Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Abortion Law

অন্ধকারের উদয়

১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক রো বনাম ওয়েড মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নয় জন বিচারপতির দু’জন মতপ্রকাশ করেছিলেন গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে।

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২ ০৪:১৯
Share: Save:

আমেরিকান স্বপ্নের যুগ অতীত হয়েছে, এখন আমেরিকান দুঃস্বপ্নের কাল। নানা ধরনের দুঃস্বপ্নের কাহিনি রচিত হয়েই চলেছে সেই দেশটিতে। যেমন সম্প্রতি রচিত হল সর্বোচ্চ আদালতের মহিমায়। সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে। যে হেতু দেশটি যুক্তরাষ্ট্র, এবং আইনের ভিত্তিটিও যুক্তরাষ্ট্রীয়, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আমেরিকার এক-একটি রাজ্যের হাতে। কিন্তু রাজনৈতিক স্রোত অনুযায়ী যে যে প্রদেশ নারীর গর্ভপাতের অধিকার তুলে দেওয়ার পক্ষে, তারা এ বার অনায়াসেই তা করতে পারবে। অর্ধ শতাব্দী আগে আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালত যে আলো জ্বালিয়েছিল, এই নতুন রায়টিতে তাকে নিবিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হল, উদয় হল নতুন অন্ধকারের। ১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক রো বনাম ওয়েড মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নয় জন বিচারপতির দু’জন মতপ্রকাশ করেছিলেন গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে। যে সাত জন তাঁদের রায়ে গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের প্রধান যুক্তিই ছিল, এমন কোনও আইন মানাই যায় না, কারণ তা নারীর মৌলিক অধিকার খর্ব করে, গণতন্ত্রে যে মৌলিক অধিকারই সবার আগে বিবেচ্য। আতঙ্কিত হয়ে গোটা গণতান্ত্রিক পৃথিবী এ বার দেখল, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট তার সাম্প্রতিক রায়ে বলেছে, রো বনাম ওয়েড মামলায় ভুল বিবেচনা কাজ করেছিল, কেননা ভ্রূণ হত্যা করা পাপ ধর্মের কারণেই। তা হলে এখন ধর্ম দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার বিচার করা হবে আমেরিকায়?

বস্তুত, আদালতের রায়ে যে ভাষা ও যুক্তি গর্ভপাত বিরোধিতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, পড়লে বিস্ময় জাগে— আমেরিকা কি তবে তালিবানি মৌলবাদের পথেই হাঁটতে বদ্ধপরিকর? একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে এসে, যখন ইতিমধ্যেই নারী-স্বাধীনতা ও নারী-সক্ষমতার একটি বিশেষ উপাদান যে নারীর নিজের গর্ভের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার— তা কেবল স্বীকৃত নয়, স্বাভাবিক বলে গণ্য হতে শুরু করেছে বিশ্বের বহু দেশে। সেই সব তুলনায় ‘পিছিয়ে থাকা’ দেশের পাশে আজ আমেরিকার মতো বিশ্বশক্তি— পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র, স্বঘোষিত ভাবে দুনিয়ার অভিভাবক রাষ্ট্র— নারী-অধিকারের অন্যতম মৌলিক শর্তটিকে বানচাল করে দিল! ব্যক্তি-অধিকার তথা নারী-স্বাধীনতার সাধারণ যুক্তি ছাড়াও অর্থনীতির যুক্তিতেই আলাদা করে বিষয়টিকে দেখা উচিত। তার কারণ, এই রায়ের পরিণামে বেশি সঙ্কটে পড়বেন দরিদ্র মেয়েরা। জীবনধারণের তাগিদে তাঁদের কাজ করতে হয়, ঘরে বা বাইরে। গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিলে তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত ভাবেই আমেরিকা পিছিয়ে গেল পঞ্চাশ বছর।

অন্ধকারের পথে এই যাত্রা অবশ্য শুরু হয়েছে আগেই। অর্ধ শতাব্দী আগেকার যুগান্তকারী রায় উল্টে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে নারীর গর্ভপাতের অধিকার হরণ করা হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এবং তার পিছনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রাজনৈতিক শিবিরের ছায়াটিও ঘনঘোর। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট আদালতের মানসিকতায় প্রভাব বিস্তার করছেন— এই অভিজ্ঞতা আমেরিকায় নতুন নয়, কিন্তু ট্রাম্পের আমলে সেই প্রক্রিয়া এক অভূতপূর্ব মাত্রা পেয়েছে, যার ফলে সুপ্রিম কোর্টে ‘ট্রাম্পিজ়ম’-এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বেশ কিছুকাল আগে থেকেই। ক্রমশ সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হচ্ছে, গর্ভপাত সংক্রান্ত রায়টি তারই একটি গুরুতর নজির। নগর পুড়লে দেবালয় বাঁচে না, রাজনীতি এবং সমাজ কলুষিত হলে বিচারালয় বাঁচে কী করে? প্রশ্নটি কেবল আমেরিকায় নয়, সর্বত্র প্রাসঙ্গিক। ভারতও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Abortion Law america
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy