সুদের হার কমাইবার কথা ঘোষণা করিবার সময় শক্তিকান্ত দাস আর একটি কথা বলিয়াছেন— এই মুহূর্তে রাজস্ব নীতিকে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। অর্থাৎ, মনিটারি পলিসি বা আর্থিক নীতির নিরিখে তিনি যাহা করিবার করিয়াছেন, কিন্তু ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে অতিমন্দার সম্ভাবনা হইতে রক্ষা করিবার জন্য তাহাই যথেষ্ট নহে। ফিসক্যাল পলিসি বা রাজস্ব নীতির মাধ্যমে সরকারকে দায়িত্ব লইতে হইবে। নির্মলা সীতারামন যে এক লক্ষ সত্তর হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাই সরকারি দায়বদ্ধতার নমুনা হইলে ঘোর বিপদ। কেন, সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে বলা প্রয়োজন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হইবার পূর্বে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার মূল দুর্বলতা নগদের অভাব ছিল না, ছিল চাহিদার অভাব। ভাইরাসের ধাক্কায় তাহার উপর জোগানের অভাবও দেখা দিবে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। ফলে, এই সময়ে সুদের হার কমিলেই যে লগ্নিকারীরা টাকা ধার করিয়া ব্যবসায় ঢালিতে আরম্ভ করিবেন, সেই নিশ্চয়তা নাই। কিন্তু, একই সঙ্গে এই কথাটিও স্বীকার করা প্রয়োজন যে মহামারি-বিধ্বস্ত এই বাজার নিতান্ত অপরিচিত— তাহার চলন কী হইবে, তাহা অনুমান করাও দুষ্কর। কাজেই, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটি সুদের হার কমাইয়া বাজারের জন্য একটি সম্ভাব্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করিয়া রাখিল।
ব্যাঙ্ক জানাইয়াছে, সুদের হার কমাইবার ফলে যেন মূল্যস্ফীতি না ঘটে, সে দিকে কড়া নজর রাখা হইবে। প্রকৃতার্থে, এই মুহূর্তে কাজটি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নহে। ব্যাঙ্ক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সুদের হারের মাধ্যমে— মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দিলে সুদের হার বাড়াইয়া দেয়, এবং তাহার ফলে বাজারে নগদের জোগান কমে, মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়া আসে। সুদের হার এতখানি কমাইবার পরই অল্প দিনের মধ্যে ফের তাহা বাড়িবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কের হাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অস্ত্রটিই নাই। তাহা আছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। বিশেষত এই সময়ে, যখন মূল্যস্ফীতি ঘটিতে পারে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক পণ্যের বাজারেই— অন্যান্য পণ্যের কেনাবেচা এখন সম্পূর্ণ স্তব্ধ। খাদ্যপণ্য ইত্যাদি দেশে যথেষ্ট পরিমাণেই মজুত আছে। প্রয়োজন শুধু তাহার বণ্টনের ব্যবস্থাটি অব্যাহত রাখা। নজর রাখা, যাহাতে বাজারে কোনও ভাবেই এই পণ্যের দাম না বাড়ে। কাজটি একান্তই সরকারের। এবং, শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে নহে, কাজটি মানুষের স্বার্থেই করা প্রয়োজন।
অবশ্য, শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নহে, এই মুহূর্তে সরকারের বৃহত্তর কর্তব্য অর্থনীতিতে টাকার জোগান বাড়ানো। নির্মলা সীতারামন যে প্যাকেজটির কথা জানাইয়াছেন, তাহার ঘোষিত উদ্দেশ্য এই কাজটিই। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তিনি বা তাঁহারা কুমিরছানা দেখাইবার অভ্যাসটি ছাড়িতে পারিলেন না। এমনকি, এই ঘোর দুঃসময়েও নহে। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইনের ক্ষেত্রে যাহা করিয়াছিলেন, এই ক্ষেত্রেও ঠিক তাহাই করিলেন— বিভিন্ন খাতে সরকার যে খরচ করিয়াই থাকে, অথবা যেটুকু ব্যয়বৃদ্ধি পূর্বনির্ধারিত ছিল, সব কিছু জুড়িয়া তাহার সহিত সামান্য কিছু যোগ করিয়া তিনি গালভরা প্যাকেজ ঘোষণা করিলেন। এনআরইজিএ-র মজুরিবৃদ্ধি পূর্বনির্দিষ্ট। পিএম-কিসানের নগদ হস্তান্তরও বহু পূর্বেই ঘোষিত। জন ধন যোজনার অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের অ্যাকাউন্টে মাসে পাঁচশত টাকা বা পেনশনভোগী, বিধবা, শারীরিক ভাবে অক্ষমদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন মাসের মধ্যে এক হাজার টাকা রসিকতা হিসাবেও অতি নিষ্ঠুর। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নাই। আশঙ্কা হয়, তিনি বা তাঁহারা বিপদের গুরুত্বই বোঝেন নাই। অথবা, কে বলিতে পারে, নাগরিকের সহিত নিষ্ঠুর রসিকতার অভ্যাসটি ত্যাগ করা হয়তো বা তাঁহাদের পক্ষে অসম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy