মায়ের সঙ্গে গৌরব।
সম্প্রতি মায়ের জন্য সুপাত্র চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের আকারে পোস্ট করেছিলেন চন্দননগরের বৌবাজার শীতলাতলার বাসিন্দা গৌরব অধিকারী। কারণ, বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের সংসারে সদস্য বলতে মা ও ছেলে। ছেলে গৌরব কাজে বেরিয়ে গেলে বাড়িতে মা সারাদিন একাই থাকেন। মায়ের এই একাকিত্ব কাটানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করেন তিনি। মায়ের প্রতি ছেলের এই উদ্যোগ একটা নজিরবিহীন ঘটনা। ছেলেমেয়েদের প্রতি মা-বাবার স্নেহ-ভালবাসা না থাকলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। মায়ের জন্য পাত্র খোঁজা এবং মায়ের কাছে সেই প্রস্তাব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট মনের জোর থাকা প্রয়োজন।
বিদেশে বর্ষীয়ান মানুষদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু আমাদের সমাজে এই ঘটনা দেখা যায় না বললেই চলে। বেশি বয়সে জীবনসঙ্গীর আরও বেশি প্রয়োজন। কারণ, সেই সময় ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত। কেউ হয়তো বাইরে থাকেন। নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বাবা মায়ের প্রতি কেজো কর্তব্যটুকু করা ছাড়া বাকি কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। হয়তো এক্ষেত্রে দোষটা পুরোপুরি তাঁদেরও নয়। তাঁরাও কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিরুপায়। কিন্তু বয়সকালেই অবসর বাড়ে। ক্রমেই বাইরের জগতের সঙ্গে ছিন্ন হয় সম্পর্ক। কমতে থাকে গুরুত্ব। ফলে বর্ষীয়ান মানুষগুলো ক্রমেই অসহায় হয়ে পড়েন। বাড়তে থাকে অভিমান। এখানেই আসে জীবনসঙ্গীর গুরুত্ব। পারষ্পরিক মান ভাঙানো বা মনের কথাটুকু শোনার মতো কেউ যদি পাশে থাকেন, বয়সকালে সেটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।
এই বিষয়টাই উপলব্ধি করেছেন গৌরব। তাই তাঁর মা বছর ৪৫ এর দোলাদেবীর একাকিত্ব কাটাতে তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। আজকের যুব সমাজ যে এইভাবে ভাবতে পেরেছেন, পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাকে সাধুবাদ জানাই। মায়ের প্রতি ছেলের ভালবাসার পাশাপাশি কর্তব্যবোধও সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। আজকাল বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংবেদনশীলতার পরিচয় মেলা দুষ্কর। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মা-বাবার প্রতি স্নেহ ভালবাসা তো দূর, নূন্যতম কর্তব্যটুকুও পালন করে না। আজকের যুব সমাজের কাছে গৌরবের পদক্ষেপ মায়ের প্রতি কর্তব্যের সুন্দর দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
গৌরবের ফেসবুক পোস্ট দেখে প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন এ হয়তো রসিকতা। কিন্তু অচিরেই বোঝা যায় তিনি যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করেই পোস্টটি দিয়েছেন। সবচেয়ে ভাল লাগল, যখন দেখা গেল অনেকেই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। গৌরবের পোস্টে সাড়াও মিলেছে বিপুলভাবে। এতেই পরিষ্কার সমাজের মনোভাব বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তন খুবই জরুরি। মানুষ বুঝেছেন, একা কেউই ভাল থাকতে পারেন না। দুটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি একে অপরের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তাতে আপত্তির কিছু নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy