Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
banner

বেনিয়মের বিজ্ঞাপন

বেআইনি হোর্ডিং শহরের রাজপথে দৃশ্যদূষণ তো ঘটায়ই, পাশাপাশি এর থেকে জনসাধারণের বিপদের আশঙ্কাও থেকে যায়।

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪৪
Share: Save:

কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞাপন বাবদ কর আদায় কমেছে। আগে যেখানে বিজ্ঞাপন বাবদ বার্ষিক ২০ কোটি টাকা আয় হত, সেখানে গত তিন বছরে মোট কর আদায় ২৫ কোটি টাকারও কম। চলতি বছরেও চিত্রটি আশাব্যঞ্জক নয়। অতিমারিকালে অনেকে বিজ্ঞাপনের খরচে রাশ টেনেছেন, কিন্তু অভিযোগ যে, আয় কমার জন্য মূলত দায়ী বেআইনি হোর্ডিংয়ের বাড়বাড়ন্ত। শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে অবৈধ হোর্ডিং— যা পুরসভাকে কোনও কর দেয় না। সেগুলির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের অভাবেই কর ঠিকমতো সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। পুরকর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছেন।

বেআইনি হোর্ডিংয়ের সমস্যা নতুন নয়। সাধারণ সময় তো বটেই, ভোট কিংবা পুজোর সময়েও শহর জুড়ে বহুতল থেকে শুরু করে গাছ, সরকারি আবাসন, এমনকি হেরিটেজ ভবন বা বিপজ্জনক বাড়িও ছেয়ে যায় নানা আকারের হোর্ডিংয়ে। এবং বহু ক্ষেত্রেই সে সব লাগানো হয় কলকাতা পুরসভার অনুমতি ছাড়াই। উদ্দেশ্যপূরণের পরেও সেগুলি বহু দিন থেকে যায় নিজ স্থানে, সরানোর কষ্টটুকুও কেউ করতে চান না। যদিও এই বেআইনি হোর্ডিং শহরের রাজপথে দৃশ্যদূষণ তো ঘটায়ই, পাশাপাশি এর থেকে জনসাধারণের বিপদের আশঙ্কাও থেকে যায়। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। পুরনো হোর্ডিং ঝড়ের সময় ভেঙে পড়লে প্রাণহানি ঘটাও আশ্চর্য নয়। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে চেন্নাইয়ে একটি হোর্ডিং পড়ে মৃত্যু হয় এক মহিলা স্কুটার আরোহীর। যার সূত্রে মাদ্রাজ হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে তিরস্কার করে বলেছিল যে, আর কত রক্তপাত হলে তবে প্রশাসন সতর্ক হবে। বেআইনি হোর্ডিং সরাতে গিয়ে দুর্ঘটনার নজির পুণেতেও রয়েছে। কলকাতা কিন্তু চেন্নাই বা পুণের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়নি। বরং মাঝেমধ্যে নতুন নীতি প্রণীত হলে, জনসাধারণ অভিযোগ তুললে কিছু দিন এগুলি সরানোর অভিযান চলে। অচিরেই আবার পুরনো ছবি ফিরে আসে।

সমস্যার সমাধান হয় না কেন? কারণটি সহজ। রাজনৈতিক প্রশ্রয়। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেনিয়মের সুযোগ করে দেন। অবশ্যই উপযুক্ত লক্ষ্মীলাভের বিনিময়ে। অন্য দিকে, বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিও অপেক্ষাকৃত কম অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসায়িক লাভ করে। অন্যায় পথে দু’তরফে এই অর্থোপার্জনের কারণেই কর বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা পুরসভার ভাঁড়ারে জমা পড়ে না। এমনই দুর্বৃত্তায়নের নমুনা চার দিকে, গাড়ি পার্কিং, যত্রতত্র হকারদের ব্যবসা করার ছাড়পত্র কিংবা অটোর লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকরাও এই চক্রে শামিল। পুরকর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে কয়েকটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তারই প্রমাণ। পুরসভায় এমন সব দুর্নীতির অভিযোগ মোটেই নতুন নয়। বর্তমান শাসক দলও সেই ঐতিহ্যকে লালন করে চলেছে। এই কর আদায়ে ফাঁকির ফলে পুরসভার বহু উন্নয়নমূলক কাজ যাচ্ছে আটকে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের ন্যায্য অবসর ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুর্নীতির এই ব্যাধি নিরাময়ে চাই কঠিন হাতে প্রশাসন চালানোর দাওয়াই। প্রশ্ন হল, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

অন্য বিষয়গুলি:

banner KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy