Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ধর্মাবরণ

গত কুড়ি বৎসরে এই ধরনের অভিযোগ— গোটা বিশ্ব জুড়িয়াই— এত অধিক সংখ্যায় শুনা গিয়াছে যে প্রতিকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পোপ ফ্রান্সিস পদে আসীন হওয়া ইস্তক ক্যাথলিক চার্চের ভিতর বিমুক্ততার সুপবন বহিয়া গিয়াছে। সম্প্রতি তাহার আরও একটি উদাহরণ মিলিল। পোপ ঘোষণা করিলেন, অতঃপর চার্চের অভ্যন্তরে যৌন হেনস্থা বা নির্যাতনের ঘটনাকে পন্টিফিক্যাল সিক্রেসি বা যাজকীয় গোপনীয়তায় ধামাচাপা দেওয়া হইবে না। তেমন ঘটনাকে নাগরিক আইনের এক্তিয়ারে আনা হইবে। উক্ত নিগড়ের কল্যাণেই বহু নাগরিক-আইনের আওতার বাহিরে থাকিবার সুযোগ উপভোগ করে ক্যাথলিক চার্চ। এবং অন্তরালের বর্মেই বহু অসদাচরণ ঢাকা পড়ে কিংবা সেই ভরসাতেই বহু দুষ্কর্ম হয় বলিয়া দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। ইতিপূর্বে চার্চের অন্দরে বদল আনিবার প্রয়াসে পোপ ফ্রান্সিস প্রকাশ্য তর্ককে স্বাগত জানাইয়াছেন, আধুনিক পরিবারের সঙ্কট লইয়া মাথা ঘামাইয়াছেন, এমনকি ধর্মীয় আচারও বদলাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। তবে নাবালক/নাবালিকাদের উপর যৌন হেনস্থার ঘটনায় গোপনীয়তার বর্মের সুরক্ষা প্রত্যাহারের ঘোষণাটি আরও বৈপ্লবিক, কেননা চার্চের কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠিলে আইনানুগ পদক্ষেপ করিতে রাষ্ট্রের আর বাধা থাকিল না, নির্যাতিত/নির্যাতিতারও বাক্‌স্বাধীনতা মিলিল।

গত কুড়ি বৎসরে এই ধরনের অভিযোগ— গোটা বিশ্ব জুড়িয়াই— এত অধিক সংখ্যায় শুনা গিয়াছে যে প্রতিকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেবল নাগরিক সমাজ নহে, গির্জার অন্দরেও প্রতিকারের দাবি জোরালো হইতেছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাটিকান সিটিতে এক সম্মেলনে একাধিক ধর্মীয় নেতা এর প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করিয়াছিলেন। তাঁহাদের যুক্তি— যে হেতু গোপনীয়তার অজুহাতে অন্যায়কারীর পার পাইবার সুযোগ আছে, তাই অন্যায় ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। গত দুই দশকে ভারতেও বহু বার অনুরূপ অভিযোগ উঠিয়াছে। অতএব, যাজকদের যদি অবশিষ্ট নাগরিকদের ন্যায় গণ্য করা না হয়, তাহা হইলে ইহা ঠেকাইবার উপায় নাই। পোপ ফ্রান্সিসের সিদ্ধান্ত, কেবল যৌন হেনস্থা নহে, শিশু পর্নোগ্রাফি রাখিবার অভিযোগেও জ়িরো টলারেন্স নীতি লইবে চার্চ— এ-হেন অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনও ফাঁক থাকিবে না।

ধর্ম সমাজবিচ্যুত বিষয় নহে। বিশেষত, কোনও ধর্ম যখন গড়িয়া উঠে, তখন তাহার মূল্যবোধগুলি গৃহীত হয় সমাজ হইতেই। কিন্তু, কালের গতিতে সমাজের মূল্যবোধ বিবর্তিত হইতে থাকিলেও বহু ক্ষেত্রেই বহিরঙ্গের দুর্ভেদ্য আবরণের কারণে সেই পরিবর্তনের হাওয়া ধর্মের এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পৌঁছাইতে পারে না। কেহ বলিতে পারেন, বিবিধ কায়েমি স্বার্থও সেই পরিবর্তনের পথ রোধ করিয়া থাকে। সেই বাধা ভাঙিয়া সংস্কারের পথে হাঁটাই সময়ের দাবি। এবং, সেই সংস্কারের দাবি যদি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তর হইতে আসে, তবে তাহাই সর্বাপেক্ষা কাম্য। পোপ ফ্রান্সিস সেই দাবিটি পূরণ করিলেন। তিনি বহু অর্থেই ব্যতিক্রমী— সেই কারণেই হয়তো তাঁহার পক্ষে সময়ের দাবিটি বোঝা এবং তাহাতে সাড়া দেওয়ার কাজটি সহজতর হইয়াছে। কিন্তু, এই সংবেদনশীলতার দাবিটি শুধু তাঁহার দ্বারে আসিয়াই ফুরাইয়া যায় না। ধর্মের সহিত সমাজের সম্পর্কের যে বহুস্তরীয় বিবিধতা, তাহাকে উপলব্ধি করিবার কাজটি সব ধর্মেরই।

অন্য বিষয়গুলি:

Pontifical Secrecy Pope Francis Sexual Abuse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy