রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতর নির্দেশিকা দিয়ে জানাল, সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা সরকার-পোষিত স্কুলের শিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না, পড়াতে পারবেন না কোনও কোচিং সেন্টারেও। রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনস্থ স্কুলশিক্ষা আধিকারিকদের মারফত এই নির্দেশিকা প্রসারিত হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের কাছেও, যাতে তাঁরা দেখতে পারেন তাঁদের স্কুলের শিক্ষকেরা ‘বাইরে’ কোথাও পড়াচ্ছেন কি না। শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে শিক্ষা দফতরের কাছে আসা অভিযোগ নতুন বা আজকের নয়। বামফ্রন্ট আমলেও এই অভিযোগ উঠেছে, সমগোত্রীয় নির্দেশিকাও প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি এই নির্দেশিকা আসলে শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকারেও হস্তক্ষেপ কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। তবে এ ধরনের নির্দেশের প্রচলন আছে অন্য জীবিকাতেও: সরকারি ডাক্তারদের নিজস্ব ‘প্র্যাকটিস’-এর ক্ষেত্রে, বেসরকারি সংবাদ সংস্থাতেও— কর্মীরা তা মেনেই কাজে যোগ দেন। এই প্রচলপ্রথা যে কর্তৃপক্ষের অনধিকার চর্চা তা বলা যাবে না।
কিন্তু এই নির্দেশিকায় কি কোনও কাজ হয়েছে? নিশ্চিত ভাবেই হয়নি— শহরে গ্রামে গৃহশিক্ষকতার রমরমাই তার প্রমাণ, আর নির্দেশিকা মেনে কাজ হলে সত্যিই নিয়ম করে বা প্রত্যেক জমানায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর একই গোছের নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হত না। আবার নির্দেশিকা যাতে মানা হয় তা নিশ্চিত করতে সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। সরকারি স্কুলের শিক্ষকের গৃহশিক্ষকতা বা কোচিং সেন্টারে পড়ানো আটকাতে পারা দুষ্কর, তবে নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করতে কিছু উদ্যোগ করা যেতে পারত, যেমন কোচিং সেন্টারগুলি যাতে এই স্কুলশিক্ষকদের কাজে না লাগায় তার নজরদারি ও কড়াকড়ি। কিন্তু সারসত্যটি এই: বামফ্রন্ট আমলে বা এই জমানাতেও এ রকম কোনও পদক্ষেপ হয়নি। অর্থাৎ নির্দেশিকাই সার, তার পিছনে কোনও সরকারি নজরদারি নেই, দণ্ডবিধানের প্রসঙ্গ আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই: সরকার মনে করছে যে নির্দেশিকাতেই কাজ হবে বা এর প্রকাশটুকুই কাজ, আর সরকারি স্কুলশিক্ষকেরা ভাবছেন এ তো বছর বছর হয়েই আসছে, কাজের কাজ কিছু হবে না। নিয়ম বা নির্দেশের সহলগ্ন বন্দোবস্তটি না থাকলে যে গোড়ার নিয়মটিই নিরর্থক, ভাবের ঘরে চুরি হয়ে দাঁড়ায়, সরকার কি তা বুঝছে না?
বরং কথা হওয়া দরকার শিকড়ে গিয়ে— এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাটি কী করে গৃহশিক্ষকতামুখী ও কোচিং সেন্টারসর্বস্ব হয়ে উঠল তা নিয়ে। স্কুলশিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলির সমীক্ষা ও রিপোর্টে স্পষ্ট, সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে গৃহশিক্ষকতা-নির্ভরতা খুব বেশি, রমরমাও সেই কারণেই। স্পষ্টতই এ এক সমস্যা, এবং এই সমস্যার সমাধানে স্রেফ নির্দেশিকা প্রকাশেই কাজ হবে না, যেতে হবে সমস্যার গভীরে তথা মূলে, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: পশ্চিমবঙ্গে সরকার-পোষিত স্কুলগুলিতে পঠনপাঠনের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ। এই বেহাল দশা সুদূর বা সাম্প্রতিক অতীতেও তা-ই ছিল, কোভিড-অতিমারির পরে তার অবস্থা পৌঁছেছে দুর্ভাগ্যজনক তলানিতে। স্কুলে যাতে পড়াশোনা হয়, এবং সুষ্ঠু ভাবে হয়, তা নিশ্চিত করা প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া দরকার। তা হলেই গৃহশিক্ষকতামুখিতা ও কোচিংসর্বস্বতার প্রাবল্য কমবে। নির্দেশিকার বাহুল্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy