Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

যৌন হিংসা এক বড় ব্যাধি

ধর্ষকদের রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভিযুক্তরা শাসক দলের কর্মী সমর্থক হলে পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণে গা করছে না।

মজিবুর রহমান
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৮ ০০:০৪
Share: Save:

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত যৌন হিংসার খবর সংবাদের শিরোনামে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। নারী, নাবালিকা ও শিশুকন্যার উপর পাশবিক যৌন অত্যাচার আগে ঘটেনি, ব্যাপারটা নিশ্চয়ই তেমন নয়। তবে ধর্ষণকাণ্ডের প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে এখন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আগে রাজনীতি ও ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই ধর্ষককে ধিক্কার জানাতেন এবং তার কঠোর শাস্তির দাবি করতেন। কিন্তু কিছু দিন ধরে কোনও কোনও দলের নেতানেত্রী এবং সাংসদ-বিধায়ক-মন্ত্রীরা ধর্ষণের ঘটনা ও ধর্ষককে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। ধর্ষকদের রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভিযুক্তরা শাসক দলের কর্মী সমর্থক হলে পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহণে গা করছে না। আবার ধর্ষক ও ধর্ষিতা ভিন্ন ধর্মের মানুষ হলে সেটিকে সাম্প্রদায়িক আকার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, কখনও কখনও নির্যাতিতার পোশাক-পরিচ্ছদ ও চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। (রাতে) একা বেরোনো ঠিক হয়নি কিংবা আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, বলে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। এতে শ্লীলতাহানি অথবা ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা পরোক্ষে প্রশ্রয় পাচ্ছে। তাদের যতটা তিরস্কৃত, ধিক্কৃত ও দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া দরকার ততটা হচ্ছে না। এ জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত বলাৎকারকে আর বোধ হয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা ঠিক হবে না। সরকারি পরিসংখ্যানও প্রমাণ করছে, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে নারী, নাবালিকা ও শিশুদের ওপর যৌন আক্রমণ বাড়ছে বই কমছে না।

বলাৎকারকে সাধারণত কিছু বিকৃতমনস্ক মানুষের বলপূর্বক যৌনাচার হিসেবে দেখা হয়। যৌন বিষয়ে একদম জ্ঞানশূন্য শিশু, যাদের সামান্য প্রতিরোধ করার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই, তারাও এর শিকার হচ্ছে। আবার বিগতযৌবন মহিলারাও ছাড় পাচ্ছেন না। যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে মারা যাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ধর্ষিতাকে প্রাণেও শেষ করে দিচ্ছে। ধর্ষণকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরিস্থিতিতেও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। নিঃসঙ্গ কিংবা অসহায় কন্যাশিশু, কিশোরী কিংবা যুবতীর আকস্মিক ভাবে যৌন আক্রমণের শিকার হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে পূর্বপরিকল্পিত যৌন অপরাধের ঘটনা, যার সংখ্যা সম্প্রতি বাড়ছে বলে মনে হয়।

কোনও সন্দেহ নেই, ধর্ষণ মানবসভ্যতার লজ্জা। আর আমাদের দেশ ধর্ষণের ঘটনার জন্য গোটা বিশ্বেই নিন্দিত হচ্ছে। ভারতে মহিলা ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নেই বলে প্রচার হচ্ছে। এই বদনাম থেকে মুক্তি পেতে যৌন সহিংস বন্ধ করার জন্য কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ করা দরকার। সবচেয়ে আগে বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটাতে হবে। যৌন অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত না করলে বিলম্বে প্রদান করা কঠোর শাস্তিও সমাজে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। ধর্ষণ করে খুন করার অপরাধে, দীর্ঘদিন মামলা চলার পর, অপরাধীর প্রাণদণ্ডের দৃষ্টান্তও আমাদের দেশে রয়েছে। কিন্তু শাস্তি প্রদানে অনেক বিলম্ব হওয়ায় তা অপরাধের প্রবণতা কমাতে পারেনি। কিন্তু ব্যাপারটা হওয়া উচিত, সম্ভাব্য শাস্তির কথা স্মরণ করে কেউ যেন যৌন আক্রমণ করতেই সাহস না করে। অপরাধ, বিচার ও শাস্তি কার্যকর, এই পুরো ব্যাপারটা স্বল্প সময় কালের মধ্যে সম্পন্ন হলেই পূর্বোক্ত প্রভাব পড়া সম্ভব। প্রাথমিক স্তরে যৌন অত্যাচারের অভিযোগ নথিভুক্ত করে প্রমাণাদি সংগ্ৰহ করার কাজে পুলিশ প্রশাসনকে তৎপরতা দেখাতে হবে। বলাৎকারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সামাজিক অপরাধ ও আইনের ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত। বলাৎকার বা যে কোনও যৌন আক্রমণকে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত অন্যায় ও রুচি-সংস্কৃতি বিরোধী। আবার নারী ও শিশুর প্রতি হিংসা সংক্রান্ত পকসো আইন চালু থাকলেও তার প্রয়োগ কতখানি হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Political interference Social crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy