ভয়ঙ্কর গ্রীষ্মে দেশ জুড়ে এ বছর যখন বিদ্যুতের চাহিদা লাফিয়ে বাড়ছে, তখন অনেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার জোগান ছিল তলানিতে। সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০৬টিতেই কয়লার জোগানের অভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রবল সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশের অন্তত বারোটি রাজ্যে রোজ দুই থেকে দশ-বারো ঘণ্টা অবধিও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এই ঘাটতি আকস্মিক নয়। গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমার পরে দেশের শিল্পক্ষেত্রগুলি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, যার ফলে বাড়ে বিদ্যুতের চাহিদা। ২০১৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল মাসিক ১০,৬৬০ কোটি ইউনিট, সেখানে ২০২১-এ তা দাঁড়ায় ১২,৪০০ কোটি ইউনিটের বেশি। এ বছর তা দাঁড়িয়েছে মাসিক ১৩,২০০ কোটি ইউনিটে। দেশের বিদ্যুৎশক্তির চাহিদার ৭০ শতাংশই আসে কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে। গত অক্টোবরে যখন ভয়ঙ্কর কয়লার ঘাটতি দেখা দেয়, তখন কেন্দ্রীয় সরকার জানায় যে, সে বছর বর্ষার সময় গুজরাত, পঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ুর খনিজ অঞ্চলে প্রভূত বৃষ্টির ফলে উৎপাদন কম হয়েছিল। অনেক রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোল ইন্ডিয়ার কাছে কয়লা জোগানের বকেয়া টাকা মেটাতে না পারার ফলেও সরবরাহ ব্যাহত হয়। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বাড়ায়, কেন্দ্রীয় সরকার কয়লা আমদানি কমায়। ফলে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে দেশি খনিগুলির উপরে। এই সম্মিলিত সমস্যার কারণে এপ্রিলে বিদ্যুতের জোগান চাহিদার তুলনায় ১৮৮ কোটি ইউনিট কম হয়। গত ছ’বছরে এত খারাপ অবস্থায় পড়েনি ভারত।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি তাই আগামী বেশ কিছু দিনের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য ও উত্তর শাখার ৭৫৩টি যাত্রিবাহী ট্রেন বাতিল করে মালগাড়ির সাহায্যে সংশ্লিষ্ট তাপকেন্দ্রগুলিতে কয়লা পাঠানোর ব্যবস্থা করছে ভারতীয় রেল। আগামী দু’মাস আরও অনেক যাত্রিবাহী ট্রেন বাতিল করে কয়লাবাহী মালগাড়ির জন্য লাইন খালি রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকারের ভাবটা এমন, যেন যাত্রীদের যাতায়াতের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব নেই— ব্যক্তিগত ভাবেও না, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও না। নোট বাতিল বা লকডাউনের অভিজ্ঞতা থেকে দেশের সাধারণ মানুষ অবশ্য সরকারের কাছে তাঁদের দাম বিষয়ে সম্যক ধারণা পেয়েছেন। আরও দুঃখের কথা, এই সিদ্ধান্তে শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও লাভের পরিমাণ খুব বেশি নয়। এ শুধুই দেখনদারি— এই সরকার যে কাজে অভ্যস্ত ও দড়।
সমস্যাটির দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানোর পথ খুঁজতে হবে সরকারকে। দেশে ও বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির সম্পদ ক্রমশ কমছে। আগামী দিনে এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দেশের আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি করবে। অন্য দিকে, পরিবেশ রক্ষার্থে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাসের দিকেও নজর দিতে হবে ভারতকে। জোর দিতে হবে জল, সৌর, বায়ুপ্রবাহ, পারমাণবিক শক্তির উপরে। এই সব ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। জোর দিতে হবে পরিকাঠামোগত উন্নতির, যাতে এই সব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পথটি সুগম হয়। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। প্রতিশ্রুতি পূরণের দায় থেকে সরে আসা চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy