আর্থিক ক্ষেত্রে কেন সরকারকে বিশ্বাস করা উচিত নহে, অন্তত পঁচিশ কোটি ভারতীয় টের পাইতেছেন। তাঁহারা ভারতীয় জীবনবিমা নিগমে সঞ্চিত অর্থ লগ্নি করিয়াছেন। কেন না, তাঁহারা জানিতেন, সরকারি বিমা সংস্থায় অন্তত টাকা মার যাইবার ভয় নাই। এই বিশ্বাসটিই প্রকৃত মূলধন, যাহার ভরসায় এলআইসি-র কখনও অর্থের অভাব হয় নাই। টাকার অভাব নাই, আর সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে— এই দুইয়ে মিলিলে যাহা হয়, তাহাই হইতেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত আইডিবিআই ব্যাঙ্কে এলআইসি ১৩,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করিয়া ৪০% শেয়ার কিনিতেছে। ইতিপূর্বেই ব্যাঙ্কটির ১১% শেয়ারের মালিক এলআইসি। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত হিসাবে মারাত্মক, কারণ আইডিবিআই-এর শ্বাসবায়ু উঠিতেছে। তাহার প্রদত্ত মোট ঋণের ২৮ শতাংশই অনাদায়ী। এমন সংস্থা ছাড়িয়া পলাইতে পারিলে লগ্নিকারীরা বাঁচেন। এলআইসি-কে সেই মারণফাঁদে পা দিতে হইল। কেন, অনুমান করা চলে। সাঙাততন্ত্রের দৌলতে ব্যাঙ্ক জীর্ণ হইলে এলআইসি আসিয়া সাধারণ মানুষের টাকায় তাহাকে উদ্ধার করিবে, ইহা রাজনীতি হইতে পারে, অর্থনীতি নহে। এবং, ঘটনাটি ব্যতিক্রমীও নহে। আরও দুইটি ঋণবিধ্বস্ত ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ও কর্পোরেশন ব্যাঙ্কেও এলআইসি বেশ মোটা টাকা লগ্নি করিয়াছে। শুধু ব্যাঙ্ক নহে, বেশ কয়েকটি ডুবিতে বসা বেসরকারি সংস্থাতেও এলআইসি-র টাকা খাটিতেছে। যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ হইলেই লাভযোগ্যতা বিচার ব্যতিরেকেই এলআইসি-কে লগ্নি করিতে হয়। মালিকানা সরকারের হাতে থাকিলে ইহা ভিন্ন আর কোনও পরিণতি হওয়া সম্ভব কি?
সাঙাততন্ত্রের রাজনীতি আসিয়া এই ভাবেই কল্যাণরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে লইয়া যায়। রাষ্ট্রের হাতে যদি কোনও রকম বাণিজ্যিক অধিকার ছাড়িতে হয়, তবে বিমার দাবি সম্ভবত সর্বাগ্রগণ্য। কারণ, বিমাকে সম্পূর্ণ বাজারের হাতে ছাড়িয়া দিলে অনেক গরিব মানুষের বাদ পড়িয়া যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিমাকে সর্বজনীন করিতে হইলে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা ভাল। কিন্তু, সেই রাষ্ট্রের চরিত্রটি কী? তাহা যদি জনগণের অছি হয়, তবেই এই নিয়ন্ত্রণের অধিকারটি যথার্থ হয়। অভিজ্ঞতা বলিতেছে, রাজনৈতিক শ্রেণি ক্রমেই সাঙাততন্ত্রের প্রতিভূ হইয়া উঠিয়াছে। বিজয় মাল্য-নীরব মোদীদের ঋণ দেওয়ার পর ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের খাতা ফুলিয়া উঠিলে এলআইসি-র টাকায় তাহাদের উদ্ধার করাই রাষ্ট্রনায়কদের ‘কর্তব্য’ হিসাবে বিবেচিত হইতেছে। কেহ আপত্তি করিতে পারেন— গ্রাহকদের বিমার দাবি যদি অগ্রাহ্য না করে, তবে এলআইসি-র টাকা কোথায় গেল, সেই হিসাবে সাধারণ মানুষের কাজ কী? এলআইসি বিশুদ্ধ বিমা নহে, তাহার পলিসিগুলির মধ্যে বিনিয়োগের অংশও আছে— অর্থাৎ, গ্রাহক মারা না গেলেও নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সুদসমেত টাকা ফেরত পান। অতএব, এলআইসি-র টাকা লইয়া যথেচ্ছাচার প্রকৃত প্রস্তাবে সাধারণ মানুষের লগ্নি লইয়া ছেলেখেলা। তাহার লাভযোগ্যতা কমিলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি। রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করিয়া মানুষ এই ক্ষতি করিবার অধিকারটিই রাজনৈতিক শ্রেণির হাতে তুলিয়া দিয়াছে। সমাজতন্ত্রের ভূত কত ভাবেই না ঘাড়ে চাপিয়া থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy