বাজি যে রকমেরই হোক, শব্দ বা আতস, দূষণ তা ছড়াবেই। ফাইল চিত্র।
বিপদ কতখানি বাড়তে পারে, সঙ্কট কতটা গভীর হতে পারে, তা আমাদের সম্পূর্ণ অজানা, এমন নয়। দূষণের কারণে জাতীয় রাজধানী দিল্লি কতখানি সঙ্কটে, তা আমরা রোজ দেখছি। দীপাবলীর সময়ে বাজির দূষণে সে সঙ্কট যে কয়েক গুণ গভীরতর হয়ে ওঠে, তা-ও আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এত সবের পরেও নিজেদের শহর, নিজেদের রাজ্যের বিষয়ে সতর্ক হতে পারলাম না আমরা। অমাবস্যার নিশিতে শব্দদানব এ বারও গ্রাস করল কলকাতাকে, শহরতলিকে। রাত যত বাড়ল, তাণ্ডবও বাড়ল ততই।
বাজি যে রকমেরই হোক, শব্দ বা আতস, দূষণ তা ছড়াবেই। বাজি পুড়লে বাতাসে বারুদের বিষ মিশবেই। এটুকু না বোঝার মতো অবোধ আমরা কেউ নই। আতস বাজির ক্ষেত্রে শুধু বায়ুদূষণ, শব্দবাজির ক্ষেত্রে সঙ্গে শব্দদূষণও। সবাই সব জানি, প্রশাসনিক সতর্কবার্তাও নিয়মিত শুনতে পাই। তবু আতসবাজি, শব্দবাজি বেলাগাম দাপট দেখিয়ে দীপালোকিত রাতের আকাশকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে দেয় প্রতি বছর।
হাওয়ায় শীতের আমেজ ধরা দিতেই দিল্লির বাতাসের অবস্থা শোচনীয় হতে শুরু করে দিয়েছে। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে দিল্লি। তাই দীপাবলীতে যে কোনও ধরনের বাজি পোড়ানোর উপরেই সেখানে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও বছরেই সে চেষ্টা সফল হতে দেখা যায়নি। তার ফলাফল দিল্লির পক্ষে ভালও হয়নি। দিল্লির সেই হাল দেখেও কলকাতা কিছুতেই সতর্ক হয় না। পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে যত দিন না দিল্লির মতো অবস্থা হবে, তত দিনই কি কলকাতা এমন অবুঝের মতো আচরণ করবে?
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কালী পুজো বা দীপাবলীতে বাজির দাপট রুখতে কলকাতার তথা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসন কিন্তু এ বছর সক্রিয় ছিল। শব্দবাজির উপরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কোন কোন ধরনের বাজি পোড়ানো যাবে না, তা অনেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান তো চলছিলই, বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া মাত্রই যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে, তাও ফলাও করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সবে কোনও কাজ হয়নি, এমন নয়। কলকাতা পুলিশের দেওয়া হিসেবই বলছে কালী পুজোর রাতে শব্দবাজি বা লাউডস্পিকারের বেলাগাম দাপট সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে এ বছরে বেশ কিছুটা কম। গ্রেফতারির সংখ্যাও কম। কিন্তু শব্দদানব রুখতে প্রশাসনিক তত্পরতা যতখানি ছিল, দানবের দাপট ততটা নিয়ন্ত্রণে এল না মোটেই।
আরও পড়ুন: জব্দ হল না শব্দ, বন্যা অভিযোগের
আরও এক বার প্রমাণিত হল, শুধুমাত্র প্রশাসনের সদিচ্ছায় সব কিছু হয় না। নাগরিকদের সদিচ্ছাটাও অত্যন্ত জরুরি। নাগরিককে সঙ্কট থেকে রক্ষা করতেই শব্দবাজির উপরে বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছিল, কঠোর পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু নাগরিক নিজে যদি সচেতন না হন, নিজের বিপদটা যদি নিজে আঁচ করতে না পারেন, তা হলে শুধু প্রশাসনিক সক্রিয়তায় ছবিটা বদলে যেতে পারে না। দিল্লির মতো সঙ্কট এখনও কলকাতায় তৈরি হয়নি, সে কথা ঠিক। দূষণ দৈত্য দিল্লিকে যে ভাবে গিলেছে, কলকাতাকে এখনও ততটা গ্রাস করেনি। কিন্তু কলকাতাবাসীর অসচেতনতার বহর বলে দিচ্ছে, দিল্লির পরিস্থিতি এ শহরেও যদি দেখা দেয় অচিরেই, তা হলেও বিস্মিত হওয়া চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy