নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রীর মূল্য বিচার করিবার অধিকার বা ক্ষমতা কোনওটিই পীযূষ গয়ালের নাই— আছে, তেমন প্রমাণ অন্তত এখনও পাওয়া যায় নাই। কাজেই, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্বন্ধে শ্রীগয়াল কী বলিলেন, সে বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করিবার প্রয়োজন পড়িত না, যদি না তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক জন মন্ত্রী হইতেন। প্রজ্ঞা তাঁহাকে কখনও যে গুরুত্বের অধিকারী করিত না, রাজনীতি তাহাই করিয়াছে। অতএব, শ্রীগয়ালকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া জরুরি যে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাত্ত্বিক গুরুত্ব খারিজ হইয়া যায় না। বস্তুত, এমন একটি কথা ভাবিতে এবং বলিতে কতখানি অশিক্ষা, সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতার প্রয়োজন পড়ে, তাহাই ভাবিবার মতো। শ্রীগয়াল অবশ্য বলিতে পারেন যে অবান্তর উক্তি তাঁহারা করিয়াই থাকেন। কিছু দিন পূর্বেই যেমন তিনি বলিয়াছিলেন, গণিতশাস্ত্র অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের কোনও উপকার করে নাই। যে কোনও প্রসঙ্গে অবান্তর কথা বলিতে, এবং তাঁহাদের রাজনীতির সহিত দ্বিমত পোষণ করা গুণিজন সম্বন্ধে ভদ্রতার যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন করিতে পীযূষবাবুর সহকর্মীরা ক্লান্তিহীন। এবং, সেই মন্তব্যে তাঁহাদের নিজেদের পদের সম্মানহানি হইতেছে কি না, সেই দ্বিধাও দৃশ্যত তাঁহাদের নাই। অভিজিৎ বিনায়ক প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতা রাহুল সিংহের বক্তব্য যতখানি নিম্নমানের, রাজ্যপালের পদে আসীন তথাগত রায়ের বক্তব্য ততখানিই কুরুচিপূর্ণ। অর্থনীতি বিষয়ে আইনমন্ত্রীও যে প্রলাপ বকেন, অর্থমন্ত্রীও সেই একই সুর ধরেন। তাঁহাদের কাহারও কথা লইয়াই মাথা ঘামাইবার প্রয়োজন পড়িত না— ভাবিবার মতো কথা বলিবার দোষ অধিকাংশ বিজেপি নেতারই নাই— কিন্তু, মুশকিল হইল, তাঁহারা অসীম ক্ষমতাবান। নির্বাচনী ফলাফল তাঁহাদের সেই ক্ষমতা দিয়াছে। তাঁহারা কিছু বলিলে বহু লোক সেই কথায় প্রভাবিত হন, তাহাকেই ধ্রুব সত্য মানিয়া বসেন। কাজেই, তাঁহাদের কথা লইয়াও আলোচনা করিতে হয়, গণতন্ত্রের এমনই দুর্ভাগ্য।
নির্মলা সীতারামন হইতে রাহুল সিংহ, পীযূষ গয়াল হইতে রবিশঙ্কর প্রসাদ— বিজেপির ছোট-বড় নেতারা প্রতিনিয়ত যাহা বলিয়া চলিতেছেন, তাহা কি নিতান্তই প্রলাপ? তাঁহাদের বৌদ্ধিক-জগতের অনন্ত শূন্যতার প্রতিধ্বনি? বিশ্বাস হয় না। প্রতিটি কথাই যে প্রত্যেকে ভাবিয়া বলিতেছেন, এমনও সম্ভবত নহে— কিন্তু, এই প্রলাপের মধ্যেও একটি নকশা আছে। সম্পূর্ণ অবান্তর কথার জাল বুনিয়া, কুযুক্তির অবতারণা করিয়া, রুচিকে স্বচ্ছ গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়া প্রতিপক্ষকে নিখাদ পরিহাসের পাত্র করিয়া তোলা। জনগণের চোখে তাঁহাকে এমনই হাস্যকর অস্তিত্বে পরিণত করা, যাহাতে তাঁহার যাবতীয় যুক্তি, সমালোচনার আর কোনও বৈধতা অবশিষ্ট না থাকে। রাহুল গাঁধী, মনমোহন সিংহ আদি প্রত্যেক বিরোধী নেতাই এই রাজনীতি-অতীত আক্রমণের শিকার হইয়াছেন। এবং, এই আক্রমণের ভগীরথ পীযূষ গয়াল বা রাহুল সিংহ নহেন। গত সাত-আট বৎসর যাবৎ বিরোধীদের মোকাবিলা করিবার ক্ষেত্রে ইহাই বিজেপির প্রধানতম অস্ত্র। বস্তুত, যে কোনও অস্বস্তিকর প্রশ্নকেই হাসির খোরাক বানাইয়া ফেলিতে পারিলে আলোচনাটি মূলত সেই হাসির প্রসঙ্গে সরিয়া যায়। কেহ হাসিয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়েন, অন্যরা এই আচরণের অন্যায্যতা বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু, মূল প্রশ্নটি হারাইয়া যায়। বেহাল অর্থনীতি প্রসঙ্গে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন মন্ত্রীর মুখে এতগুলি অর্থহীন, অবান্তর কথা নিছক সমাপতন হইতে পারে কি? বিজেপি নেতারাও সম্ভবত জানেন, প্রশ্নগুলি এড়াইয়া যাওয়ার আর কোনও পন্থা তাঁহাদের নিকট নাই। তাঁহাদের সুবিধা হইয়াছে— অর্থহীন কথা বলিতে সম্ভবত তাঁহাদের খুব একটা পরিশ্রম হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy