ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ কোনও নূতন সংবাদ নহে। পাকিস্তান কেন কাশ্মীরে মাথা গলাইবে, সার্বভৌম প্রতিবেশী দেশের একটি অঞ্চলের বিষয়ে সে কেন মতামত দিবে, অর্গানাইজ়েশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)ভারতের নামে প্রোপাগ্যান্ডা বা মিথ্যা প্রচার করিতেছে কেবল পাকিস্তানের অনাচার ও সন্ত্রাস-সমর্থক কার্যক্রম হইতে দৃষ্টি ঘোরাইবার জন্য— এই সকলও নিয়মিত সমাচার। তবু এই বারের ইউএনএইচআরসি-তে যাহা হইল, তাহার একটি পৃথক গুরুত্ব আছে। পরিবর্তিত আফগানিস্তান পরিস্থিতির ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিবাদ-বক্তব্য একটু আলাদা মনোযোগ দাবি করে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির নিকট দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের ভূমিকা কিছুটা নূতন ভাবে প্রতিভাত হওয়ার দাবি রাখে। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা ফিরিবার প্রধান স্থপতি যে পাকিস্তান, তাহা তালিবান নেতারা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন, পাকিস্তানকে তাঁহারা পিতা-রাষ্ট্র বলিয়া সম্মান পর্যন্ত জানাইয়াছেন। পাকিস্তানের বিষয়ে তাঁহাদের নীতি যে দুনিয়ার অন্যান্য দেশের নীতির সহিত তুলনীয় না-ই হইতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়াছেন। এবং, পাশাপাশি, উদ্বেগজনক ভাবে, ভারতের প্রতি পূর্বতন আফগান-শাসকের নীতি হইতে অনেক ডিগ্রি সরিয়া গিয়া আফগান নেতা আনাস হক্কানি বলিয়াছেন যে, ভারত কেবল নিজ স্বার্থ সম্প্রসারণের জন্য আফগানিস্তানের সহিত সম্পর্ক রাখে, আর কিছু নহে। বোঝা সহজ, ভারতের পক্ষে প্রতিবেশী দেশের নূতন সন্ত্রাস-বান্ধব সরকার কতখানি বিপজ্জনক হইয়া উঠিতে পারে, এবং তাহাতে পাকিস্তানের ভূমিকা কতখানি গুরুতর হইতে পারে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্তব্য করিয়াছেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ ‘জিতাইবার’ লক্ষ্যে আমেরিকা পাকিস্তানকে ব্যবহার করিতেছিল। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে প্রায় চার শত আশি বার ড্রোন হানা ঘটিয়াছে এই যুদ্ধের ফলে। বিপরীতে, পাকিস্তানে গত দুই দশকে যে পরিমাণ মৌলবাদী জঙ্গি হানা ঘটিয়াছে, তাহাও অভূতপূর্ব। আমেরিকা যাহাই করুক, পাকিস্তানি রাজনৈতিক ও সামরিক পক্ষ যে এক হাতে সন্ত্রাসবিরোধিতার অর্থ, অস্ত্র ও প্রযুক্তি গ্রহণ করিয়া অন্য হাতে তালিবান ও অন্যান্য জঙ্গি পক্ষকে অকাতরে সে সকল দান করিয়া গিয়াছে, ইহাও এখন অপ্রমাণিত নহে। কী ভাবে এই সাঁড়াশি পরিস্থিতি হইতে বাহির হইবে পাকিস্তান, তাহারাই স্থির করিবে। তালিবানের সহিত বোঝাপড়াই যদি তাহাদের আত্মরক্ষার পথ হয়, হউক। কিন্তু সেই বোঝাপড়া যদি ভারতের বিপক্ষে ব্যবহারের প্রচেষ্টা হয়, কিংবা কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যক্রম বাড়াইবার কাজে ব্যবহার হয়, তাহাতে ভারতের একটি সুস্পষ্ট অবস্থান থাকা স্বাভাবিক। এবং সেই অবস্থানের প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জ তথা পশ্চিমি দেশগুলির সহানুভূতিও বাঞ্ছনীয়।
নতুবা বুঝিতে হয়, জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির লড়াই কেবলই তাহাদের নিজ নিজ স্বার্থ দ্বারা সীমায়িত। ভারত ও কাশ্মীর এই কারণেই বিশ্ব কূটনীতি মানচিত্রে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যেখানে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে জঙ্গি হামলা বাড়াইয়া সেই রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলা হইতেছে, তেমন ক্ষেত্রে যদি কড়া পদক্ষেপ না করা যায়, তবে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধিতারই আর কোনও অর্থ থাকে না। আফগানিস্তানে তালিবান সরকারকে সমর্থন করা না-করা একটি প্রশ্ন। আর তালিবান উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানের গরমাগরম উস্কানিমূলক কথা কিংবা কাজকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা না-করা আর একটি প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের ‘দ্বিচারিতা’র কথাটি পরিষ্কার ভাবে উঠানো তাই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy