বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তাঁর প্রশাসনের ভুল হলে রাজ্যবাসী যেন তা ধরিয়ে দেন। তৃণমূলের একটি ভুল নির্মল মাজি। তাঁর বিবিধ বিচ্যুতির দিকে সরকারের দৃষ্টি বার বার আকর্ষণ করেছেন মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন পদাধিকারী, চিকিৎসক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন। সংবাদমাধ্যমও তাঁর নানা অসঙ্গত আচরণ নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে। সে সব কণ্ঠ স্বাস্থ্য দফতরের নীরবতার প্রাচীরে প্রতিহত হয়ে ফিরে এসেছে। অতি সম্প্রতি যে অভিযোগ উঠেছে, তা কেবল আর্থিক দুর্নীতির নয়, রোগীর সঙ্গে চরম প্রতারণার। এক চিকিৎসক রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, মেয়াদ-উত্তীর্ণ ২০২টি স্টেন্ট রোগীদের দেহে বসানোর জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে তথ্য অডিটেও উল্লিখিত হয়েছে। যে কোনও সভ্য দেশে এমন অভিযোগ সামনে এলে ঘটনার তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। পূর্বতন বিভাগীয় প্রধানদের কার্যকালে মেয়াদ-উত্তীর্ণ স্টেন্ট ব্যবহার হয়েছে কি না, তার সন্ধান করা হত, এবং তেমন ঘটে থাকলে সরকারের তরফে প্রতারিত রোগীদের বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে হত। কিন্তু রাজ্যটির নাম পশ্চিমবঙ্গ, তাই দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যেতে হল চিকিৎসককেই।
অভিযুক্ত নির্মল মাজি মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে রয়ে গিয়েছেন। অথচ চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি হৃদ্রোগ বিভাগের প্রধান থাকাকালীন তাঁর উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন চেয়ারম্যান। ভুয়ো যন্ত্রের সার্টিফিকেট দিতে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা হৃদ্রোগী নন, তাঁদেরও ভর্তি করতে হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্মলের বিরুদ্ধে পরীক্ষকদের উপরে ছাত্রদের পাশ করানোর চাপ সৃষ্টি-সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সে সব খতিয়ে দেখার কোনও আশ্বাস দেয়নি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ‘অসুস্থ’ বলে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, বলেছেন অধ্যক্ষ। প্রশ্ন, মেডিক্যাল কলেজ কি সুস্থ আছে? সুস্থ রয়েছে স্বাস্থ্য ভবন? চিকিৎসক মহলের গুঞ্জন, জেলা থেকে রোগী ‘রেফার’ কমাতে কঠোর হলে মিলছে ‘শাস্তি’। বদলি, পদচ্যুতি-সহ নানা হয়রানির সিদ্ধান্ত কোনও এক আধিকারিকের স্বাক্ষরের উপরে লেখা হয়, কিন্তু ক্ষমতার অক্ষর পড়ে নিতে কারও ভুল হয় না।
নির্মল মাজি পরিচালিত এক চিকিৎসক সংগঠনের নেতা সাংবাদিককে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের কেবল ‘জনস্বার্থে ঠিক করে কাজ করার কথা’ বলেছিলেন নির্মল মাজি। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন বলেছিলেন? মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় প্রধানের কাজের বিচার করবেন, তাঁকে পরামর্শ দেবেন কলেজের অধ্যক্ষ। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের কি সেই অধিকার রয়েছে? সংবাদে প্রকাশ, নির্মল মাজি একদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতেন। সেই ‘ভুল’ শুধরানোর ক্ষমতা ছিল না তৎকালীন অধ্যক্ষের। এ ভাবেই নির্মল মাজি ও তাঁর স্বগোত্রীয়রা আপন অধিকারের সীমা বহুগুণে অতিক্রম করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। সরকারি চিকিৎসকদের কাজের শর্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিবেকের সঙ্গে আপস, ‘আপনি মোড়ল’ নেতাদের আদেশপালন। এই ভুল আর কবে শুধরাবে তৃণমূল সরকার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy