Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Global Warming

প্রকৃত কর্তব্য কোনটি

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে ভাবে এগোচ্ছে মনুষ্যজগৎ, তাতে শীঘ্রই ছয়টি বিপদসীমারেখা পেরিয়ে যেতে পারে পৃথিবীগ্রহ।

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩৯
Share: Save:

দুর্গাপুজো এক আনন্দের সময়। দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগকে বাক্সবন্দি করে রাখাই আনন্দ-উৎসবের সাধারণ দস্তুর। তবে কিছু কিছু দুশ্চিন্তা আছে যেগুলিকে বন্দি না করে জীবনযাপনের অংশ করে নিলেই সমস্যা কমতে পারে। পরিবেশ-দুশ্চিন্তা তেমন একটি। উৎসবের বিলাস ও অপচয়ের মধ্যে যদি মনে রাখা যায় যে এ সবের বাইরেও এক বাস্তব আছে— ঘোর সঙ্কটের বাস্তব— এবং তার ভিত্তিতেই, কিছু কিছু কর্তব্যকর্ম এখন সচেতন সুশীল মানুষমাত্রেরই প্রত্যহের দায়, উৎসবের সময়েও। সম্প্রতি এক দল বিজ্ঞানী দেখিয়ে দিয়েছেন, মানবজগৎ একটির পর একটি পরিবেশ-বিপদমাত্রা পেরিয়ে চলেছে অবধারিত প্রলয়ের দিকে। কিন্তু সেই বিষয়ে এখনও সামূহিক সচেতনতা অত্যন্ত কম। ভাবখানা এমন যে, সমস্যাটা ‘অন্যদের’, ‘আমাদের’ নয়। এই ‘আমাদের’ শব্দটিকে যত দিন না ঠিকমতো বুঝতে পারব আমরা, যত দিন না বুঝব যে বর্তমানের মানুষেরই অন্যতম দায় ভবিষ্যতের মানুষ— প্রলয়ের দিকে এগোনোর গতি কেবলই বাড়বে। ফলে পৃথিবীর আসন্ন বিপন্নতার কথা মনে করিয়ে দেওয়া একটি বড় কাজ— উৎসব উদ্‌যাপনেরও অংশ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে ভাবে এগোচ্ছে মনুষ্যজগৎ, তাতে শীঘ্রই ছয়টি বিপদসীমারেখা পেরিয়ে যেতে পারে পৃথিবীগ্রহ। সীমারেখাগুলি আগেই নির্ধারিত হয়েছিল এই ভেবে যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন এমন মাত্রায় পৌঁছে গেলে তাকে পিছনে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হবে। তখন তাকে পরিবেশগত জরুরি অবস্থা বা ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি বলা যেতে পারে। ছয়টি সীমারেখা ইত্যাকার: গ্রিনল্যান্ডের বরফ-আচ্ছাদনে ধস নামা, পশ্চিম আন্টার্কটিক সমুদ্রে বরফ-আচ্ছাদন নষ্ট হওয়া, উত্তর অতলান্তিক মেরু অঞ্চলে সমুদ্রস্রোতের ধরন ও দিক পরিবর্তন, কোরাল রিফ ধ্বংস হওয়া, উত্তর মেরুর ‘পার্মাফ্রস্ট’ গলতে শুরু করা, এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উত্তর দিকে ব্যারেন্টস সাগরের বরফ গলতে শুরু করা। উপরের এই ঘটনাগুলি ঘটতে পারে একমাত্র যদি তার আগেকার ঘটনাসমূহ ঘটে— অর্থাৎ ঘটনার ‘ডমিনো এফেক্ট’-এর দিকে তাঁরা নির্দেশ করছেন। কোন ভূবৈজ্ঞানিক যুক্তিতে শর্তগুলি পরস্পরের সঙ্গে গাঁথা, তা-ও তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন। সম্ভাব্যতার এই বিশদ চিত্রাঙ্কন বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন বিপদসীমারেখাগুলি এক বার পার হতে শুরু করলে চূড়ান্ত বিপদকে থামানোই অসম্ভব।

এমন এক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে আমজনতার কী কর্তব্য? সাধারণত পরিবেশ বিষয়ক প্রশ্ন উঠলেই সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়— যার গুরুত্ব সন্দেহাতীত। ‘বিন্দু বিন্দু বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল/ গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল’— সুতরাং বিশ্বের সামগ্রিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়াই জরুরি। কিন্তু হয়তো তার চেয়েও বড় একটি কথা আছে। সামগ্রিক কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে দেখলে যে-হেতু শিল্পকারখানার দায়টি অনেক বেশি জরুরি, কার্বন এমিশনের পাশে রাসায়নিক দূষণের ফলে তৈরি পরিবেশগত দুর্যোগ, এবং তার ফলে আরও কার্বন-দূষণের চক্রাকার জাল যে-হেতু ব্যক্তি-মানুষের ক্ষুদ্র উদ্যোগের পরিধির থেকে বিপুলাকারে বড়, তাই আরও গুরুত্বপূর্ণ সেই পরিবেশগত বাধ্যতা রাজনৈতিক স্তরে তৈরি ও নিশ্চিত করা। এটাই হয়তো এখন সচেতন নাগরিকের সবচেয়ে বড় কাজ। পরিবেশের দিক দিয়ে রাজনীতির কমিটমেন্ট তৈরি করতে পারেন একমাত্র নাগরিকই। নাগরিকের ভোট সেই দলের কাছেই যাওয়া উচিত, যাঁরা নিজেদের ক্ষমতাপ্রসার ও ক্ষুদ্রস্বার্থরঞ্জিত নানাবিধ দুর্নীতি ও বিদ্বেষ কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে তাবৎ মানবজগতের বেঁচেবর্তে থাকার শর্তের কথাটা রাজনীতির চৌহদ্দিতে নিয়ে আসতে চান। আর মানুষ যে কেবল নিজের জন্য বাঁচে না, অন্যের জন্যও বাঁচে, উৎসবের সময়ই কি তা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রকৃষ্ট ক্ষণ নয়?

অন্য বিষয়গুলি:

Global Warming Nature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy