পরীক্ষা ছিল না। অতিমারি পরিস্থিতিতে এই নেতারা সেই পরীক্ষার মুখে পড়েছেন। বিশ্বব্যাপী অতিমারির মুখে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, এই নেতাদের দেশ বেসামাল। অনেক ছোট ছোট দেশ যেখানে সফল ভাবে করোনার মোকাবিলা করেছে, সেখানে এই নেতারা কোভিড মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এমন নয়।

আরও পড়ুন: কুমারী মায়ের মুখে মাস্ক নেই, উদ্বেগের জবাবে ‘আধ্যাত্মিক’ যুক্তি বেলুড় মঠের

যে সূত্রে প্রশ্ন উঠছে, কোভিড-১৯ কি জনপ্রিয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়কদের সমর্থকদের মনে সংশয়ের জন্ম দিতে শুরু করেছে? এই অভূতপূর্ব অতিমারি কি বিশ্ব রাজনীতি এবং এই সব জনপ্রিয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়কের ভবিষ্যৎকে বড় পরিবর্তনের মুখে এনে দাঁড় করাচ্ছে? বলবে আমেরিকার নির্বাচন। বলবে ভারতে বিহারের নির্বাচন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy