Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Gangasagar Mela

বিকল্প

জনগণের আবেগকে তুচ্ছ করা ভোটের রাজনীতিতে সম্ভব নহে; এবং, তাহা কাঙ্ক্ষিতও নহে। কিন্তু, মানুষের চাওয়াকেই শেষ কথা বলিয়া ধরিয়া লওয়ারও কোনও কারণ নাই।

বঙ্গবাসী ময়দানে হয়েছে ‘ই-স্নান’-এর ব্যবস্থা। ফাইল চিত্র।

বঙ্গবাসী ময়দানে হয়েছে ‘ই-স্নান’-এর ব্যবস্থা। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০৯
Share: Save:

নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়িয়া গিয়াছে। প্রধান প্রতিপক্ষের দৌলতে সেই নির্বাচনের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হিন্দুত্ব। এই অবস্থায়, হিন্দুদের এক বিরাট অংশের নিকট যে স্নানের গুরুত্ব বিপুল, সেই গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির মেলার রাশ টানা রাজনৈতিক ভাবে একটি অতি বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত ছিল। মুখ্যমন্ত্রীও বিলক্ষণ জানিতেন, মেলা বন্ধ করিবার নির্দেশ দিলে বিরোধীরা তাঁহাকে বলিবেন ‘হিন্দু-বিরোধী’; এবং বিনা বাধায় মেলা চলিতে দিলে বলা হইবে ‘কোভিড-১৯ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন’। এই অবস্থায় তিনি যে সমাধানসূত্রটি বাহির করিয়াছেন, তাহাতে রাজনৈতিক কল্পনাশক্তির প্রমাণ আছে। গঙ্গাসাগরে স্নানের লাইভ ভিডিয়ো সম্প্রচার, সামান্য খরচের বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি সাগরের জল ও প্রসাদ পৌঁছাইয়া দেওয়া, অথবা কিছু নির্দিষ্ট স্থলে সাগরের জলে স্নানের ব্যবস্থা— ই-স্নান বস্তুটি অভিনব, সন্দেহ নাই। মেলা বন্ধ করিবার অপ্রিয় সিদ্ধান্তটিও করিতে হইল না, আবার মেলায় অবাধ জনসমাগমের ফলে কোভিডের চরম সংক্রমণের পথটিও বন্ধ করা গেল। সত্য হইল, গত এক বৎসরে দেশের কার্যত কোনও প্রশাসনই এমন বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারে নাই। রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীতে, অথবা রামনবমীর মেলা উপলক্ষে অযোধ্যায় প্রশাসন ভিড় জমিতে দিয়াছে। উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী জানাইয়াই দিয়াছিলেন যে, রামলালা রক্ষা করিবেন। পশ্চিমবঙ্গেও পূজা বা দীপাবলির সময় নিয়ন্ত্রণে কিছু শিথিলতা দেখা গিয়াছিল। কিন্তু, গঙ্গাসাগরের ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন সেই ভুল করে নাই।

বৃহত্তর অর্থে দেখিলে, ইহাই প্রশাসনের কাজ। জনগণের আবেগকে তুচ্ছ করা ভোটের রাজনীতিতে সম্ভব নহে; এবং, তাহা কাঙ্ক্ষিতও নহে। কিন্তু, মানুষের চাওয়াকেই শেষ কথা বলিয়া ধরিয়া লওয়ারও কোনও কারণ নাই। কী ভাবে জন-আবেগকে আহত না করিয়াও সমাজের, এবং জনগণের, পক্ষে কল্যাণকর কাজগুলি করিয়া যাওয়া যায়, কী ভাবে অপ্রিয় সিদ্ধান্তগুলিকেও সাধারণ-গ্রাহ্য পথে গ্রহণ করা যায়, তাহা সন্ধান করাই প্রশাসনের কাজ। তাহা আলোচনার মাধ্যমে হইতে পারে— গণতন্ত্রের প্রাণভ্রমরাটি আলোচনার মধ্যেই লুকাইয়া থাকে। আলোচনার অর্থ ইহা নহে যে, সরকারকে জনগণের সব কথাই মানিয়া লইতে হইবে। কিন্তু, কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আলোচনার মাধ্যমে মানুষের সম্মতি আদায়ের কাজটি অপরিহার্য। তাহাতে ব্যর্থ হইলে কোন স‌ঙ্কট উপস্থিত হয়, দিল্লির কৃষক-বিক্ষোভ তাহার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। অন্য দিকে, মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হইবে, এমন বিকল্প প্রস্তাব পেশ করাও প্রশাসনেরই কাজ। এমন সমাধানসূত্র, যাহা মানুষের আবেগকে সম্মান করিবে। তেমন বিকল্প পাওয়া গেলে মানুষের পক্ষেও সরকারের বাধ্যবাধকতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া অনেক সহজ হয়। এই সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করাই সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু, কাজটি দেশের কোনও সরকারই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে করে, তাহা বলিবার উপায় নাই। সেই কারণেই গঙ্গাসাগরে ই-স্নানের বন্দোবস্ত বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণ মানুষও জানেন, এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগরে জনসমাগমে সরকারের আপত্তি কেন। কিন্তু সেই আপত্তি যে হুকুমনামার মতো চাপাইয়া দেওয়া হয় নাই, বরং একটি বিকল্প ব্যবস্থা হইয়াছে, ইহা মানুষকে বলিবে, সরকার তাঁহাদের আবেগকে সম্মান করে। এই কথাগুলির গুরুত্ব অতুলনীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Gangasagar Mela Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy