বিশাখাপত্তনমের এই কারখানা থেকে গ্যাস লিক হয়। ছবি: পিটিআই
ভয়ানক দুর্ঘটনার পর বিশাখাপত্তনম এখন বিপর্যস্ত। করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশ এমনিতেই বিপন্ন ছিল। বিশাখাপত্তনমের সংবাদ আসিবার পর যেন সেই বিপন্নতা সীমাহীন ঠেকিতেছে। মৃত্যুর সংখ্যাই একমাত্র ভয়াবহ সংবাদ নহে। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ অসুস্থ হইয়া পড়িলেন তাঁহারা কবে সুস্থ হইবেন, আদৌ হইবেন কি না, এ সকলই গভীর আশঙ্কার বিষয়। পাশাপাশি, এই বিপর্যয়ের দুই দিনের মধ্যে তামিলনাড়ুতেও বয়লার বিস্ফোরণ ঘটিয়া গিয়াছে। ছত্তীসগঢ়ে বিষাক্ত গ্যাস লিকের ন্যায় আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, যেগুলি অভিঘাতে বিশাখাপত্তনমের তুল্য না হইলেও চরিত্রে সমগোত্রীয়। এতগুলি ঘটনা সন্দেহ জাগায়, ইহার সহিত লকডাউনের আচমকা কাজ বন্ধ করা এবং লকডাউনের শর্ত শিথিল হইবার সংবাদে হঠাৎ কাজ আরম্ভ করিবার কিছু সম্পর্ক আছে কি না। কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে রাতারাতি লকডাউন ঘোষণা করিল, এবং আকস্মিক ভাবে খুলিবার নির্দেশ দিল তাহাতে অনেকেই তেমন সংশয় প্রকাশ করিতেছেন। রাতারাতি সিদ্ধান্ত লইবার অভ্যাস মোদী সরকারের মজ্জাগত। নোটবন্দি সিদ্ধান্তও রাতারাতি আসিয়াছিল। লকডাউনও আসিল কয়েক ঘণ্টার নোটিসে। যন্ত্রকে বন্ধ করিতে যে সময় দেওয়া বিধেয়, তাহা দেওয়া গেল না। কারখানাগুলিকে ধাপে ধাপে কাজ চালু করিবার সময়ও দেওয়া গেল না। তাহাতেই কি বিপত্তি ঘটিল? আকস্মিক লকডাউনের বিপদের কথা প্রধানমন্ত্রীর জানা না-ই থাকিতে পারে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা তো জানেন। এত বড় একটি সিদ্ধান্তের আগে নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না লওয়া বড় মাপের অপরিণামদর্শিতা, দেশ কি এখন তাহারই ফল ভুগিতেছে?
বিশাখাপত্তনমের দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার তুল্য হইবে না। তবু, সেই ভয়াবহতার কথা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অতি তাৎপর্যপূর্ণ। ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা হইতে যখন মারণ গ্যাস লিক করিয়াছিল, তখন ভারতীয় দণ্ডবিধির কিছু ধারা ভিন্ন এই গোত্রের গাফিলতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করিবার মতো আইন ভারতে ছিল না। গত সাড়ে তিন দশকে একাধিক আইন রচিত হইয়াছে, ট্রাইবুনাল গঠিত হইয়াছে। কিন্তু, গাফিলতির ছবিটি পাল্টাইল কি? সংবাদে প্রকাশ, বিশাখাপত্তনমের কারখানাটির যথাযথ পরিবেশ-ছাড়পত্র ছিল না। এবং, সরকার সেই কথাটি অন্তত এক বৎসর পূর্বেই জানিত। তাহার পরও কারখানার কাজ যথাপূর্বম্ চলিতেছিল। প্রশ্ন উঠিতেছে, কারখানার নিকটবর্তী অঞ্চল যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, সেই কথাটি কি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হইয়াছিল? বিপদ ঘটিলে ঠিক কী কী করিতে হইবে, তাহার কোনও পূর্বপ্রস্তুতির ব্যবস্থা কি তাঁহাদের জন্য ছিল? আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সরাইয়া লইবার প্রস্তুতি ছিল? যে কারখানায় এমন বিপজ্জনক গ্যাস মজুত থাকে, তাহার তত্ত্বাবধানের জন্য যথেষ্ট লোক ছিল না কেন? প্রশ্নগুলি সহজ নহে, কিন্তু উত্তর বোধ করি জানা।
লকডাউনের অপরিণামদর্শিতা এবং শিল্পকারখানার নজরদারিতে এই সার্বিক গাফিলতি সম্ভবত একই সূত্রে বাঁধা। মনোভাবটি এক— ‘ও কিছু হইবে না’। ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির হিসাব অনুযায়ী, বিশাখাপত্তনমের পূর্বে সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে অন্তত ১৩০টি বড় মাপের রাসায়নিক দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহাতে প্রাণ হারাইয়াছেন ২৫৯ জন। স্পষ্টতই, তাহাতেও কাহারও হুঁশ ফিরে নাই। যাহাই ঘটুক, কর্তাদের কোনও শাস্তি হইবে না— এমন একটি ধারণা জোরদার বলিয়াই কি এত ব্যাপক গাফিলতি? ৩৬ বৎসরেও ইউনিয়ন কার্বাইডের মামলার সম্পূর্ণ ফয়সলা হয় নাই। ভারতীয় গণতন্ত্র লইয়া যত বৃহৎ ও মহৎ দাবি উঠুক না কেন, একের পর এক ঘটনা বুঝাইয়া দেয়, শ্রমিকদের ও সাধারণ মানুষের দুর্বিপাকগ্রস্ত হওয়াই এই দেশের তন্ত্র।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy