বম্বে হাইকোর্ট। ফাইল চিত্র।
পেচক এক বার ঘোলা চোখে চারিদিকে চাহিয়াই ফের চোখ বুজিয়া ফেলিল। বলিল, নালিশ বাতলাও। কুমির কাঁদো কাঁদো মুখে বলিল, ধর্মাবতার হুজুর, ইহা বিস্ফোরণের মামলা। অতএব, প্রথমেই বুঝিতে হইবে, রাষ্ট্রদ্রোহ কাহাকে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা ডাকিলে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়। সিনেমা তৈরি করিলেও হয়, অবশ্য কেহ যদি সিনেমা তৈরির আগে ও পরে টুইট করিয়া সরকারের গুণকীর্তন করিতে পারে, তবে তাহার কানাডার নাগরিক হইয়াও দেশপ্রেমী হইতে বাধা নাই। কুমিরের কথা থামিবার পূর্বেই একটা শেয়াল শামলা মাথায় তড়াক করিয়া লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, কানাডা অতি চমৎকার জিনিস। এ প্লাস বি হোল স্কোয়্যারের মধ্যে টুএবি আগে ছিল না, কানাডাই খুঁজিয়া আনিয়া দিয়াছে। সে দিক হইতে অবশ্য ফ্রান্সও ভাল— যদি ইন্ডিয়া-ফ্রান্স না থাকিত, ‘ইনফ্রা’-কে কি চিনিত লোকে?
পেচক চোখ বুজিয়া ঘুমাইতেছিল। হঠাৎ রাগিয়া উঠিয়া বলিল, বিস্ফোরণই যদি হইবে, তবে সাক্ষীসাবুদ নাই কেন? সজারু নেড়ার দিকে চাহিয়া বলিল, ওই তো ওর হাতে সব দলিল আছে। বলিতেই কুমির নেড়ার হাত হইতে এক তাড়া কাগজ লইয়া পড়িতে আরম্ভ করিল, ‘শম্ভাজি ভিন্ডে আর মিলিন্দ একবোটের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন পুলিশ তাহাদের গ্রেফতার করিতে পারে নাই, কারণ তাহাদের সহিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যোগসূত্র অতি গভীর।’ সজারু তড়িঘড়ি বলিল, ইহা নহে, ইহা নহে— অন্য কথা বলিতে হইবে। কুমির পড়িতে আরম্ভ করিল, ‘কার্যত বিনা প্রমাণে গৌতম নওলখা, সুধা ভরদ্বাজ, ভারাভারা রাওদের গ্রেফতার হইয়াছিল।’ সজারু ফের কুমিরকে থামাইয়া দিল। তখন কুমির বলিল, ‘আচ্ছা, তবে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় প্রজ্ঞা ঠাকুরকে এনআইএ বেকসুর খালাস দিয়া দিয়াছে— ইহাও নহে? আচ্ছা তাহা হইলে দাঁড়াও দেখিতেছি, কাশ্মীর প্রসঙ্গে টুইট করিবার অপরাধে শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হইয়াছে— কী বলিলে, ইহাও নহে? তবে কি ব্রাহ্মণরা যে হেতু দ্বিজ, সর্ব ক্ষেত্রেই তাহাদের উচ্চ পদে অধিকার, এই কথাটি চলিবে?’ গোলমালে যখন প্রায় সবার ফাঁসির হুকুম হইয়া যায়, তখন কুমির একটি কাগজ টানিয়া বলিল, আসামির ঘর হইতে ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ পাওয়া গিয়াছে।
পেচক চোখ খুলিয়া বসিল। কী সর্বনাশ— অন্য দেশের যুদ্ধ লইয়া লেখা বই! সিডিশন! সিডিশন! এই বই ঘরে থাকে কেন, তাহার ব্যাখ্যা চাই। অবিলম্বে। পেচকের হুঙ্কারে উদো-বুধোরও ঘুম ছুটিয়া গেল। শ্লেট টানিয়া তাহারা হিসাব করিতে বসিল, তবে কি ‘আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ ঘরে রাখা নিরাপদতর হইবে? অথবা ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’, যাহাতে এ হেন রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাকিস্তানে পাঠাইবার সম্ভাবনা কত, জানা যাইবে? কাহার বই পড়া, বা ঘরে রাখা, নিরাপদ? বুধো বলিল, ‘এগ্জ়াম ওয়ারিয়র্স’ পড়িলে দোষ হইবে না, বলো? তাহা তো পরীক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। গেছোদাদা সেই বার তিব্বত যাওয়ার পথে কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়া গিয়াছিলেন, মনে আছে— কত লোক এটিএম-এর লাইনে দাঁড়াইয়া মারা পড়িল, কত লোকের চাকুরি গেল, আর গেছোদাদা সিয়াচেনে যাইতে যাইতে বলিয়া গেলেন, কোল্যাটেরাল ড্যামেজ? উদো বলিল, অন্য দেশের যুদ্ধ বলিয়াই গোল পাকিয়াছে। এই দেশের যুদ্ধের বই লইয়া সমস্যা নাই— ওই তো সেই বইখানা, যাহাতে এই দেশের নির্বাসিত রাজপুত্র সাগর ডিঙাইয়া অন্যের সোনার দেশ ছারখার করিয়া আসিল— সেই বইটি রাখিলে দেশদ্রোহ হইবে না। বুধো বলিল, পেচকের তো চোখে ব্যারাম, তাই সে বই পড়িতে পারে না— বইয়ের নামখানা গোলমেলে না হইলেই হইল। এই গোলমালে পেচক গম্ভীর হইয়া বলিল, ওই বইয়ের নাম আমি জানিতাম, হাতের লেখা খারাপ ছিল বলিয়া বুঝিতে পারি নাই। আমি এই বার রায় দিব। আসামি কই? অমনি সাইবার সেল ঝাঁপাইয়া পড়িয়া বলিল, ওই তো মিডিয়া দাঁড়াইয়া আছে, ওইটাই আসামি। ট্রোল আর্মিও ‘আসামি, আসামি’ বলিয়া খ্যাঁক খ্যাঁক করিয়া হাসিতে লাগিল। মিডিয়ার সাত দিন ফাঁসি আর তিন মাসের জেল হইয়া গেল।
এই অবধি পৌঁছাইয়া ঘুম ভাঙিয়া গেল। চোখে পড়িল, একটি বিড়াল বেড়ার উপর বসিয়া বসিয়া গোঁফে তা দিতেছিল, সে হঠাৎ খচ্মচ্ করিয়া নামিয়া পলাইয়া গেল, দেশবাসী হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল— যাক, তবে ইহা বাস্তব নহে, দুঃস্বপ্ন মাত্র।
যৎকিঞ্চিৎ
পাকিস্তানের এক মন্ত্রী সমাবেশে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কিঞ্চিৎ গলা চড়াতেই হাতে-ধরা মাইকটিতে ইলেকট্রিক শক লেগে একাকার কাণ্ড। মন্ত্রিমশাই যা হোক সামলে নিলেন। কিন্তু ফেসবুক-টুইটার হাহাহিহিতে বেসামাল। মোদীপ্রেমী ভারতীয়দের মন্তব্য ভেসে এল: ‘দেখ কেমন লাগে!’ ক’দিন আগে শাসক দলের কে যেন বলেছিলেন, বিরোধীরা বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মারক অস্ত্র’ হানছেন। এ বার পড়শি দেশ না আবার কেন্দ্রে শাসক দলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy