Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কাহার পথ

যে সংস্থা চুক্তির শর্ত মানে নাই বলিয়া এতগুলি প্রাণ বিপন্ন হইল, তাহার চেয়ারম্যান-সহ অন্যান্য শীর্ষ কর্তারা কেন শাস্তি পাইবেন না?

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

রাস্তায় গর্তের জন্য দুর্ঘটনায় ভারতে প্রতি দিন গড়ে দশ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন প্রায় সত্তর জন। কিন্তু নাগরিক অসহায়। তাহাদের অভিজ্ঞতা বলে যে নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত, পুরকর্তা উদাসীন, ঠিকাদার দায়িত্ব এড়াইতে পারদর্শী। তাঁহাদের নিকট পৌঁছাইবার উপায় নাই। নিষ্ফল ক্ষোভ পুষিয়া রাখা এবং অবস্থাবিশেষে পথ অবরোধ ইত্যাদি করা ভিন্ন সাধারণ মানুষের আর কীই বা করিবার আছে? সম্প্রতি রাজস্থানের এক ব্যক্তি ব্যতিক্রম হইলেন। তিনি এক বেসরকারি পথনির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করিয়াছেন। জীবনের ঝুঁকি এবং মারাত্মক আঘাতের কারণ সৃষ্টি করিবার জন্য ওই সংস্থার শীর্ষকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা করিয়াছে পুলিশ। যাতায়াতের পথে বিপজ্জনক বাধা তৈরি করিবার ধারাও যুক্ত হইয়াছে। দীনেশ কুমার নামে ওই ব্যক্তির যুক্তি, ওই সংস্থাটি বুঁদি হইতে কোটা যাইবার জাতীয় সড়ক নির্মাণ করিয়াছে, নিয়মিত পথকরও আদায় করিতেছে। অথচ রাস্তাটি গর্তসঙ্কুল। জল জমিয়া থাকায় গর্তগুলি কোথায়, কত গভীর, বুঝিবার উপায় নাই। রক্ষণাবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত সংস্থাটি গর্ত ভরাট করে নাই, কোনও সতর্কবার্তাও রাখে নাই। ফলে স্ত্রী-সন্তানসহ মোটরবাইক-আরোহী দীনেশ গর্তে পড়িয়া যান। যে সংস্থা চুক্তির শর্ত মানে নাই বলিয়া এতগুলি প্রাণ বিপন্ন হইল, তাহার চেয়ারম্যান-সহ অন্যান্য শীর্ষ কর্তারা কেন শাস্তি পাইবেন না?

নাগরিকের প্রাণের সুরক্ষা রাষ্ট্রের কর্তব্য। তাহার করেই রাস্তা নির্মিত হয়, অতএব ক্রেতার অধিকারের দৃষ্টিতেও যথাযথ পরিষেবা পাইবার অধিকারী সকল নাগরিক। অথচ, কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের সহিত ঠিকাদারদের সম্পর্ক অতিশয় ‘ঘনিষ্ঠ’, ফলে ঠিকাদার নির্ভয়ে কর্তব্যে অবহেলা করিতেছেন। নবনির্মিত রাস্তারও এমনই হাল যে তাহাতে প্রাণ হাতে করিয়া চলিতে হয়। এমন রাস্তায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির বিপুল সম্ভাবনাও কর্তাদের বিচলিত করে না। নেতাদের বিচারে দেশবাসীর জীবনের মূল্য সম্ভবত সামান্যই। এই তাচ্ছিল্য সব শহরেই প্রধান সড়কগুলিতে দৃশ্যমান। শুধু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি নহে, তাচ্ছিল্যের আরও উপকরণ আছে। সম্প্রতি চেন্নাইয়ে শাসক দলের এক নেতা স্বীয় পুত্রের বিবাহ-সংবাদের অবৈধ ‘হোর্ডিং’ লাগাইয়াছিলেন রাস্তার বিভাজিকায়। বাইক-আরোহী এক তরুণীর উপর তাহা পড়িতে তিনি ভূপতিত এবং পশ্চাতের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হন। কলিকাতাতেও ‘কাটআউট’ সংস্কৃতি আমদানি হইয়াছে। বিপদ কি দূরে থাকিতে পারে?

আজ পথে নামিলে বিভ্রম হয়, রাস্তার উদ্দেশ্য বুঝি রাজনৈতিক প্রচার এবং বাণিজ্যিক বিপণন। যাতায়াত তাহার বাড়তি সুবিধা মাত্র। খানাখন্দে অগণিত রাস্তা বিপজ্জনক। অসংখ্য বিজ্ঞাপন পথচারী ও চালকদের দৃষ্টি অবরুদ্ধ করিতেছে। কখনও মণ্ডপ নির্মাণের সামগ্রী, কখনও ইমারতি দ্রব্য রাস্তা দখল করিয়াছে। উপরন্তু গোরক্ষকদের প্রতাপে বহু শহরে অনাথ গবাদি পশু পথে পথে ঘুরিতেছে। তাহাদের সহিত সংঘর্ষে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়িতেছে। এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদার যে যাত্রাকে নিরাপদ করিতে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হইবে না, তাহাতে আশ্চর্য কী? দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি হইলে ভাল। আক্ষেপ, প্রশাসনকে তাহার কর্তব্য স্মরণ করাইতে ভারক্লান্ত আদালতের দ্বারস্থ হইতে হইল।

অন্য বিষয়গুলি:

Potholes Rajasthan Road Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy