Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
East Kolkata

উন্নয়নের স্বার্থে

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উঠে এল, কলকাতায় প্রতি দিন উৎপাদিত দৈনিক তরল বর্জ্যের পরিমাণ ১৪০ কোটি লিটার।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

কলকাতার দূষিত জল শোধনের দায়িত্বটি স্বেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে নীরবে বছরের পর বছর ধরে করে চলেছে আন্তর্জাতিক ‘রামসার তালিকাভুক্ত’ পূর্ব কলকাতার জলাভূমি অঞ্চল। সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উঠে এল, কলকাতায় প্রতি দিন উৎপাদিত দৈনিক তরল বর্জ্যের পরিমাণ ১৪০ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৯১ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের কাজটি প্রাকৃতিক ভাবে করে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। এই পরিমাণটি কলকাতা পুরসভার পাঁচটি তরল বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্রের সম্মিলিত ক্ষমতার পাঁচ গুণেরও বেশি। সুতরাং, এই জলাভূমি অঞ্চলকে রক্ষার দায়িত্ব আগামী প্রজন্মকেও নিতে হবে, এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে রাজ্য পরিবেশ দফতরের পক্ষ থেকে।

আগামী প্রজন্ম দায়িত্ব নেবে, যথার্থ কথা। কিন্তু, বর্তমান প্রশাসন কি নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে? ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ বাম আমলে এই জলাভূমিকে বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিবেশকর্মীদের একাংশের আইনি লড়াইয়ের জেরে তা রক্ষা পায়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, অনুমতি ছাড়া ওই জলাভূমি অঞ্চলে কোনও রকম নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কাজ করা চলবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাই কোর্টের রায় এবং জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এই জলাভূমির একাংশ ক্রমশ প্রোমোটারদের দখলে চলে যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন তা জানে না, বললে সত্যের অপলাপ হবে। ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জলাভূমি ভরাট, জমির চরিত্র পরিবর্তন সংক্রান্ত ৩৫৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তি হয়েছে কত জনের? ‘জনস্বার্থে জলাভূমিকে ব্যবহার’-এর প্রবণতা থেকে এই রাজ্য সরকারও মুক্ত নয়। ফলে, উন্নয়নের অজুহাতে ওই এলাকা আসলে সেই প্রোমোটারদের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। শুধুমাত্র তা-ই নয়, জলাভূমি সংরক্ষণে অর্থ বরাদ্দ নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চাপানউতোর দেখা গিয়েছে।

পূর্ব কলকাতার জলাভূমি ভরাট হতে থাকলে শহরের নিকাশিব্যবস্থাও ভেঙে পড়বে। পরিবেশ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বুজে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারে খরচ হবে প্রায় দু’কোটি টাকা। যদি এই অর্থ ব্যয় করে সেখানকার বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিশোধনের ব্যবস্থাটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়, তবে এই খরচ যথার্থ। তা ছাড়া তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য একটি সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৩০০-৪০০ কোটি টাকা। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বছরে আরও ২০০-৩০০ কোটি টাকা। সুতরাং, কৃত্রিম ভাবে গোটা শহরের তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হত, সেই পরিমাণ টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয় এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থায়। জলাজমি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এই কথাটিও মাথায় রাখা প্রয়োজন বইকি। অপর দিকে, সরকার যদি নিজ উদ্যোগে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে উদ্যত হয়, তবে এই বার্তা যাবে যে, সরকার জলাভূমি রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এতে ভবিষ্যতে জলাভূমি বোজানোর প্রবণতায় লাগাম পরানো সম্ভব। জলাভূমি রক্ষা পেলে পরিবেশ বাঁচবে, শহরও। ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ এই কথাটি ভুললে চলবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

East Kolkata Wetlands
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy