প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রস্তাব দিয়াছে, সরকারি চিকিৎসকেরা তিন বৎসর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কাজ করিলে সরকারি ব্যয়ে স্নাতকোত্তর পড়িতে পারিবেন। তাহাতে চিকিৎসক সংগঠনের এক কর্তা বলিয়াছেন, এমন শর্ত করিলে ক্ষতি হইতে পারে। গ্রামে কাজ করিবার প্রসঙ্গ উঠিলেই চিকিৎসক সংগঠনগুলি নানা যুক্তি দেখাইয়া থাকে, যাহার নির্যাস— গ্রামে পাঠাইলে চিকিৎসকদের প্রতি অবিচার হয়। এই অনাগ্রহ নূতন নহে। প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালগুলিতে নিযুক্ত চিকিৎসকরা শহরে আসিবার দরখাস্ত করিতে থাকেন। অনেকে সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি কর্মক্ষেত্রে থাকেন না। অথচ, গ্রামে চিকিৎসকের অভাব তীব্র। তাই প্রশ্ন উঠিবে, পাঁচ বৎসর মেডিক্যাল কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করিয়া তিন বৎসর প্রত্যন্ত গ্রামের হাসপাতালে কাজ করিলে কাহার ক্ষতি হইবে? কেনই বা হইবে? গ্রামের হাসপাতালে কাজ করিবার অভিজ্ঞতা কি তরুণ চিকিৎসকদের সমৃদ্ধ করিবে না? সর্বোপরি, তিন বৎসর গ্রামীণ ক্ষেত্রের পরিবর্তে সরকারি ব্যয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষার সুযোগ হেলাফেলার নহে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি তাহার জন্য বহু লক্ষ, এমনকি কোটি টাকা দাবি করিয়া থাকে। অতএব প্রশ্নটি এখানে ব্যক্তির স্বাধিকার বা স্বাতন্ত্র্যের নহে, বিনিময়ের। যাঁহারা তিন বৎসর গ্রামে চিকিৎসার শর্ত স্বীকার করিতে অনাগ্রহী, তাঁহারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ না করিলেই হইল। সরকারি অর্থ কাজে লাগাইতে চাহিলে সরকারের কাজে লাগিতে হইবে।
তরুণ ডাক্তাররা তিন বৎসর একাদিক্রমে গ্রামে থাকিলে গ্রামবাসীর ক্ষতি হইবে না, বরং কিছু লাভই হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে। ভারতে ব্লক স্তরের হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব তীব্র, বহু সময়ে ওই সকল হাসপাতালের পরিষেবা চালু রাখিতে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিযুক্ত চিকিৎসকদের কাজে লাগাইয়া থাকেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। ফলে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আরও ফাঁকা পড়িয়া থাকে। জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের প্রস্তাব করিবার সময়ে কেন্দ্র জানাইয়াছিল, গ্রামীণ ভারতের অধিকাংশ মানুষ ডিগ্রিহীন, স্বল্পশিক্ষিত ‘চিকিৎসক’-দের শরণাপন্ন হইতে বাধ্য হইতেছেন। অ-চিকিৎসা, অপচিকিৎসাই যেন গ্রামীণ নাগরিকের ভবিতব্য।
গ্রামে সুচিকিৎসার অভাব ও তজ্জনিত বিপন্নতার প্রতিকারে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি নানা সময়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। সেগুলি প্রধানত দুইটি গোত্রের। প্রথমত সরকার গ্রামীণ চিকিৎসক অথবা বিকল্প ধারার চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়া গ্রামীণ চিকিৎসায় নিয়োগ করিতে চাহিয়াছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি ইহাকে অবৈজ্ঞানিক এবং অনৈতিক বলিয়া দাবি করিয়াছে— প্রকৃত চিকিৎসকদের আকর্ষণ করিতে গ্রামীণ চিকিৎসাকে আরও উন্নত করিয়া তুলিবার পরামর্শ দিয়াছে। দ্বিতীয় উপায়, সরকারি চিকিৎসকদের উপর বিবিধ সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়া গ্রামে নিযুক্ত করা। চিকিৎসকরা স্বেচ্ছায় ব্লক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কিছু দিন কাজ করিতে চাহিবেন, এমন হইলেই সুপ্রযুক্ত হইত। কিন্তু তাহার সম্ভাবনা সামান্য, অতএব যথাযোগ্য সুযোগের পরিবর্তে গ্রামীণ চিকিৎসায় তরুণ ডাক্তারদের নিয়োগের চেষ্টা হইতেছে। ইহা অনৈতিক নহে। লাভ-ক্ষতির বিচারে জনস্বার্থকে বাদ রাখিবার উপায় নাই, উচিতও নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy