বিদেশি শিক্ষকেরা ভারতে পড়াতে আসবেন তাঁদের যোগ্যতা মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই হবে। প্রতীকী ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করল— কমিশনের সম্মতিক্রমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে তাদের ক্যাম্পাস স্থাপনা ও পঠনপাঠন শুরু করতে পারবে। ভারতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধতর করার, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের দেশের মাটিতেই বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছিল আগেই, এ বার তারই শুরু। নির্দেশিকায় সম্ভাব্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে: যে প্রতিষ্ঠান ভারতে ক্যাম্পাস খুলতে চায় তাকে সামগ্রিক বা বিষয়ভিত্তিক বিচারে গ্লোবাল র্যাঙ্কিং-এ পাঁচশোর মধ্যে থাকতে হবে। গোড়ায় অনুমতি দেওয়া হবে দশ বছরের, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের মতো ছাত্র-ভর্তির প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে পারবে, ফি-কাঠামোও— কেবল প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও খরচ যুক্তিসঙ্গত হলেই হল। আরও নানা নিয়মের কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়, তবে মোটের উপর বার্তাটি সদর্থক— একুশ শতকে ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি প্রসারিত ও ঋদ্ধ করাই উদ্দেশ্য।
কিন্তু প্রশ্নও অনেক। শিক্ষাবিদ মহলেই কথা উঠেছে, এ স্রেফ ভারতের মাটিতে ‘আইভি লিগ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশকুসুম ফেরি করা নয় তো? বাস্তবে কি এ-সব ঘটবে? আমেরিকা-ইউরোপের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বড় মুখ করে ডাকা, এমনকি জায়গাজমি ও পরিকাঠামোর সুবিধা করে দেওয়াই যথেষ্ট নয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে বিদেশি শিক্ষকেরা ভারতে পড়াতে আসবেন তাঁদের যোগ্যতা মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই হবে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রতাপভানু মেহতা সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, বিদেশের প্রথম সারির অধ্যাপকদের ভারতে আসার আর্থিক বা শিক্ষাগত প্রেরণা কোনওটিই খুব জোরদার হবে না, কারণ বেতন ও জীবনযাপনের বিস্তর ফারাক। আরও বড় কথা, বিদেশি যে কোনও ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকরা শুধুই পড়ান না, সঙ্গে নিজেরাও গবেষণা করেন। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে উন্নত গবেষণাকাজের কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু ভারতের মাটিতে সেই মানের গবেষণা-পরিকাঠামো তো দূরস্থান, তার মানসিকতাও খুব আশাপ্রদ নয়। উপরন্তু বিজেপি আমলে উচ্চশিক্ষায় বিশেষত বিজ্ঞানে ক্রমশ ব্যয়-বরাদ্দ কমছে, ইতিহাস-সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম থেকে মুছে যাচ্ছে জাতি-বর্ণ-শ্রেণি’সহ শাসকের অপ্রিয় বহু প্রসঙ্গ; ইউজিসি-র নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছে— বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে এমন কিছু নিয়ে চর্চা করতে পারবে না, যা ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী। এই আবহে কি বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি প্রকৃত উচ্চশিক্ষা দিতে পারবে?
এই সব প্রশ্ন এড়িয়ে ভারতে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দিলে তা খুব সুখের হবে না। বিদেশি নাম ও ডিগ্রিতে আকৃষ্ট হয়ে, বিস্তর অর্থ ব্যয় করেও হয়তো অনেক ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ভিড় জমাবেন, কিন্তু তারও বাইরে থেকে যাবেন বিপুল সংখ্যক ছাত্র, যাঁদের সেই সঙ্গতি নেই। সমাজের অনগ্রসর পড়ুয়াদের স্বপ্নপূরণে ভারতে কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বৃত্তি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সমধর্মী ব্যবস্থা আদৌ থাকবে কি না এখনও অজানা। যে দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি এই মুহূর্তেই নানা অসঙ্গতিতে দগদগে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদর্প আবির্ভাব সেই ক্ষতে না নুনের ছিটে হয়ে দেখা দেয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy