প্রতীকী ছবি।
অর্থব্যবস্থার গতি স্তব্ধ হইলে মানুষ কাজ হারাইবেন, বাজার ব্যবস্থায় তাহা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ। ভারতেও সেই ঘটনাই ঘটিতেছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) নামক এক অসরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিল মাসেই ভারতে কাজ হারাইয়াছেন পঁচাত্তর লক্ষেরও অধিক মানুষ— তাঁহাদের প্রায় অর্ধাংশ ছিলেন বেতনভুক কর্মী। কর্মসংস্থান সঙ্কোচনের ধাক্কা সর্বাধিক লাগিয়াছে গ্রামীণ ক্ষেত্রে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিমারির প্রকোপে মৃতপ্রায়। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রবল হারে কমিয়াছে; স্বনিযুক্ত কর্মীরাও বেরোজগার হইয়াছেন। শহরাঞ্চলও বাঁচে নাই, সেখানেও বহু লোক কর্মহীন। এবং, ইহা শুধুমাত্র এপ্রিলের পরিসংখ্যান— মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দাঁড়াইয়া যে এপ্রিলের সংক্রমণকেও তুলনায় কম লাগিতেছে। মে মাসের কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান হাতে আসিতে আরও এক মাস অপেক্ষা করিতে হইবে, কিন্তু বাস্তব কোনও পরিসংখ্যানের ধার ধারে না। মানুষের দুর্দশা দৃশ্যমান। গত বৎসর অতিমারির অতর্কিত হামলায় ভারতীয় অর্থব্যবস্থা যতখানি বিপর্যস্ত হইয়াছিল, এক বৎসরের যাবতীয় অভিজ্ঞতা সমেত এই দফাতেও বিপর্যয়ের পরিমাণ তাহার তুলনায় কম নহে। ইহাকে ‘দুর্ভাগ্য’ বলিলে ভাগ্যের প্রতি অকারণ দোষারোপ করা হয়— ইহা দেশের ভাগ্যবিধাতাদের অপদার্থতা। তাঁহারা অতিমারির বৎসর হইতে কোনও শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই।
যে কোনও সমস্যার সমাধান করিতে হইলে প্রথম ধাপ: সমস্যাটি যে আছে, তাহা স্বীকার করিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার পারিষদরা এই সমস্যার কথাটি স্বীকার করিতেই নারাজ। স্বীকার করিলে মানিয়া লইতে হয় যে, তাঁহাদের অপদার্থতাতেই দুর্দশা এমন প্রবল। তাঁহাদের ব্যর্থতার দুইটি দিক। এক দিকে, দেশ-বিদেশের কার্যত সব বিশেষজ্ঞই যেখানে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের পরামর্শ দিয়াছিলেন, সেখানে গত বৎসর জুড়িয়া কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্কের ঋণকে সহজলভ্য করিবার চেষ্টা করিয়া গেল। সাধারণ মানুষকে ‘অকারণে’ টাকা দিতে হইবে, এই কথাটি তাঁহারা সম্ভবত হজম করিতে পারেন নাই। ফলে, বাজারে চাহিদা ফিরিল না। অর্থব্যবস্থায় চাহিদার অভাবটি কোভিডের পূর্ব হইতেই চলিতেছিল— তাহা অর্থব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করিয়া দিল। অন্য দিকে, ব্যবসা টালমাটাল হইলেই যেন কর্মীদের উপর কোপ না পড়ে, তাহা নিশ্চিত করিবার বিভিন্ন পন্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গৃহীত হইয়াছিল। সরকার কর্মীদের বেতনের সিংহভাগ বহন করিতেছিল, যাহাতে তাঁহাদের চাকুরি ছাঁটাই না হয়। সেই একই সময়কালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমবিধি সংস্কার করিয়াছিল— সেই নূতন শ্রমবিধিতে শ্রমিকের অধিকারের তিলমাত্রও অবশিষ্ট থাকে নাই।
একটি কথা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়া লওয়া জরুরি। ভারত বর্তমানে যতগুলি বিপন্নতার সম্মুখীন, তাহার কার্যত সব কয়টিরই মূলে রহিয়াছে একটিই কারণ— নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কী কর্তব্য, সে বিষয়ে দেশের বর্তমান শাসকদের কোনও ধারণাই নাই। তাঁহারা ক্ষুদ্র লাভ-ক্ষতির অঙ্কের বাহিরে দেখিতে অক্ষম। কিন্তু, তাঁহারাই যখন ক্ষমতায়, তখন তাঁহাদের কর্তব্যগুলির কথা স্মরণ না করাইলেও নহে। এই মুহূর্তে কর্তব্য মানুষের বোঝা লাঘব করা। যাঁহারা কাজ খোয়াইতেছেন, এই মুহূর্তে তাঁহাদের জন্য বেকার ভাতার ব্যবস্থা করিবার কথা ভাবা যাইতে পারে। জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনায় ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি; যাঁহারা সেই কায়িক শ্রমে অক্ষম, তাঁহাদের জন্য ভিন্নতর অর্থসাহায্যের কথাও ভাবিতে হইবে। কী করা যাইতে পারে, সেই সম্ভাবনা এখনও অসীম। কিন্তু তাহার জন্য শাসকদের নিজস্ব ক্ষুদ্রতার গণ্ডি ভাঙিয়া বাহিরে আসিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy