Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আমাদের জড়িয়ে ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

মানুষ কী ভাবে শেখে? সে তো জন্মের সময় সব শিখে আসে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম ঘটনা, পড়াশোনা, পরিশ্রম, ভুলভ্রান্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। যন্ত্রকেও একই ভাবে শেখানো সম্ভব। লিখছেন রাকা চৌধুরী এবং ঋকসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় এই সময়ে দাঁড়িয়ে সারা পৃথিবীতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

যন্ত্রের কেতাবি সংজ্ঞা দিতে না পারায় ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ র‌্যাঞ্চোকে ক্লাস থেকে বের করে দেন শিক্ষক। সে বলেছিল যা মানুষের পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে তাই যন্ত্র। কর্মক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা আমরা জানি। কিন্তু বুদ্ধির? পৃথিবীর সব থেকে বুদ্ধিমান মানুষের বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা কম নেই। মস্তিস্কের কত শতাংশ আমরা ব্যবহার করছি, কতটুকুই বা করতে পারি তা নিয়ে চর্চা বিস্তর। পাশাপাশি, ভাবনা হচ্ছে যন্ত্রদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে এদের মধ্যে বুদ্ধি যোগ করে দিলে কেমন হয়? মানে ধরুন, আপনি অক্ষর ধরে সার্চ করে ফোনের কললিস্টে অসংখ্য নাম তো পেয়েই যান, কিন্তু ঠিক যাকে খুঁজছেন তার নামটা বললেই সঙ্গে সঙ্গে কল হয়ে গেল। আপনার পরিশ্রম তো কমলই, সময়ও বাঁচল। এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে সারা পৃথিবীতে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এ নিয়ে চর্চা কিন্তু হাল আমলে শুরু হয়নি। যন্ত্রকে কী ভাবে মানুষের মতো চিন্তা করানো যায় তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি হওয়ার আগেই। তবে এই ভাবনার জনক হিসেবে উঠে আসে, অ্যালেন টুরিং-এর নাম। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভাবনায় এগিয়ে আসেন টুরিং। ১৯৫০ সালে তাঁর লেখা ‘কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টালিজেন্স’ পেপারে এই নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর মত ছিল, একটি যন্ত্রকে মানুষের সমান বুদ্ধি দেওয়া সম্ভব। এবং যখন যন্ত্র মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে তখন তাকে বুদ্ধিমান বলা উচিত।

কাকে বলে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? ওই যে জিপিএস, আপনার রাস্তার সামনে কোথায় জ্যাম, কোথায় তিনটে গলি ছেড়ে বাঁ দিকে যেতে হবে বলে দেয়। আপনি এক দিন অর্ডার দিলে আপনার প্রোফাইল দেখে মাঝেমাঝে এসে জানান দিয়ে যাওয়া প্রোডাক্টের খোঁজ। যে বুদ্ধি আপনি শীতের পোশাক অর্ডার ডেলিভারি করার সঙ্গে সঙ্গে শীতে জমিয়ে বেড়িয়ে আসার মতো জায়গার প্যাকেজও দিয়ে দিচ্ছে নিমেষে। আপনি গুগলে ম্যানগ্রোভ বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে ক’দিন একটু অ্যাকাডেমিক ঘাঁটাঘাঁটি করলেই এই বিষয়ে কোথায় কবে সেমিনার, কনফারেন্স আছে আপনাকে দেখাতে থাকবে। কারণ, আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নজরদারিতে আছেন। আপনার খাওয়া, পড়া, আসা, যাওয়া, মাস গেলে খরচ, প্রিয় শখ সব কিছুর নিরিখে নিজের মতো করে একটা প্রোফাইল তৈরি করে নিয়েছে সে।

কিন্তু কী ভাবে শেখে যন্ত্র? প্রশ্নটি একটু ঘুরিয়ে করা যায় মানুষ কী ভাবে শেখে? সে তো জন্মের সময় সব শিখে আসে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম ঘটনা, পড়াশোনা, পরিশ্রম, ভুলভ্রান্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। যন্ত্রকেও একই ভাবে শেখানো সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসলে বেশ কিছু জটিল বিষয়ের সমষ্টি। তার মধ্যে অন্যতম ‘মেশিন লার্নিং’। আবার ‘মেশিন লার্নিং’-এর একটি অংশ হল ‘ডিপ লার্নিং’। ‘মেশিন লার্নিং’-এ হচ্ছে বহু তথ্য থেকে সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থবহুল তথ্য বের করা এবং সে অনুযায়ী পরের ধাপে কি হবে সেটা শুরুতেই ঠিক করে ফেলা। যেমন, ধরুন স্প্যাম ই-মেল। এই ক্ষেত্রে শেখানো হয়, কোন একটি ই-মেইল এর কিছু শব্দ/ প্যাটার্ন থাকলেই তাকে স্প্যাম ফোল্ডার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই শুরুতেই কয়েক হাজার স্প্যাম ইমেইল পড়তে দেওয়া হয় এবং বলে দেওয়া হয় এই শব্দ থাকলে এটি একটি স্প্যাম মেল।

‘মেশিন লার্নিং’-এর একটি অংশ হল ‘ডিপ লার্নিং’। এ ক্ষেত্রে এক বারে অনেক তথ্য দেওয়া হয়, যাতে যন্ত্র সেখান থেকে শিখতে পারে এবং পরে একই পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আপাত ভাবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, তা মানুষের তৈরি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতি দিন একটু একটু করে মানুষের পরিশ্রম আর সময় বাঁচিয়ে দিতে পারছে। কিন্তু মানুষের অনুভুতির, ব্যবহারের জটিলতাকে বোঝা তো সহজ নয়। তাই মাঝরাতে যখন কয়েক দিন আগে মারা যাওয়া বন্ধুর জন্মদিনের নোটিফিকেশন আসে, দোলের দিন রং মেখে মুখ দেখিয়ে ফোন খুলতে গিয়ে ফোন যখন চিনতে পারে না তখন বোঝা যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরও শেখা বাকি আছে। সঙ্গে তৈরি হয় আর একটি শঙ্কাও? এক দিন যন্ত্র যদি সব শিখে নেয়, তবে সেই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবে না তো?

প্রতি দিন অসংখ্য জায়গায় আমাদের সব কাজকর্মের নিরিখে জড়ো হওয়া তথ্যভাণ্ডার আগামী দিনে সব থেকে দামি হতে চলেছে। মুখ দেখিয়ে দরজা খোলা, আঙুলের ছোঁয়ায় হাজিরা জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার মুখের গড়ন থেকে আঙুলের ছাপ জমা থাকছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাণ্ডারে। এই বিশাল পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের মাঝে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আলাদা করে আপনাকে নিয়ে ভাবছে, আপনার পছন্দ, অপছন্দের তালিকা তার কাছে তৈরি। এই আমার, আপনার স্বতন্ত্র ভাবে বিশেষ এক জন হয়ে ওঠার যে আনন্দ তাকেই

নিশানা করে জমে উঠেছে বিপণনের বাজার। একা হতে থাকা প্রতি দিনে আপনার ঘরে কথোপকথন করে যন্ত্র, আপনার সারা দিনের কাজের তালিকা খেয়াল রাখে সেই। শুধু কান্নার সময় কাঁধে হাত দিতে শেখেনি বা বুঝে উঠতে পারেনি ঘুম না আসা রাতে তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে কার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

রাকা চৌধুরী অ্যানড্রয়েড ডেভেলপার এবং ঋকসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Artificial Intelligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy