Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Rishi Sunak

কী করা যেতে পারে, তার হদিশ

শুধু স্বাস্থ্য নয়, বিলেতের অর্থনীতি-কে করোনা-সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে একাধিক সিদ্ধান্ত করেছেন ঋষি।

ইন্দ্রজিৎ রায়
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৫
Share: Save:

জনস্বাস্থ্য তো বটেই, করোনাভাইরাসের ধাক্কায় ভূপতিত দুনিয়াজোড়া অর্থনীতিও। অতিমন্দার আশঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে। কাজেই, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি নেতাদের এখন দেশের অর্থনীতি বাঁচাতেও লড়তে হচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতিকে বাঁচাতে দু’লক্ষ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভারতেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এক লক্ষ সত্তর হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোও সুদের হার কমাচ্ছে। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের সুদের হার কমে এখন মাত্র ০.১০%।

এই লড়াইয়ের কাজটা প্রথম শুরু করেন ঋষি সুনক (ছবি)। বরিস জনসনের মন্ত্রিসভায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ‘চ্যান্সেলর অব দি এক্সচেকার’, অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি। প্রসঙ্গত, তিনি ইনফোসিসের এন আর নারায়ণমূর্তি ও সুধা মূর্তির জামাই। ১১ মার্চ ঋষি যখন পার্লামেন্টে তাঁর জীবনের প্রথম বাজেট পেশ করলেন, বিলেতে করোনা তখনও যথেষ্ট ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। তবে, ভবিষ্যতের বিপদের আভাস মিলছিল। সত্যি কথা বলতে, সে দিন কোভিড-১৯’এর চেয়ে বড় বিপদ ঋষির সামনে ছিল। তবু, সব ভুলে ঋষি পেশ করলেন ‘করোনা-বাজেট’।

প্রথমেই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ বা এনএইচএস-র খাতে ঋষি প্রায় ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখে দিলেন— করোনা-প্রতিরোধে যত টাকা লাগে লাগুক, তা খরচ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। গত দুই দশক ধরেই সকলে এনএইচএস-র আর্থিক দুর্দশার কথা বলছেন। কোভিড-১৯ না এলেও এনএইচএস-র নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। সে কারণেই ঋষির বাজেট-বরাদ্দ আরও গুরুত্বপূর্ণ।

তার পরেও অনেকের সন্দেহ ছিল, এই বরাদ্দেও ‘অতি অল্প হইল’। আশঙ্কাটা নেহাত ভিত্তিহীন নয়— এনএইচএস আজ কোভিড-১৯ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতই বিলেতের ডাক্তার-নার্স-দেরও যেন ঢাল-তরোয়াল ছাড়াই যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তবু স্বীকার করতেই হবে, কোভিড-১৯ অতিমারি-র আকার ধারণ করার আগে ঋষি তাঁর নিজের কাজ ভাল ভাবেই সামলেছেন।

শুধু স্বাস্থ্য নয়, বিলেতের অর্থনীতি-কে করোনা-সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে একাধিক সিদ্ধান্ত করেছেন ঋষি। স্বনিযুক্ত কর্মীদের অসুস্থতার সময় সাহায্য করতে ‘এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যালাওয়েন্স’ নামক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। স্কটল্যান্ডের জন্য আলাদা করে ত্রিশ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছেন। বাজেটের পরেও ঋষি প্রায় প্রতি দিন বরিস জনসনের সঙ্গে করোনা-সংক্রান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে হাজিরা দিতেন; বিলেতের সরকার কী ভাবে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মীর দায়িত্ব নেবে, জানাতেন।

লকডাউনের ফলে দেশবিদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর প্রাণ ওষ্ঠাগত। করোনা মোকাবিলায় সরকারি ঋণ হিসেবে ঋষি এদের ৩৩০ বিলিয়ন পাউন্ড দিলেন। গত আর্থিক বছরে যে সব প্রতিষ্ঠানের আয় ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডের কম ছিল, তাদের এক বছর বিনা সুদে পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ড অবধি সরকারি ঋণের ব্যবস্থা করলেন। যুক্তরাজ্যের মধ্যে পিছিয়ে-পড়া দেশ বলে ওয়েলশ-র জন্য অতিরিক্ত ১.১ বিলিয়ন পাউন্ড ধার্য হল।

অসংগঠিত ক্ষেত্রে স্বনির্ভর, স্বনিযুক্ত কর্মীদের কাছে সরাসরি সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করেছেন ঋষি। বিলেতে ৫০ লক্ষের বেশি স্বনিযুক্ত কর্মী আছেন; কিছু ধনী স্বনিযুক্ত কর্মী বাদে বাকিদের জন্য প্রতি মাসে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করলেন। তাঁদের গত বছরের আয়করের হিসেব অনুযায়ী গড় মাসিক লাভের আশি শতাংশ— সর্বোচ্চ আড়াই হাজার পাউন্ড অবধি— জুন মাস থেকে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে।

ঋষি সুনক যে কাজটা করছেন, তাতে তাঁর নিজের দেশের সুবিধা হবে— বিশ্ব জুড়ে অতিমন্দা সামলানোর দায় স্বভাবতই তাঁর নেই। তবে, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ হলেও যেমন আমাদের গ্রামের হাটে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তেমনই বিলেত-আমেরিকার বাজার মুখ থুবড়ে পড়লে আমাদের মতো দেশের অর্থনীতির অবস্থা সঙ্গিন হয়, ২০০৮ সালের বাজারের ধস এই কথাটা বুঝিয়ে দিয়েছে। কোভিড-১৯’জনিত অতিমন্দার ধাক্কা আমরা শেষ অবধি সামলাতে পারব কি না, সেটা ভবিষ্যতের প্রশ্ন। কিন্তু, ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব দি এক্সচেকার হিসেবে ঋষি সুনকের ভূমিকার কথা দুটো কারণে আলাদা ভাবে স্বীকার করতে হবে। এক, তিনি নিজের দেশে ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেছেন; দুই, তিনি গোটা দুনিয়ার অর্থমন্ত্রীদের দেখিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ঠিক কী কী করা যেতে পারে।

কোন অর্থমন্ত্রী শিখবেন, আর কে শিখবেন না, সেটা অবশ্য তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

অর্থনীতি বিভাগ, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি

অন্য বিষয়গুলি:

Rishi Sunak Britain Pandemic Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy