ফাইল চিত্র।
রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। অনিশ্চয়তা সম্ভাবনায় ইন্ধন দেয়। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সঙ্ঘ পরিবারের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংহতির প্রস্তুতি শুরু হইয়াছে তাহার গতিপ্রকৃতি নিশ্চিত নহে, কিন্তু তাহা সম্ভাবনাময়। গত মাসের দ্বিতীয়ার্ধে শরদ পওয়ারের বাসভবনে আটটি বিজেপি-বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পরে সেই সম্ভাবনায় নূতন মাত্রা সংযোজিত হয়। বৈঠকের উদ্যোগে অগ্রণী ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ রাজনীতিক যশবন্ত সিন্হা। ইহার তাৎপর্য সহজবোধ্য— বিজেপির প্রতিস্পর্ধী রাজনীতির মঞ্চ গড়িয়া তুলিবার ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা এখন বিশেষ ভাবে দৃশ্যমান। এই দৃশ্য আকাশ হইতে পড়ে নাই। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি-বিরোধী দলনেতাদের রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনের প্রস্তাব জানাইয়া চিঠি লিখিয়াছিলেন। তবে তাঁহার উদ্যোগে শক্তি জুগাইয়াছে নির্বাচনের ফলাফল। তাঁহার সহিত ‘সম্মুখসমর’-এ মোদী-শাহের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে চালিত বিজেপির পরাজয় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীকে সর্বভারতীয় বিরোধী রাজনীতির পরিসরে নূতন গুরুত্ব দিয়াছে।
কিন্তু, বিরোধী রাজনীতির মঞ্চ নির্মাণ সহজ কাজ নহে। উপরোক্ত বৈঠকে যে দলের অনুপস্থিতি সকলের নজর কাড়িয়াছে, তাহার নাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। বৈঠকের উদ্যোক্তারা এবং কংগ্রেসের মুখপাত্ররা, দুই পক্ষই বলিয়াছেন যে, এই অনুপস্থিতির গূঢ় কোনও অর্থ নাই, কংগ্রেস এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে। স্পষ্টতই, ইহা কথার কথা। স্পষ্টতই, প্রতিস্পর্ধার মঞ্চে কংগ্রেস থাকিবে কি না, কতটা থাকিবে, তাহা লইয়া টানাপড়েন চলিতেছে। টানাপড়েনের একটি বড় কারণ, এই মঞ্চে যাহারা শামিল হইয়াছে বা হইতে পারে, তাহাদের অনেকেরই উত্থান কংগ্রেসের বিভাজন হইতে অথবা কংগ্রেস-বিরোধিতার রাজনীতি হইতে, ফলে তাহারা অনেকেই মুখে কংগ্রেসকে ডাকিলেও মনে মনে তাহাকে দূরে রাখিতে চাহে। ইহা পুরাতন সমস্যা। কিন্তু এই মানসিকতার বোঝা নামাইতে না পারিলে বিরোধী মঞ্চের গোড়ায় গলদ থাকিয়া যাইবে। কংগ্রেস উত্তরোত্তর দুর্বল হইয়াছে ঠিকই, কিন্তু এখনও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে বাহিরে রাখিয়া বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ তৈরি কঠিন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় ফলাফলের মধ্যেও কংগ্রেস ২০ শতাংশ ভোট পাইয়াছে, অঙ্কটিকে তুচ্ছ করিবার উপায় নাই। তেজস্বী যাদবের মতো নেতারাও বলিয়াছেন যে, পাটিগণিতের অঙ্ক ছাড়াইয়া কংগ্রেসের প্রকৃত গুরুত্ব হইল— বিরোধী শিবিরে ‘জাতীয়’ উপস্থিতি এবং ভাবমূর্তি একমাত্র কংগ্রেসেরই আছে। তাহাকে বাদ দিয়া ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’-এর কোনও অবতারের পক্ষেই জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্য প্রতিস্পর্ধী হওয়া কঠিন।
কংগ্রেসকেও আত্মসংশোধন করিতে হইবে। তাহার মূল শর্ত দুইটি। এক, এই দলের নেতৃত্ব লইয়া যে অনন্ত কুনাট্য চলিতেছে, অবিলম্বে তাহার মীমাংসা জরুরি। বিষয়টি বহুচর্চিত, সুতরাং অধিক বাক্যব্যয় নিষ্প্রয়োজন। দুই, কংগ্রেস যদি এখনও নিজেকে বিরোধী শিবিরের ‘স্বাভাবিক’ নেতা মনে করে, তবে ভুল করিবে। বিরোধী মঞ্চের সংহতির জন্য তাহার সর্বভারতীয় পরিচিতিটি আবশ্যক ঠিকই, কিন্তু সেই সংহতির নেতৃত্ব দিবার অধিকার এই দল হারাইয়াছে। অনেক দলের অন্যতম হইয়াই তাহাকে আপনার নূতন ভূমিকা খুঁজিতে হইবে। সেই ভূমিকা নেতৃত্বের নহে, যোগসূত্রের। বস্তুত, সত্যই বিরোধী শিবিরের যোগসূত্র হইয়া উঠিতে পারিলে ভবিষ্যতে হয়তো অনেকের মধ্যে প্রথম হইবার সুযোগও এই দলের হস্তগত হইতে পারে। কিন্তু তাহা ভবিষ্যতের কথা। আপাতত বিরোধী ঐক্যের উদ্যোগপর্ব। বিজেপি-শাসিত ভারতের বিপন্ন গণতন্ত্র সেই ঐক্যের মুখ চাহিয়া আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy