Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শুনিবার পাঠ

ভিন্নতার এই শিক্ষা জরুরি এবং সময়োপযোগী। বিশেষত সাম্প্রতিক অসহিষ্ণুতার আবহে। অসহিষ্ণুতা ক্রমবর্ধমান। ভারতে, সারা পৃথিবীতেও। কারণ, মানুষ এক বিচিত্র বধিরতায় ভুগিতেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৯
Share: Save:

কলেজ শিখাইবে পাঠ। নিছক পাঠ্যক্রমের পাঠ নহে। উহা তো কলেজমাত্রই শিখাইয়া থাকে। কলিকাতার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজ পাঠ্যক্রমের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শিক্ষার কথা ভাবিতেছে। এক প্রকল্পের সূচনা করিতে চাহিতেছে। উদ্দেশ্য হইবে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্যের কথা শুনিবার, প্রান্তিক মানুষের সহমর্মী হইবার এবং ভিন্নতাকে সম্মান করিবার সুকুমার প্রবৃত্তিগুলি জাগ্রত করা। প্রকল্পটির সূচনা হইবে সমাজতত্ত্ব বিভাগের হাত ধরিয়া। কিন্তু অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও ইহাতে অংশ লইতে পারিবে। এবং, পাঠদানের জায়গাটিও শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের ঘেরাটোপ নহে। অংশগ্রহণকারীদের শহরের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পা রাখিতে হইবে। অর্থাৎ, ভিন্নতা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের সুযোগটি শুধুই তত্ত্বকথায় আবদ্ধ রাখা হইবে না। ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনেরও ব্যবস্থা করা হইবে। যথার্থ ভাবনা। প্রান্তকে না জানিলে, না চিনিলে ভিন্নতার স্বরূপটি কখনওই স্পষ্ট হইতে পারে না। শিক্ষাও অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায়।

ভিন্নতার এই শিক্ষা জরুরি এবং সময়োপযোগী। বিশেষত সাম্প্রতিক অসহিষ্ণুতার আবহে। অসহিষ্ণুতা ক্রমবর্ধমান। ভারতে, সারা পৃথিবীতেও। কারণ, মানুষ এক বিচিত্র বধিরতায় ভুগিতেছে। তাহার কর্ণে শুধু সেই কথাগুলিই প্রবেশাধিকার পায়, যে কথাগুলি তাহার পছন্দের ও একই মতাদর্শের মানুষের মুখ হইতে নিঃসৃত। এই সীমিত পরিসরের বাহিরে-থাকাদের কথার সামনে সে বধির হইয়া থাকে। না শুনিতে চাহে, না বুঝিতে। ফলে তৈরি হয় না সহমর্মিতাবোধ, জাগে না পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভাব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে সম্প্রতি দেখা গিয়াছে প্রত্যন্ত অঞ্চল হইতে আসা অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা সহপাঠীদের ব্যঙ্গের শিকার হইতেছে। কখনও গায়ের রং লইয়া, কখনও অন্য ধর্ম, জাতি লইয়া, কখনও দারিদ্রের কারণে, কখনও ভাষার দুর্বলতা লইয়া চলিতেছে সীমাহীন উপহাস, অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাবরই এক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই প্রবণতা বিরাজমান। নূতন হইল, বিশ্বায়িত ভারতে, পারস্পরিক যোগাযোগের উন্নততর মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও অপরের অনুভূতির প্রতি বধির হইয়া থাকিবার এই প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে।

ইহাকে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা ভাবিলে ভুল হইবে। বৃহদর্থে ইহা মানবজাতির সমস্যা। অতি সম্প্রতি এই সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় স্তম্ভে সদ্য নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদের গবেষণা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হইয়াছে, গণতন্ত্রের অন্যতম চরিত্র হইল ক্ষমতার সমীকরণে যাঁহাদের কণ্ঠস্বর অশ্রুত থাকিয়া যায়, তাঁহাদের কথা বিশেষ মনোযোগের সঙ্গে শুনিবার প্রয়োজনের কথা। দুর্ভাগ্য, সেই শুশ্রূষা, অর্থাৎ শুনিবার ইচ্ছাটি মানবজাতির মধ্য হইতে দ্রুত অন্তর্হিত হইতেছে। সঙ্গে অন্তর্হিত হইতেছে গণতান্ত্রিক পরিবেশও। একনায়কতন্ত্রের ধাঁচে দুর্বলের কণ্ঠরোধ করিতেছে ক্ষমতা। এই সর্বনাশকে রুখিতে হইলে সর্বপ্রথম শুনিবার অভ্যাসটি রপ্ত করিতে হইবে। শুধুমাত্র কলেজের প্রকল্পে অংশী হইলেই চলিবে না। নিজ ঘরেও তাহার চর্চা করিতে হইবে। সন্তানের সঙ্গেই সেই চর্চায় শামিল হইতে হইবে অভিভাবকদেরও। তবেই জন্ম লইবে সহমর্মিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার বোধ। এই বোধগুলি না থাকিলে সভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য।

অন্য বিষয়গুলি:

St. Xaviers College Kolkata Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy