প্রতীকী ছবি।
পুরাতন রোগ ফের প্রকট হইল— রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ছায়া পড়িল স্বাস্থ্য প্রকল্পে। আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথি, যোগ প্রভৃতি বিকল্প ধারার চিকিৎসার জন্য প্রদত্ত কেন্দ্রের অনুদানের একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থাকিয়া অবশেষে ফেরত গিয়াছে কেন্দ্রে। সংবাদে প্রকাশ, ২০১৪-২০ সালের মধ্যে কেন্দ্র যে ৯৮ কোটি টাকা পাঠাইয়াছিল বিকল্প চিকিৎসা খাতে খরচ করিবার জন্য, তাহার মধ্যে ৪৮ কোটি টাকা খরচ হয় নাই, ফলে ইতিমধ্যে ৯ কোটি টাকা ফেরত গিয়াছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। রাজ্যের চিকিৎসাব্যবস্থা যখন অর্থের অভাবে বিপন্ন, সেই সময়ে তাহার সদ্ব্যবহার না করিবার এই নিদর্শন বিস্মিত এবং আহত করে। ইহার কী কারণ থাকিতে পারে? একটি সম্ভাব্য কারণ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির প্রতি রাজ্য সরকারের অনীহা। এগুলির চর্চা ও প্রসার সম্পর্কে রাজ্য সরকার কখনওই বিশেষ উৎসাহ দেখায় নাই। এই সকল চিকিৎসা রীতির প্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্ট সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা পায় নাই। বহু ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অবহেলায় বিপন্ন হইয়াছে। আয়ুর্বেদ বা হোমিয়োপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ হইতে গ্রামস্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডিসপেনসারি, সকলই টাকার অভাবে দৈন্য দশায় পতিত হইয়াছে। ইহা সত্য যে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সমাজে সনাতন চিকিৎসারীতির প্রতিপত্তি কমিয়াছে। কিন্তু ভারতে আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, যোগ, ইউনানি এবং হোমিয়োপ্যাথির গ্রাহক কম নহে। সরকারি তরফেও এগুলির প্রয়োজন যথেষ্ট— বিশেষত গ্রামীণ চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে যথেষ্ট এমবিবিএস চিকিৎসক পাওয়া কঠিন হইয়াছে বলিয়া বিকল্প ধারার চিকিৎসক নিযুক্ত করিতে হয়। সর্বোপরি, চিকিৎসার এই ধারাগুলির জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হইয়াছে। তাহার যথাযথ ব্যয় করিবার দায় রাজ্য সরকার অস্বীকার করিতে পারে না। এক দিকে বরাদ্দ ফিরিয়া যাইতেছে, অপর দিকে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে।
তবে অসুখটি গভীরতর। সংঘাত কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের একাধিক ধারার সহিত নহে, সংঘাত দলীয় রাজনীতির। ইহা সত্য যে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে আয়ুর্বেদের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্ব পাইতেছে, আয়ুর্বেদ-সহ প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানকে গৌরবান্বিত করিবার ঝোঁকও দেখা যাইতেছে। শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতা থাকিবে, তাহাই স্বাভাবিক, তাহার আবশ্যকতাও রহিয়াছে। কিন্তু তাহা প্রকাশের উপায় জ্ঞানচর্চার প্রতি অবহেলা নহে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের সর্বত্র চিকিৎসা পরিকাঠামো এতই দুর্বল, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব এতই বেশি, ঔষধ প্রভৃতি সহায়তা এতই কম যে, বরাদ্দ অর্থ সম্পূর্ণ খরচ করিলেও চাহিদা মিটিবে না। একেই ভারত তাহার মোট জাতীয় আয়ের অতি সামান্য অংশ স্বাস্থ্যের জন্য খরচ করিয়া থাকে, চলতি অর্থবর্ষে তাহা দুই শতাংশও ছুঁইতে পারে নাই। সেই সামান্য বরাদ্দও যদি কাজে না লাগিতে পারে, তাহা স্বাস্থ্যব্যবস্থার রক্তহীনতাকে আরও দীর্ঘমেয়াদি করিয়া তোলে।
বিভিন্ন চিকিৎসারীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকিবে, ইহাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা বিকল্প রীতি নহে, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবে ডিগ্রিহীন গ্রামীণ চিকিৎসকদের হাতে রোগীর ভাগ্য ছাড়িয়া দিবার বাধ্যতা। স্বাস্থ্য রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়, অতএব কোন চিকিৎসাধারা প্রাধান্য পাইবে, তাহা নিশ্চিত করিবার অধিকার রাজ্যের রহিয়াছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংঘাতের জন্য প্রশাসনিক সমন্বয়ে অনিচ্ছা বার বার দেখা গিয়াছে। তাহার পরিণামে বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করিয়াছে রাজ্য, অথবা অতি অবহেলার সহিত চালাইয়াছে। কেন্দ্রের প্রকল্পে অংশগ্রহণ, বরাদ্দ খরচে অনুৎসাহ রাজ্য সরকারের এমন অনিচ্ছার অন্যতম প্রকাশ। ইহাতে শেষ পর্যন্ত নাগরিকের ক্ষতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy