Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Rahul Gandhi

বিরোধিতার পথ

গণতন্ত্রে বিরোধিতার বিধিসম্মত উপায়গুলি উপেক্ষিত হচ্ছে। সংসদ বা বিধানসভা বয়কট, বিক্ষোভে মুলতুবি— এই হল প্রাত্যহিক চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২২ ০৮:১৯
Share: Save:

রাজনৈতিক বিরোধিতা মানে প্রতিপক্ষের উপরে হিংসাত্মক হামলা নয়, মনে করিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষে এ কথা যে সমর্থকদের মনে করাতে হল কোনও জাতীয় স্তরের নেতাকে, তা থেকেই এ দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির পরিচয় মেলে। রাহুল কথাগুলি বলেছেন কেরলে, সোনা পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতিতে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ইস্তফার দাবিতে কেরলে কংগ্রেসের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। দু’তরফই পরস্পরকে আক্রমণ করছে— বিমানের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যুব কংগ্রেসের সদস্যরা; জবাবে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর, রাহুলের সাংসদ কার্যালয়ে হামলা করেছেন বামপন্থীরা। অভিজ্ঞতা বলে, এমন ঘটনাক্রম যে কোনও রাজ্যেই সম্ভব। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, এমনকি দলীয় সমর্থক বলে পরিচিত নাগরিকও বিরোধীপক্ষের আঘাত-আক্রমণ থেকে রেহাই পান না। নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর, দলীয় কার্যালয়ে হামলা আকছার ঘটছে; মহিলা প্রার্থীরাও মারধর থেকে রেহাই পান না। গ্রাম ‘বিরোধীশূন্য’ করার তাগিদে অগণিত মানুষকে ঘর ছাড়তে হয়। থানা-আদালত কক্ষ পর্যন্ত বিরোধীদের ভাঙচুরের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। রাস্তায় উন্মত্ত দলীয় কর্মী, আর টিভির পর্দায় দলীয় নেতাদের চিৎকৃত তরজা, এই হিংস্রতাই এখন রাজনীতির অভিজ্ঞান।

এর বিপরীতে, গণতন্ত্রে বিরোধিতার বিধিসম্মত উপায়গুলি উপেক্ষিত হচ্ছে। সংসদ বা বিধানসভা বয়কট, বিক্ষোভে মুলতুবি— এই হল প্রাত্যহিক চিত্র। অথচ, সংসদ বা বিধানসভায় প্রশ্ন করেই জনসমক্ষে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি উন্মুক্ত করার কথা বিরোধীদের। এ রাজ্যেই খাদ্যসঙ্কট নিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু। চালের কালোবাজারি রুখতে কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার বিস্তারিত বিবরণ আজও মেলে তা থেকে। খাদ্যের দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি বামপন্থীরা বিধানসভাকেও সম্পূর্ণ ব্যবহার করেছিলেন। সংসদে এবং বিধানসভায় বিভিন্ন কমিটিতে থাকেন বিরোধী সদস্যরাও। ওই কমিটিগুলি সরকারি কার্যকলাপের যে কোনও তথ্য তলব করতে পারে, রিপোর্টে প্রশাসনিক ত্রুটি-বিচ্যুতির চিত্র প্রকাশ করতে পারে। এখন সেই সব রিপোর্ট প্রকাশ নিয়মরক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে, অধিকাংশই অসার। গণতান্ত্রিক বিরোধিতার এই উপায়গুলিকে কাজে লাগানোর কোনও আগ্রহ আজ বিরোধীদের মধ্যে দেখা যায় না। এর ফলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে— রাজনীতিকে ব্যবহার করে সব রকম স্বার্থপ্রণোদিত হিংসাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। লুটের বখরা নিয়ে কাড়াকাড়িও ‘দলীয় সংঘাত’ কিংবা ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে প্রচারিত হচ্ছে।

উন্মত্ত আক্রমণ যে রাজনৈতিক বিরোধিতার পথ হতে পারে না, মুখে তা সব দলই স্বীকার করে। কেরলেও বিজয়নের নেতৃত্বে প্রথম বারের সরকার গঠনের সময়ে সর্বদল বৈঠকে স্থির হয়েছিল, বিক্ষোভের জন্য দলীয় কার্যালয় বা নেতাদের বাড়ি বেছে নেওয়া হবে না। কিন্তু সে সঙ্কল্প বিস্মৃত। তথ্যপূর্ণ, যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক কঠিন, তার জন্য অনুশীলন লাগে, ধাপে ধাপে প্রস্তুতির পালা চলে আজীবন। গালাগাল, মারধর সহজ, ঢালু পথে নীচে নামার মতো। প্রথম পথটি গণতন্ত্রে উত্তরণের, দ্বিতীয়টি পৌঁছয় স্বৈরতন্ত্রে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress Opposition kerala Pinarayi Vijayan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy