বিকাশ ভবন। —ফাইল চিত্র
ফের অনশন আন্দোলন, এ বার পার্শ্ব শিক্ষকদের। তাঁহারা স্থায়ী বেতন কাঠামোর দাবি তুলিয়াছেন, এবং পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের সমান মর্যাদা দাবি করিতেছেন। দুইটি প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। এক, পার্শ্ব শিক্ষকদের সম্পর্কে রাজ্যের কর্তব্য কী? দুই, এ রাজ্যে যে কোনও দাবি কেন অনশন আন্দোলনে পর্যবসিত হইতেছে? প্রথম প্রশ্ন, অর্থাৎ পার্শ্ব শিক্ষকদের দাবিদাওয়া সম্পর্কিত বিতর্কটি নূতন নহে। প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সহায়তা করিবার কথা ছিল পার্শ্ব শিক্ষকদের। কিন্তু বাস্তবে বহু স্কুলেই পার্শ্ব শিক্ষকদের কর্তব্যের পরিমাণ স্থায়ী শিক্ষকদের সমান, অথবা অধিক। ক্লাসে শিক্ষাদান হইতে পরীক্ষায় নজরদারি, অনেক দায়িত্বই পার্শ্ব শিক্ষকদের সামলাইতে হয়। এমনকি ভোটদাতাদের তালিকা তৈরির কাজও। অতএব বেতনের কাঠামো থাকিবে না কেন? সরকারের যুক্তি, পার্শ্ব শিক্ষকদের নিয়োগ স্থায়ী শিক্ষকদের নিয়মে হয় নাই, তাঁহাদের প্রশিক্ষণও নাই। প্রশ্ন উঠিবে, তাহা হইলে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হইতেছে কেন? বুনিয়াদি শিক্ষায়, অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়াইবার জন্য নিয়োগ, কিন্তু পার্শ্ব শিক্ষকরা দ্বাদশ শ্রেণিতেও পড়াইতেছেন। একটি বিষয়ের পার্শ্ব শিক্ষক একাধিক বিষয় পড়াইতেছেন। এই ব্যবস্থা চলিতে পারে না।
শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে, চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক থাকিতে পারিবে না। সরকারি এবং বেসরকারি, সকল স্কুলের শিক্ষককেই সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পূর্ণ সময়ের শিক্ষক হইতে হইবে। শিক্ষক ও ছাত্র অনুপাত কত হইবে, তাহাও স্পষ্ট করা হইয়াছে ওই আইনে। কিন্তু আইনের এক দশক পার করিয়াও বহু রাজ্যে সরকারি স্কুলগুলিতেই যথেষ্ট প্রশিক্ষিত, পূর্ণ সময়ের শিক্ষক নাই। শিক্ষকের অভাবেই হউক, অথবা পূর্ণ সময়ের শিক্ষক নিয়োগের অনিচ্ছার কারণেই হউক, আইন উপেক্ষা করিয়া রাজ্য সরকারগুলি অল্প পারিশ্রমিকে পার্শ্ব শিক্ষক দিয়া স্কুল চালাইতেছে। অতএব পার্শ্ব শিক্ষকরাও তাঁহাদের দাবি লইয়া আন্দোলন করিতেছেন। এই বারও শিক্ষা দফতরের কর্তারা অনুদান কিঞ্চিৎ বাড়াইয়া পরিস্থিতি সামাল দিবার চেষ্টা করিতেছেন। এই চেষ্টা ছাড়িয়া এ বার সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। হয় আইন মানিয়া সকল প্রশিক্ষিত পার্শ্ব শিক্ষককে বেতন কাঠামো দিয়া স্থায়ী শিক্ষক করিতে হইবে। অথবা সকল পার্শ্ব শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করিয়া পূর্ণ সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করিতে হইবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি অবশ্য আইনের নহে, রাজ্য সরকারের, বিশেষত শিক্ষা দফতরের প্রশাসনিক কুশলতার। সকল বিবাদের মীমাংসা আইনের দ্বারা সম্ভব নহে, আলোচনার দ্বারা ঐকমত্য তৈরি করিতে হয়। কিন্তু সরকারের প্রতি যে কোনও দাবি উঠিলে তৃণমূল সরকার দাবিদারকে ‘প্রতিপক্ষ’ ঠাহর করিয়া শক্তির পরীক্ষা লইতে চায়। ফলে কখনও চিকিৎসক, কখনও শিক্ষক, কখনও ছাত্রেরা দীর্ঘ কাল অনশনে বসিতেছেন। তাহার অভিঘাতে নাগরিক সমাজ আন্দোলিত হইতেছে। গণতন্ত্রে নাগরিকের প্রতি কী করিয়া এমন নিষ্ঠুর হইতে পারে নির্বাচিত সরকার, সেই প্রশ্নটি বার বার বিচলিত করিতেছে রাজ্যবাসীকে। পার্শ্ব শিক্ষকেরা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধরিয়া রাখিয়াছেন, তাঁহারা শ্রদ্ধা ও সম্মান পাইবার যোগ্য। তাঁহাদের অনশন রাজ্যের জন্য গৌরবের নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy