শেষ পর্যন্ত গোরক্ষপুর, অযোধ্যা নহে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রথম বার ভোটে দাঁড়াইতেছেন ‘নিজস্ব’ ভূমি গোরক্ষপুর হইতে, এই সিদ্ধান্তে তাঁহার নিজের স্বস্তি বোধ করিবারই কথা। লক্ষণীয়, সিদ্ধান্ত শুনিয়া খুশি হইয়াছেন বিরোধী নেতা অখিলেশ যাদবও। কারণ? বিজেপি স্বার্থের দিক হইতে অযোধ্যায় যোগীকে দাঁড় করাইতে চাহিবার অন্তত দুইটি বড় কারণ ছিল। রামজন্মভূমির মহিমা অধিক প্রাবল্যে প্রচারে উঠাইয়া আনা যাইত। এবং সমাজবাদী পার্টির অযোধ্যায় যে বড় ভোটভিত, তাহা বিনষ্ট করার সুযোগ মিলিত। শেষ পর্যন্ত তাহা ঘটিল না। অখিলেশের প্রসন্ন উক্তি শোনা গেল, যোগী নিজের স্থানেই থাকুন, তাঁহার অযোধ্যা আসিয়া কাজ নাই। বাস্তবিক, ইহা লইয়া গত কিছু দিনে বেশ কয়েকটি বড়-ছোট সুখবর তৈরি হইল সমাজবাদী পার্টিপ্রবরের জন্য। আজ হইতে কয়েক মাস আগেও তাঁহাকে এই বারের ভোট-চিত্রে নেহাত নীরব দর্শক ঠেকিতেছিল, কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মহাভোট যত কাছে আগাইয়া আসিতেছে অখিলেশ যাদবকে ততই আলোকবৃত্তের নিকটে বিচরণ করিতে দেখা যাইতেছে। বিজেপি হইতে একের পর এক নেতা, এমনকি মন্ত্রীও, বাহির হইয়া সমাজবাদী পার্টির শিবির অভিমুখী হইয়াছেন। ঠিক যে পদ্ধতিতে গত বারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিক্ষুব্ধ নেতাদের বাহির করিয়া আনিতে পারিয়াছিল, এই বার প্রায় একই পদ্ধতিতে অখিলেশ যাদব সক্রিয় হইয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে কতখানি রোষ দলের মধ্যে জন্মিয়াছিল, এবং সেই রোষের সামনে অন্তর্দলীয় প্রতিকার ব্যবস্থা কতখানি অবহেলিত রাখা হইয়াছিল, তাহার হাতেকলমে প্রমাণ পাইয়া বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী ভাবিতেছেন তাঁহারাই জানেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে অকস্মাৎ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে উত্তেজনাবিহীন পরিস্থিতিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষিত হইতেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রায় বিরোধীবিহীন একচ্ছত্র ক্ষমতার চার পাশ দিয়া অকস্মাৎ সামান্য কিছু প্রতিস্পর্ধা উঁকি মারিতেছে।
সামান্যই। শেষবেলায় এই সামান্যে কি ভোটবাস্তব পাল্টাইবে? এখনও দেখিবার। দুর্ঘটনা ও অপঘটনার ঘনঘটায় গত কয়েক বৎসরে উত্তরপ্রদেশ নজর কাড়িয়াছে, উন্নাও হইতে লখিমপুর খেরি, একের পর এক কলঙ্কময় নৈরাজ্যকাণ্ড সারা দেশকে তীব্র বিপন্নতার দিকে ঠেলিয়া দিয়াছে। অথচ বিরোধী কর্মকাণ্ড সেই রাজ্যে প্রায় কিছুমাত্র দানা বাঁধে নাই। অখিলেশ যাদব, মায়াবতী প্রমুখ পুত্তলিকাপ্রায় থাকিয়াছেন। একমাত্র প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সরবতা ও সক্রিয়তা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দুর্বল সংগঠনের কারণে কংগ্রেসকে মণিহারা ফণীর মতোই দিশাহারা লাগিয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অখিলেশ যাদবকে সমর্থন দিলে বিরোধী অনৈক্যও হয়তো আরও তীব্র ভাবে প্রকাশিত হইবে। সুতরাং, বিরোধী শিবিরের সাম্প্রতিক সুসংবাদগুলি সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হইলেও কার্যক্ষেত্রে গুরুতর না-ই হইতে পারে। কতগুলি ক্ষেত্রে বিজেপির সাফল্য যে নিতান্তই বিরোধী শিবিরের দীর্ঘ অকার্যকারিতার ফলে উদ্ভূত, তাহা স্পষ্ট। জাতবিভাজনে জর্জরিত প্রদেশটিতে শাসক গোষ্ঠী ক্রমাগত দলিতদের প্রতি অবিচারের উপশম ঘটাইতে ব্যর্থ হইয়াছে— অথচ অন্য বিকল্পের অবর্তমানে তাহাদের কাছেই দলিত সমাজ আশ্রয় লহিয়াছে। গত কয়েক বৎসরে সংখ্যালঘুর প্রতি ঘর ওয়াপসি, রোমিয়ো-শাসন কিংবা গোমাংস-ভক্ষকের উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের শেষ থাকে নাই, কিন্তু তাহারাও প্রয়োজনের সময় বিরোধী নেতৃত্বের দার্ঢ্য খুঁজিয়া ব্যর্থ হইয়াছে। নির্বাচনী প্রকৌশলবিদ্যায় বিজেপি চিরকাল সিদ্ধহস্ত, তবে গত কয়েক বৎসরে উত্তরপ্রদেশই তাহার শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব প্রদর্শনের ভূমি। আবার বিপরীতে, দীর্ঘকালীন বিরোধী নিষ্ক্রিয়তার দিক দিয়াও উত্তরপ্রদেশই সমগ্র ভারতের অণু-দর্পণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy